BJP

বাসে ঠাসাঠাসি সিটে বসে সফর সাংসদের, প্রশংসা সোশ্যাল মিডিয়ায়

সুকান্ত মজুমদার পেশায় অধ্যাপক। অল্প বয়স থেকেই সঙ্ঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ। ২০১৯ সালেই প্রথম বার ভোটে লড়েন তিনি।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:২৫
Share:

আর পাঁচ জন সাধারণ যাত্রীর সঙ্গে এভাবেই সফর করেন সাংসদ। নিজস্ব চিত্র

প্রায় সওয়া তিনশো কিলোমিটার ছুটে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ট্রেন শীতের ভোরে ঢুকেছে শিয়ালদহে। যাত্রীরা স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার উপায় খুঁজছেন। কেউ হেঁটে এনআরএসের দিকে। কেউ ট্যাক্সি ধরছেন। কারও জন্য অপেক্ষায় রয়েছে গাড়ি। বাকিরা বাসে। বালুরঘাট থেকে আসা এক জনও বাসেই উঠলেন। আর তাঁর সেই বাসযাত্রার ছবি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে গেল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যে সে যাত্রী তো নন। তিনি যে সাংসদ!

Advertisement

রাজ্য বিজেপির সভাপতি নির্বাচন ছিল বৃহস্পতিবার। সকাল ১১টা থেকে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বৈঠক শুরু হয় তার জন্য। সে বৈঠকে যোগ দিতে বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন কলকাতায়। কেউ কেউ আবার এ দিন সকালে কলকাতায় ঢোকেন। বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার তাঁদের অন্যতম। কিন্তু সুকান্তর ক্ষেত্রে ঘটনাপ্রবাহ চোখে পড়ার মতো হয়ে উঠল তিনি শিয়ালদহে নামার পরে।

বিধায়ক, সাংসদ বা মন্ত্রী দু’-চারটে করে গাড়ি আর নিরাপত্তারক্ষী-পারিষদ বর্গ-সহ কয়েক গণ্ডা করে লোকলস্কর সঙ্গে নিয়ে ঘুরবেন— এটাই আজকাল চেনা ছবি। মফস‌্সলের কোনও পুরসভার কাউন্সিলর বা কলকাতা থেকে অনেক দূরের কোনও জেলার কোনও পঞ্চায়েত প্রধানকেও বাসে চড়তে এখন তেমন দেখা যায় কি না, তা নিয়ে সংশয় যথেষ্ট। সেখানে দেশের শাসক দলের এক সাংসদ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরিয়ে লঝঝড়ে বাসে চড়ে বসছেন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দিকে যাওয়ার জন্য, এ ছবি ঈষৎ চোখ টানারই মতো। বলছে রাজনৈতিক শিবিরই।

Advertisement

সুকান্ত মজুমদার পেশায় অধ্যাপক। অল্প বয়স থেকেই সঙ্ঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ। ২০১৯ সালেই প্রথম বার ভোটে লড়েন তিনি। বিজেপির টিকিটে বালুরঘাট থেকে লড়ে হারিয়ে দেন তৃণমূলের অর্পিতা ঘোষকে। তার পর থেকে গোটা উত্তরবঙ্গেই বিজেপির প্রচার-প্রসারের নানা কর্মসূচিতে সুকান্ত বেশ অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন। কিন্তু কলকাতায় তাঁর বাসযাত্রার ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চা শুরু হওয়ার পরে আনন্দবাজারকে তিনি বললেন, ‘‘শুধু কলকাতায় নয়, আমার বালুরঘাটেও আমি আগের মতোই সাধারণ ভাবেই চলাফেরা করি। স্কুটি নিয়ে ঘুরি।’’

সাংসদ হওয়ার পরে সুকান্ত মজুমদারকে নিরাপত্তা দিয়েছে রাজ্য সরকার। এক জন কনস্টেবল তাঁর নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে থাকেন। কিন্তু সুকান্ত বললেন, ‘‘আমি কখনও ওই নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে কলকাতায় আসি না। উনি বালুরঘাটেই থাকেন।’’ বৃহস্পতিবার সুকান্ত যে একা এসেছেন, তা নয়। তাঁর আপ্ত সহায়ক-সহ কয়েক জন তাঁর সঙ্গেই এ দিন কলকাতায় এসেছেন। শিয়ালদহে নামার পরে সবাই মিলে একসঙ্গেই বাসে ওঠেন। বাসের সিটে ঠাসাঠাসি অবস্থায় সাংসদের বসে থাকার ছবিটাও তাঁর এক সঙ্গীই তোলেন।

কখনও ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে দাঁড়িয়ে। নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি নেতাদের কারও কারও কথায়, সঙ্ঘের শিক্ষায় যাঁরা যাঁরা শিক্ষিত, তাঁরা এ রকম সাধারণ ভাবেই চলেন। তাই সুকান্ত মজুমদারকে বাসে চড়তে দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সুকান্ত নিজেও সে কথাই শোনাচ্ছেন। আর বলছেন, ‘‘আমি এটাতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করি। নানা কাজে মাঝেমধ্যেই কলকাতায় আসি বা শহরতলির নানা এলাকায় যাই। তখনও তো লোকাল ট্রেনেই যাতায়াত করি।’’

বিজেপির একের পর এক নেতা লাইন দিয়ে নিরাপত্তা চাইছেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। সবাই যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তা নয়। কিন্তু কেন্দ্র অকাতরে সিআরপিএফ বা সিআইএসএফ জুগিয়ে যাচ্ছে। যাঁরা নিরাপত্তা পাচ্ছেন না, তাঁরা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। রাজ্যের নানা প্রান্তে বিজেপির উপরে তৃণমূল হামলা করছে এবং সেই হামলার মুখে দাঁড়িয়ে লড়তে গেলে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা অপরিহার্য— এই রকম কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে বিজেপির অনেক নেতার মুখেই। সেখানে বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ কিন্তু ব্যতিক্রম। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তাঁর নেই। রাজ্য পুলিশ যে নিরাপত্তারক্ষী দিয়েছে, তাঁকেও সর্বত্র নিয়ে যান না।

এতে সমস্যা হচ্ছে না? সুকান্ত বললেন, ‘‘কিসের সমস্যা! কলকাতায় বা দক্ষিণবঙ্গে আমাকে চেনেন ক’জন। উত্তরবঙ্গে অনেকে চেনেন। কিন্তু সেখানেও তো অসুবিধা হচ্ছে না। তা হলে কলকাতায় বাসে চড়তে আর কী অসুবিধা!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement