মোর্চা নেতা রোশন গিরি।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে বিমল গুরুঙ্গরা অনেক আগে থেকেই লম্বা বন্ধের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। তাদের দাবি, স্কুলস্তরে বাংলা চালু করা বা দার্জিলিঙে মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল অছিলামাত্র। তার ‘প্রমাণ’ হিসেবে মোর্চা নেতা রোশন গিরির সরকারি চাকুরে স্ত্রী দিব্যা গিরির একটি ছুটির দরখাস্তকে সামনে এনেছে সরকার। দিব্যা আবার মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গের আপন বোনও। কাজ করেন দার্জিলিংয়ের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে।
গত ১ জুন থেকে দিব্যা ৪৫ দিনের ছুটিতে চলে যান। প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘পাহাড়ে গোলমাল শুরু হয় ৮ জুন থেকে। কিন্তু মোর্চা নেতারা যে আগে থেকেই পাহাড় অচলের পরিকল্পনা করেছিলেন, তা দিব্যা গিরির ছুটি নিয়ে চলে যাওয়া থেকেই স্পষ্ট হয়ে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘শুধু রোশনের স্ত্রী-ই নন, সরকারি চাকুরে আরও অনেক নারী মোর্চার নেত্রীও একই কাজ করেছেন।’’
বিষয়টি নিয়ে অন্য মতও রয়েছে। কারও মতে, দিব্যা গিরির ছুটিতে যাওয়াটা কাকতালীয় ঘটনাও হতে পারে। এর সঙ্গে পাহাড়ে আন্দোলনের যোগসূত্র খুঁজতে যাওয়া ঠিক হবে না। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বন্ধ শুরুর আগে অনেকে লম্বা ছুটিতে চলে গিয়েছিলেন। এর সঙ্গে পাহাড়ের অচলাবস্থার কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তা দেখা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: বন্ধে নাকাল পাহাড়ে ভরসা এটিএম দাজুরা
রোশনের স্ত্রী ২০০৭ সালে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে যোগ দেন। ক্লার্ক কাম টাইপিস্টের কাজ করলেও সরকারের ঘরে তাঁর কোনও বৈধ নিয়োগপত্র নেই। কী ভাবে এই নিয়োগ হয়েছিল, তারও কাগজপত্র সরকার খুঁজে পাচ্ছে না। দিব্যা আবার নারী মোর্চারও নেত্রী। গত ৮ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ভানু ভবন আক্রমণের ঘটনাতেও পুলিশের খাতায় অভিযুক্ত তিনি।
সরকারি নথিতে দেখা যাচ্ছে, ১ জুন থেকে ৪৫ দিনের ‘আর্নড লিভ’ নিয়ে নেন দিব্যা। কারণ হিসেবে নিজের অসুস্থতা এবং ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার কথা জানিয়েছিলেন। এর মধ্যেই পাহাড়ে বন্ধ শুরু হয়। দিব্যা কিন্তু ছুটি শেষ হওয়ার পরে ২৭ জুলাই ফের কাজে যোগ দেন। ২৫ অগস্ট পর্যন্ত খাতায়-কলমে কাজও করেন। এর পর আবার লম্বা ছুটি চেয়ে আবেদন জমা দেন তিনি।
প্রশাসনের বক্তব্য, নারী মোর্চা যখন সরকারি কর্মীদের তিন মাসের বেতন ত্যাগ করে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন করতে বলছে, তখন খোদ গুরুঙ্গের বোন আগাম ছুটির কল্যাণে বেতন পেয়েছেন। এমনকী, বন্ধ আরও লম্বা হতে পারে ধরে নিয়ে ২৫ অগস্ট ফের লম্বা ছুটির দরখাস্ত করেছিলেন। সেটি মঞ্জুর হলে এ বারেও বেতন পেতে অসুবিধা হতো না।
সরকার অবশ্য এই ছুটি মঞ্জুর করেনি। বেতনও আটকে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মতো আরও কারা এ ভাবে লম্বা ছুটিতে গিয়েছিলেন তাঁদের খোঁজ করছে প্রশাসন।