বিরোধী ভূমিকায় থাকাকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করতেন, সরকারে আসার পরে সে সবই তাঁদের দিকে ফিরে এসেছে বারবার! সেই তালিকায় আরও সংযোজন হতে চলেছে রাজ্যের পুর আইনে সর্বশেষ সংশোধনী! বিধানসভায় বিল এনে পুরসভায় প্রশাসক রাখার মেয়াদ ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার।
পুরসভার বোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালানোর সংস্থান পুর আইনে আছে। প্রথম দফার পাঁচ বছরে এই আইনের সুযোগ বারবার নিয়েছে মমতার সরকার। পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হলে প্রশাসক বসানো হয়েছে, তার পরে তাঁর বা প্রশাসক বোর্ডের মেয়াদ ফের বাড়ানো হয়েছে। কলকাতার সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় একাধিক পুরসভায় ইতিমধ্যে এমন ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছে, তৃণমূল সরকারের আসলে নির্বাচনে যেতে অনীহা। এই ‘অগণতান্ত্রিক’ মনোভাব থেকেই তারা প্রশাসক নিয়োগ করে এক দিকে ভোট পিছোতে চেয়েছে এবং অন্য দিকে ‘নিজেদের লোকে’র হাতে পুরসভার নিয়ন্ত্রণ রাখতে চেয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে প্রত্যাবর্তনের পরে বিরোধীদের সেই অভিযোগকে মমতা প্রশাসন যে আমল দিতেই রাজি নয়, তার ইঙ্গিত মিলছে পুর আইন সংশোধনী বিলে!
বিধানসভায় আজ, শুক্রবার পেশ হওয়ার কথা ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৬’। যেখানে পুর আইনের ১৪ নম্বর ধারার ৩ নম্বর উপধারা সংশোধন করে বলা হচ্ছে, প্রশাসক বা প্রশাসক বোর্ডের মেয়াদ অনধিক ৬ মাসের বদলে অনধিক ১২ মাস পর্যন্ত বাড়ানো
যাবে। বিলে বলা হয়েছে, খুব জরুরি প্রয়োজনে নতুন তৈরি হওয়া পুর-এলাকার জন্য প্রশাসক বা প্রশাসক বোর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষমতা রাজ্যের হাতে দেওয়ার জন্যই ১৯৯৩-এর পুর আইনে এই সংশোধনী প্রয়োজন।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুজালি ও মুর্শিদাবাদের ডোমকল পুরসভায় ভোট আসন্ন। এর মধ্যে ডোমকল নতুন পুরসভা। বিরোধীদের অভিযোগ, পুরনো অভ্যাস বজায় রেখে পুরসভাগুলিতে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার জন্যই রাজ্য এ বার আইনি পথে যাচ্ছে। প্রশাসকের মেয়াদ এক বারেই ১২ মাস বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা হাতে নিচ্ছে। রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত যেমন দাবি করেই রেখেছেন, রায়গঞ্জ পুরসভায় সময়েই ভোট করতে হবে। পিছনো চলবে না।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ মানতে নারাজ। মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘ভোটটা আমরা আস্তে আস্তে শীতের দিকে নিয়ে যেতে চাই। গরমে ভোট করা কষ্টদায়ক।’’ যা শুনে বিরোধীরা আবার বলছে, গরমের অজুহাত দিয়েই গত বার পঞ্চায়েত ভোট পিছোতে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। প্রশাসক দিয়ে পুরবোর্ড হাতে রাখার আইনি পথই এ বার আরও প্রশস্ত করে ফেলছে রাজ্য সরকার।