মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কালীঘাটে গিয়ে দেখা করলেন মুকুল রায়। ফাইল চিত্র
আবার কি রাজনীতির মূলস্রোতে দেখা যাবে মুকুল রায়কে? এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে। দ্বাদশীর দিন বিজয়ার প্রণাম সারতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে গিয়েছিলেন মুকুল। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক হয় মমতা-মুকুল বৈঠক হয়। যদিও দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে মুখ খোলনেনি কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক। আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি কথা বলতে চাননি। ‘দাদা ব্যস্ত রয়েছেন’ বলে জানান মুকুলের সহকারী।
এখন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পদে দীর্ঘ দিন কাজ করে দলকে ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্রে মুকুল বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন। সেই মুকুলকেই আবারও কাজে লাগানো যায় কি না, সেই বিষয়েই কি ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন তৃণমূলনেত্রী? এমনই প্রশ্ন দানা বেঁধেছে শাসকদলের অন্দরে।
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের পরে ইদানীং প্রায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন মুকুল। কিন্তু রবিবার অচমকাই তাঁর বাড়িতে যান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তৃণমূলের দাবি, বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে রবিবার দুপুরে মুকুলের সল্টলেকের বাড়িতে যান জ্যোতিপ্রিয়। শনিবার আবার মুকুলের সঙ্গে তাঁর কাঁচরাপাড়ার বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। রাজ্য মন্ত্রিসভার দুই সদস্যের মুকুলের বাড়ি যাওয়ায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। অনেকেই মনে করছেন, দলনেত্রীর সঙ্গে মুকুলের বৈঠকের পরেই মন্ত্রিসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের এই তৎপরতা। তবে এর পিছনে নেত্রীর নির্দেশ রয়েছে কি না, তা নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন।
রবিবার সল্টলেকের বাসভবনে মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘দলের অন্দরে যে আলোচনা শুরু হয়েছে তা, একেবারে অমূলক নয়। কারণ, ২০২১ সালের ১১ জুন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার পর মুকুলকে দলের সভায় সে ভাবে দেখা যেত না। নিয়ম করে সল্টলেকের বাড়িতে এলেও, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতেন না তৃণমূলের নেতারা। কিন্তু দ্বাদশীর দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই পার্থ-জ্যোতিপ্রিয় গিয়েছেন মুকুলের কাছে। আর এই ঘটনাতেই রাজনৈতিক জল্পনা নতুন ইন্ধন পেয়েছে।’’
সম্প্রতি তৃণমূলে মুকুলের গুরুত্ব বৃদ্ধির আরও ইঙ্গিত মিলেছে। গত ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবস কর্মসূচিতে যোগ দিতে এলেও মঞ্চে দেখা যায়নি মুকুলকে। তবে ৮ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের বুথকর্মী সম্মেলনের মঞ্চে দেখা গিয়েছিল মুকুলকে। মাঝে এক দিন তৃণমূলের রাজ্য দফতরে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির সঙ্গেও বৈঠক হয় মুকুলের। সেই আবহে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মমতার সঙ্গে মুকুলের কালীঘাটের বৈঠক এবং তার পরেই তৃণমূলের তৎপরতা। আর তাতেই রাজনীতির মূলস্রোতে ‘মুকুলবাবুর প্রত্যাবর্তন’-এর আশায় তৃণমূলের একাংশ। তাঁরা মনে করছেন, আবার আগের মতো মকুলই পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের রাশ ধরতে পারেন।