বসন্ত সমাগমে বিলেত হোক বা বাংলা, খুশি হয় আমজনতা।
কিন্তু ঋতুবদলের এই মরসুমে বাঙালির ভাগ্যে বাড়তি প্রাপ্তি রোগবালাইয়ের অস্বস্তি! শীত তার মুষ্টিভিক্ষার হাত গুটিয়ে নিতেই চোখ রাঙাচ্ছে গরম। ঘরে ঘরে হাজির সর্দিজ্বর, জলবসন্ত, পেট খারাপের মতো পরজীবীবাহিত রোগ। ঠান্ডা কমায় মশার দ্রুত বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশও তৈরি হয়েছে। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ সম্পর্কে বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দিচ্ছেন পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা।
আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে চিকিৎসকদের চেম্বারে। এক চিকিৎসকের মন্তব্য, ‘‘আমার নাতনিরই তো সকাল থেকে বমি, পেট খারাপ। জ্বর!’’ ওই চিকিৎসকের বাড়ি উত্তর কলকাতায়, যেখানে আন্ত্রিক রোগের প্রকোপ নেই। বেহালার এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘সর্দি-কাশি-জ্বর নিয়ে অনেকেই আসছেন। সকলকে রক্ত পরীক্ষা করতে বলছি। মশা যা বেড়েছে, তাতে কোনও ঝুঁকি নেওয়া যাচ্ছে না।’’
পরজীবী রোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী জানাচ্ছেন, বেশি শীতে ব্যাক্টিরিয়া-ভাইরাস কাবু হয়ে পড়ে। কিন্তু এই না-শীত, না-গরমের সময়ে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে তারা। হাওয়া ও জলের মাধ্যমে মানবশরীরে ঢুকে রোগ বাধায়। তাঁর চেম্বারে রোগীদের বেশির ভাগই আসছেন জ্বর এবং পেট খারাপ নিয়ে। অমিতাভবাবু বলছেন, এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা, জলবসন্তের মতো ভাইরাসবাহিত রোগ এবং টাইফয়েডের মতো ব্যাক্টিরিয়াবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। জল দূষিত হয়ে ডায়েরিয়া বাধাতে পারে। অমিতাভবাবু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মশার বংশ ফের বাড়ছে। মার্চ থেকেই ম্যালেরিয়ার মরসুম শুরু হতে পারে।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষের কাছেও সর্দিকাশি, জ্বর, পেট খারাপের উপসর্গ নিয়ে আসা শিশুর ভিড়। তিনি জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের হানায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। ভাইরাল ফিভার হোক বা পেট খারাপ, শরীর থেকে দ্রুত জল বেরিয়ে যাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ— সকলেই।
মেডিসিনের চিকিৎসক প্রবীর বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ডায়েরিয়া নিয়ে অনেকেই আসছেন তাঁর কাছে। সঙ্গে জ্বর, কাশি। তাঁর মতে, দক্ষিণ কলকাতার একাংশে পানীয় জলে কোনও দূষণ ছড়িয়েই এই হাল। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসের হানায় হাল্কা জ্বরের সঙ্গী গা-ব্যথা। কারও কারও আবার আচমকা পেশিতে টান ধরার মতো উপসর্গও পাওয়া যাচ্ছে। আমজনতার অভিজ্ঞতা, ভোরের দিকে ঠান্ডা এবং দুপুরের চিড়বিড়ে গরমে শরীর ম্যাজম্যাজ করছে।
প্রতিকার কী? প্রবীরবাবুর পরামর্শ, ঘরে ওআরএস রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া জরুরি। শরীরে ভাইরাস হানা দিলে জলের পরিমাণ কমে গিয়েই দুর্বলতা বা পেশিতে টান ধরার মতো ঘটনা ঘটে।
পুরসভার দাবি, জোর কদমে চলছে মশা দমন কর্মসূচি। শুধু মানুষই তা প্রত্যক্ষ করতে পারছেন না!