মুকুল-হীন বৈঠকে বেনো জল রোধে বার্তা যুবরাজের

দলের মধ্যে বেনো জল বরদাস্ত করা হবে না বলে কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যুব তৃণমূলের সভাপতি হওয়ার পরে বৃহস্পতিবারই সংগঠনের প্রথম বৈঠক ছিল অভিষেকের। বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অনুপস্থিত মুকুল রায় এবং তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু রায়। দলীয় সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে যুবরাজ সরাসরি বলেছেন, দলে প্রচুর বেনো জল ঢুকেছে। এ বার তা আটকাতে হবে। হঠাৎ করে কেউ দলে ঢুকে পড়ল, এটা আর চলবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

দলের মধ্যে বেনো জল বরদাস্ত করা হবে না বলে কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

যুব তৃণমূলের সভাপতি হওয়ার পরে বৃহস্পতিবারই সংগঠনের প্রথম বৈঠক ছিল অভিষেকের। বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অনুপস্থিত মুকুল রায় এবং তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু রায়। দলীয় সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে যুবরাজ সরাসরি বলেছেন, দলে প্রচুর বেনো জল ঢুকেছে। এ বার তা আটকাতে হবে। হঠাৎ করে কেউ দলে ঢুকে পড়ল, এটা আর চলবে না।

দলে ‘অ-মুকুলায়ন’ প্রক্রিয়া চালু করে তৃণমূল নেত্রী তাঁর ভাইপো অভিষেকের হাতে সংগঠনের রাশ তুলে দিতে শুরু করার পরেই বীরভূমের সুদীপ ঘোষ বা ভাঙড়ে আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের ব্যাখ্যা, এ দিনও বেনো জল ঢুকেছে বলে ‘যুবরাজে’র বার্তা আসলে মুকুল-শিবিরকে লক্ষ্য করেই। কারণ, মুকুলের হাত ধরেই বিভিন্ন দল থেকে নেতা-কর্মী নির্বিচারে ঢুকেছে তৃণমূলে। মুকুল-বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, বর্তমানে দিকে দিকে অস্থিরতা তৈরির পিছনে প্রধানত রয়েছে অন্য দল থেকে আগতেরা। এই অংশের মতে, ‘দলবদলু’দের আগমনেই তৃণমূলে অশান্তি তৈরি হচ্ছে এবং মুকুল-শুভ্রাংশুর অনুপস্থিতিতে এর বিরুদ্ধেই বার্তা দিতে চেয়েছেন অভিষেক।

Advertisement

যুবরাজ কড়া বার্তা দিলেও প্রশ্ন থাকছে, তা হলে অনুব্রত মণ্ডল, মনিরুল ইসলাম, তাপস পাল, অসীমা পাত্রের মতো অন্য আরাবুলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। তবে বৈঠকের পরে অভিষেক বলেছেন, “দলের কেউ গুন্ডামি বা অনৈতিক কাজ করলে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনাচক্রে, এ দিনই সন্ধ্যায় ব্যারাকপুরের ধোবিঘাট থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তৃণমূল নেতা মণীশ শুক্লকে। মাসকয়েক আগে খড়দহে খুন হন সন্তোষ নায়েক। সেই ঘটনায় ও নৈহাটিতে জাল টাকা চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ মণীশকে খুঁজছিল। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, “১০ হাজার জাল টাকা-সহ মণীশকে ধরা হয়েছে।”

তৃণমূলের এক সূত্রের ব্যাখ্যায়, দলে ‘শুদ্ধকরণে’র প্রক্রিয়ায় মণীশ গ্রেফতার আরও একটি সংযোজন। বেআইনি অস্ত্র রাখা-সহ একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত মণীশ আগেও বহু বার গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার সুবাদে দ্রুত ছাড়াও পেয়েছেন। তৃণমূল বিধায়ক তথা ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অর্জুন সিংহের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত মণীশ। দলীয় কোন্দলের জেরে মুকুলবাবুর পছন্দের ছিলেন না তিনি। মণীশকে ধরতে গত অগস্টে বরাহনগরে আচমকা পুলিশি তল্লাশি হয় অর্জুনের গাড়িতে। মণীশ-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, নিজেকে বাঁচাতেই মরিয়া হয়ে শেষ অবধি মুকুল-শিবিরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। সেই চেষ্টায় তিনি কিছুটা সফল হয়েছিলেন বলেও দলের একটি অংশের দাবি। তাঁরা বলছেন, আর সে জন্যই এত দিন তাঁকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

কিন্তু সম্প্রতি মুকুল কিছুটা কোণঠাসা। তাই শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে পুলিশ মণীশকে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি তৃণমূলের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, কোণঠাসা বলেই এ দিন যুব তৃণমূলের বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, অরূপ বিশ্বাসরা থাকলেও ছিলেন না মুকুল এবং তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু। মুকুলবাবু অবশ্য জানান, “কল্যাণীতে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ জেলা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভা ছিল। আমি ওই জেলাগুলির দায়িত্বে। তাই যুব সংগঠনের বৈঠকে থাকতে পারিনি।” শুভ্রাংশুও কল্যাণীর সভায় ব্যস্ত ছিলেন বলে দলীয় তরফে বলা হয়েছে। ২১ নভেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চার জেলা নিয়ে একটি কর্মিসভা করবেন। তারই এ দিন প্রস্তুতি সভা ছিল কল্যাণীতে। তবে পার্থবাবু তৃণমূল ভবনের বৈঠক শেষ করে কল্যাণীর সভায় যোগ দিতে যান।

তার আগে যুব তৃণমূলের বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের যুব সংগঠন কী করবে, তা নিয়ে বক্তৃতা দেন অভিষেক, পার্থবাবু, সুব্রতবাবু এবং সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খান। দলীয় সূত্রের খবর, দলনেত্রীর সংগ্রাম নিয়ে মানুষের কাছে প্রচারের পাশাপাশি তৃণমূল সরকারের তিন বছরের সাফল্য ও উন্নয়নের কর্মসূচি নিয়ে প্রচারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ৬ ডিসেম্বর ময়দানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সমাবেশ করে ‘শান্তির সন্ধানে সংহতি দিবস’ পালন করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement