মুকুল ব্রাত্য প্রচারেও, ফুল ফোটাচ্ছেন সাধনরা

দলের অনেকেই তাঁকে বলেন ‘দাদা’। দলে তাঁর খ্যাতি, ভোট-যুদ্ধে দিদির ‘লেফটেন্যান্ট জেনারেল’ হিসেবে। এ বারের পুর-যুদ্ধে সেই ‘দাদা’রই দেখা নেই। কোথায় দাদা ? দাদা দিল্লিতে। রাজ্যে পুরভোটের প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন দাদা দিল্লিতে? কী করছেন? দাদার জবাব, ‘‘আরে আমার কত কাজ! আমি তো এখনও রাজ্যসভার সদস্য।’’ রাজ্যসভার পরবর্তী অধিবেশন শুরু হবে ২৩ এপ্রিল, মানে কলকাতার পুরভোটের পরে। দলের সবর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদও খুইয়েছেন।

Advertisement

সঞ্জয় সিংহ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৪
Share:

দলের অনেকেই তাঁকে বলেন ‘দাদা’। দলে তাঁর খ্যাতি, ভোট-যুদ্ধে দিদির ‘লেফটেন্যান্ট জেনারেল’ হিসেবে। এ বারের পুর-যুদ্ধে সেই ‘দাদা’রই দেখা নেই। কোথায় দাদা ?

Advertisement

দাদা দিল্লিতে। রাজ্যে পুরভোটের প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন দাদা দিল্লিতে? কী করছেন? দাদার জবাব, ‘‘আরে আমার কত কাজ! আমি তো এখনও রাজ্যসভার সদস্য।’’ রাজ্যসভার পরবর্তী অধিবেশন শুরু হবে ২৩ এপ্রিল, মানে কলকাতার পুরভোটের পরে। দলের সবর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদও খুইয়েছেন। তা হলে দিল্লিতে কী এমন রাজ কাজে তিনি ব্যস্ত, তা অবশ্য খোলসা করে বলছেন না দাদা। কত দিন ব্যস্ত থাকবেন? রবিবার দুপুরে দাদা বললেন, ‘‘সাত-আট দিন বটেই।’’ তত দিনে তো কলকাতা পুরসভার ভোট গ্রহণ পর্ব মিটে যাবে! এ বার দাদার সপাট জবাব, ‘‘দল যদি প্রচারে না ডাকে, তা হলে কী করে প্রচারে যাব?’’ পাঁচ বছর আগে পুরভোটে ক’টা পদযাত্রা বা প্রচার-সভা করেছিলেন? আবার সোজা-সাপটা উত্তর, ‘‘মনে নেই!’’

তৃণমূলে দাদা মানে মুকুল রায়। তাঁর ঘনিষ্ঠ এ বারের এক তৃণমূল প্রার্থীর কথায়, ‘‘দাদা গত বার কলকাতায় দিদির সঙ্গে হাতে গোনা কয়েকটি বা আলাদা করে নিজে দু’একটি সভায় ছিলেন। বেশির ভাগ সময়ই দিয়েছিলেন জেলার পুরসভাগুলির প্রচারে।’’ কিন্তু দিদি মানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ায় পুরভোটের প্রচারে দাদা লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গিয়েছেন এ বার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বছরই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও দু’দিন প্রচারে গিয়েছিলেন মুকুল। এমনকী, নির্বাচনের দিন ভোট চলাকলীন পুরো সময়টাই কাটিয়েছিলেন মধ্যমগ্রামে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা অফিসে। এ বারই প্রথম পুরভোটের প্রচারে কোথাও তিনি নেই।

Advertisement

বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ থেকে শুরু করে বিরোধীদের অনেকেই অবশ্য দাদা-দিদির এই দূরত্বকে ‘নাটক’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, সারদা-কাণ্ডে অস্বস্তি এড়াতে মুকুলের সঙ্গে দূরত্বের ভান করছেন মমতা। তাতে সংবাদমাধ্যম এবং জনতা বিভ্রান্ত হচ্ছে। আসলে দু’জনে তলায় তলায় সমঝোতা করেই দূরত্বের নাটক করছেন।

ঘটনা হল যে, দাদা দূরে থাকলেও তাঁর পুত্র, বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় বাজেট অধিবেশনের সময় বিধানসভার অলিন্দে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা পেয়ে, তাঁকে পায়ে হাত প্রণাম করেছেন। মমতা তাতে বলেছেন, ‘‘ভাল থেকো।’’ আর এখন তো শুভ্রাংশুকে পুরসভায় প্রার্থীও করেছে দল। নিজের এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও সেখানে তিনি প্রচার করছেন চুটিয়ে। বিরোধীদের প্রশ্ন, মুকুল তৃণমূলে ব্রাত্য, অথচ তাঁর বিধায়ক-পুত্র পুরভোটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, বিরোধীশূন্য পুরবোর্ড দখলে ভূমিকা নিচ্ছেন— এটা কেমন করে সম্ভব?

এক সময় যাদবপুর-কাণ্ডে দলের লাইনের বাইরে কথা বলে যে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বা সাধন পাণ্ডের মতো মন্ত্রী দলনেত্রীর বিরাগভাজন হয়েছিলেন, তাঁরা কিন্তু কলকাতার পুরভোটে তৃণমূলের প্রচারের পুরোভাগে। যাদবপুরে আন্দোলনরত ছাত্রদের পক্ষে মন্তব্য করায় সুব্রতবাবুকে নিয়ে বিরক্ত হয়েছিলেন নেত্রী। সেই সুব্রতবাবুই এ বার পুরভোটে উত্তরে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বিজয় উপাধ্যায়ের জন্য যেমন কর্মিসভা করেছেন, তেমনই ৬৮ নম্বরের সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়, ৬৯ নম্বরের শুকদেব চক্রবর্ত়ী-সহ তাঁর বিধানসভা এলাকার তৃণমূল প্রার্থীদের জন্য ব্যাপক প্রচার করছেন।

আর সাধনবাবু শুধু উত্তর কলকাতায় নিজের নিবার্চনী কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলিতেই নয়, দলনেত্রীর প্রচারের কর্মসূচিতেও থাকছেন নিয়মিত। দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ব্যাখ্যা, প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কাজকর্মের প্রতিবাদ করে সাধনবাবুই প্রকাশ্যে প্রথম বলেছিলেন, ‘মুকুল দলের পক্ষে ক্ষতিকারক’। কট্টর মুকুল-বিরোধিতায় দলে সাধনবাবুর ‘নম্বর এখন অনেকটাই বেড়েছে! তাই পুরভোটের প্রচারেও তাঁর গুরুত্ব বেড়েছে।

ভাটপাড়ার বিধায়ক ও স্থানীয় পুরভোটে নিজের ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতিমধ্যেই জয়ী হয়ে বসে রয়েছেন অর্জুন সিংহ। তবে তিনিও পুরোদমে প্রচারে। অর্জুন জানিয়েছেন, ভাটপাড়া তো বটেই, উত্তর ২৪ পরগনার গারুলিয়া, টিটাগড় এবং ব্যারাকপুরেও তাঁকে প্রচার করতে হচ্ছে। অর্জুন বললেন, ‘‘কলকাতার পুরভোটে ইতিমধ্যে বেহালায় দু’টি সভা করেছি। পূর্ব ও উত্তর কলকাতার কয়েকটি জায়গাতেও প্রচার সভায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’’

এক দিকে মুকুলের অনুপস্থিতি আর অন্য দিকে তাঁর বিরোধীদের প্রচারে দাপট দেখে তৃণমূলের এক রসিক নেতার তির্যক মন্তব্য, ‘‘রাজনীতিতে তো শূন্যস্থান থাকতে পারে না। মুকুলের জায়গাও ভরাট হয়ে যাবে।’’ জায়গা সত্যিই ভরাট হল কি না জানতে পুরভোটের ফলের দিকে আপাতত তাকিয়ে আছেন দাদার অনুগামীরা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement