এই ধরনের উপসর্গকে উপেক্ষা করা ঠিক নয় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাঁরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টা ফেলে রাখবেন না অথবা নিজে নিজে ডাক্তারি করতে যাবেন না। দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ, এই সব উপসর্গ মুখ বা গলার ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে।
অল্পবয়সি ও মধ্যবয়সি কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে মুখ ও গলার ক্যানসার বেড়ে চলায় চিকিৎসকেরা উদ্বিগ্ন। দেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে মূলত জনগোষ্ঠীর এই অংশের কাঁধে ভর দিয়ে। কর্মক্ষমেরা যদি ক্যানসারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন বা অকালে মারা যান, পরোক্ষে দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার উপরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বলে মনে করেন অনেক চিকিৎসক। সামগ্রিক ভাবে সামাজিক সচেতনতা ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যে কঠিন, সোমবার বিশ্বের প্রথম ‘মুখ ও গলা-ঘাড়ের ক্যানসার দিবস’ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তা স্বীকার করে নেন কলকাতার ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের অনেকে।
প্রতি বছর বিশ্বে মুখ ও গলা-ঘাড়ের ক্যানসারে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় অন্তত দু’লক্ষ মানুষের। মুখ ও গলার ক্যানসারের মধ্যে প্রধানত মুখগহ্বর, গলা, নাক, ঘাড়, জিভ, গলার গ্রন্থির ক্যানসার পড়ে। এর প্রধান কারণই হল সিগারেট, পানমশলা, গুটখা, খৈনির অভ্যাস। বহু ক্ষেত্রে মানুষ অনেক পরে ক্যানসারের কথা জানতে পারছেন। তাই রেডিয়েশন দিয়ে, কেমোথেরাপি করেও লাভ হচ্ছে না। মাঝখান থেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারই সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে।
বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে জিভে বা মুখের ভিতরে অন্য কোনও অংশে ঘা হয়ে রয়েছে। হয়তো তাতে কোনও ব্যথা নেই।
গলার ভিতরে ফোলা ফোলা ভাব রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
গিলতে গেলে গলায় ব্যথা লাগছে বা খচখচ করছে।
স্বর ভেঙে গিয়েছে। কোনও মতেই ঠিক হচ্ছে না।
ভারত-সহ ৫৩টি দেশের ৫১টি ‘হেড অ্যান্ড নেক অঙ্কোলজি সোসাইটি’ এই প্রথম মুখ ও গলা-ঘাড়ের ক্যানসার দিবস পালন করছে। উদ্দেশ্য, সচেতনতা বাড়িয়ে একেবারে প্রথম স্তরেই এই ক্যানসার চিহ্নিত করা এবং ক্যানসারের কারণগুলোকে সূচনাতেই নির্মূল করা।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায় কলকাতায় এ দিনের অনুষ্ঠানে জানান, মুখগহ্বরে ক্যানসার হলে গলার ভিতরের বিভিন্ন গ্রন্থি অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হবে কি না, সেই বিষয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধ চলছিল। এত দিনে সেই বিরোধ কাটিয়ে সোমবারের আলোচনাসভায় গলার গ্রন্থি বাদ দেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছনো গিয়েছে। চিকিৎসকেরা সকলেই মানছেন, এই ব্যবস্থায় মুখ থেকে গলায় ক্যানসার ছড়িয়ে পড়া অনেকটাই আটকানো যাবে।
কলকাতার টাটা মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের চিকিৎসক ইন্দ্রনীল মল্লিক জানান, তাঁরা ৪৫-৬০ বছর বয়সের প্রচুর রোগী পাচ্ছেন। সংখ্যাটা প্রতি বছর বাড়ছে। হাওড়ার নারায়ণ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ জ্যোতিরূপ গোস্বামীর পর্যবেক্ষণ, মুখ ও গলা-ঘাড়ের ক্যানসারে আক্রান্তদের একটা বড় অংশের বয়স ৪০ থেকে ৬০। ১৮-২৫ বছরের ছেলেমেয়েদেরও এই রোগ হচ্ছে। দেখা গিয়েছে, স্কুল থেকেই তাদের অনেকে মাত্রাতিরিক্ত সিগারেট বা পানমশলা খেতে শুরু করেছিল। অল্পবয়সিদের মধ্যে এই ক্যানসারের ভয়াবহতা আরও বেশি হয় বলে জানান জ্যোতিরূপবাবু।