পর্যটকদের জন্যে খুলে দেওয়া হল মতিঝিল পার্ক। পার্কে ঢোকার টিকিটের দাম ২০ টাকা।— নিজস্ব চিত্র।
আধুনিক সাজে সজ্জিত মতিঝিল সোমবার থেকে পর্যটকদের জন্যে খুলে দেওয়া হল। সম্প্রতি সেজে উঠেছে হাজারদুয়ারি ও মিউজিয়াম লাগোয়া যুব আবাস। মুর্শিদাবাদের চেম্বার অব কমার্সের কর্তাদের আশা, এই তিনের টানে মুর্শিদাবাদের পর্যটন শিল্পে জোয়ার আসবে।
গত ১ জুলাই মতিঝিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যটকদের বিনোদনের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়েছে ওই ঝিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী এর নামকরণ করেন, ‘প্রকৃতিতীর্থ’। কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ অশ্বখুরাকৃতি জলাশয়, ৮ বিঘার গোলাপবাগান, ৪ বিঘা জমি জুড়ে শিশু উদ্যান, আমবাগান, হরেক রকমের ফুলবাগান আর কয়েক’শো আলোকমালায় সজ্জিত ১৩৫ বিঘার ওই বিনোদন ক্ষেত্রই প্রকৃতিতীর্থ।
রাতে বিনোদনের ব্যবস্থা নেই, থাকার ভাল হোটেল নেই— এ জাতীয় আরও অনেক ‘নেই’-এর কারণে মুর্শিদাবাদ, অর্থাৎ লালবাগের পর্যটন শিল্পের রুগ্ণ চেহারা দীর্ঘ দিনের। প্রকৃতিতীর্থের হাত ধরে সেই অভাব অনেকটা পূরণ হবে বলে ঐতিহাসিক শহরের বহু বিশিষ্টজনের মত। নবাব অলিবর্দির কন্যা তথা সুবে বাংলার মসনদের দাবিদার হিসাবে নবাব সিরাজের মাসি ঘসেটি বেগমের রাজপ্রাসাদ ‘শাহি দালান’ ছিল মতিঝিলের পাড়ে। মতিঝিলকে পর্যটন শিল্পের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে আন্দোলন করছে ‘মুর্শিদাবাদ নগর উন্নয়ন কমিটি’। সংগঠনের সম্পাদক আব্দুর রউফ খান বলেন, ‘‘এ দিন মুর্শিদাবাদের মুকুটে সোনার পালক পড়ল। এত দিনের অনাদরের মুর্শিদাবাদ আজ জাতে উঠল।’’
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্মাকর রাও জানালেন, মতিঝিলে অনুষ্ঠান করার জন্য রয়েছে মুক্ত মঞ্চ, ৬৫ ফুট উঁচু মিউজিক্যাল ফাউন্টেন বা সঙ্গীতের তালে নৃত্যরত ফোয়ারা, বিলাসবহুল ৩টি কটেজে ৯টি স্যুইট। রয়েছে পার্কিং প্লাজা ও ফুডকোর্ট। ফুডকোর্টের উপরে রয়েছে ৩০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। রয়েছে শিশুদের খেলার বিভিন্ন উপকরণ। ৭০০ আলোর মালায় আর অজস্র গাছে সেজেছে মতিছিল। মতিঝিলের শাহি দালানে নবাব সিরাজকে সিংহাসন চ্যূত করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। জেলাশাসক বলেন, ‘‘গোপন ষড়যন্ত্রের সেই ঐতিহাসিক দৃশ্য তুলে ধরতে ঘসেটি বেগম, মিরজাফর, জগৎশেঠ, লর্ড ক্লাইভ ও উইলিয়াম ওয়াটসের মূর্তি বসানো হয়েছে। মধ্যমণি ঘসেটি বেগমের মূর্তি বসানো হয়েছে গোপন বৈঠকের মাঝখানে।’’
প্রকৃতিতীর্থের অন্যত্র রয়েছে মুর্শিকুলি খাঁ, আলিবর্দি, সিরাজ ও ওয়ারেন হেস্টিং-এর মূর্তি। রেলিং দিয়ে ঘেরা অশ্বখুরাকৃতি ঝিলের বাঁধানো পাড় বরাবর রয়েছে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সুদৃশ্য পথ। সেই পথে হাঁটার পাশাপাশি পর্যটকের গাড়িও চলবে। মতিঝিলের আধুনিকিকরণের প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। মতিঝিল পার্কে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। ৩ বছরের নিচের শিশুদের টিকিট লাগবে না। কটেজের ভাড়া এখনও নির্ধারিত হয়নি।
মতিঝিলের পাশাপাশি সেজে উঠছে হাজারদুয়ারি ও মিউজিয়াম লাগোয়া যুব আবাস। পুরনো যুব আবাসের পিছনেই গড়ে উঠেছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত নতুন যুব আবাস। মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘পর্যটক সহায়তা কেন্দ্র’-এর সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘এত দিনে ঐতিহাসিক শহরের শাপমোচন হল। বিনোদনের উপকরণের অভাবে ও রাত কাটানোর ভাল হোটেল না থাকায় পর্যটকরা দিনের বেলায় ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখে সন্ধ্যায় শহর ছেড়ে চলে যেতেন। তাতে পর্যটন শিল্পের লাভ হত না।’’ মতিঝিল পার্ক ও নতুন যুব আবাসের সুবাদে এ বার শহরের পর্যটন শিল্পে জোয়ার আসবে বলে তাঁর আশা।