কেরলে প্রাক্-বর্ষা

আর কত দেরি, তাপে ধুঁকছে পূর্ব ও পশ্চিম

বর্ষার ট্রেন দেরিতে চলছে। সময় পেরিয়ে গেলেও সে ভারত-ভূমিতে পা রাখেনি। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে দেশের বিরাট তল্লাট শুকিয়ে কাঠ। বিশেষত উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টির ঘাটতি ‘বিপজ্জনক’ জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে বলে রবিবার জানাল দিল্লির মৌসম ভবন। ঘাটতি-বিচারে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বও খুব একটা পিছিয়ে নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

বর্ষার ট্রেন দেরিতে চলছে। সময় পেরিয়ে গেলেও সে ভারত-ভূমিতে পা রাখেনি। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে দেশের বিরাট তল্লাট শুকিয়ে কাঠ। বিশেষত উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টির ঘাটতি ‘বিপজ্জনক’ জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে বলে রবিবার জানাল দিল্লির মৌসম ভবন। ঘাটতি-বিচারে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বও খুব একটা পিছিয়ে নেই।

Advertisement

এরই মধ্যে আশার কথা— কেরলে বর্ষা আগমনের অনুকূল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, কেরল-সহ দক্ষিণ ভারত জুড়ে শুরু হয়েছে প্রাক্‌-বর্ষার বৃষ্টি। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। যদিও আবহবিদেরা একে ‘প্রাক্‌-বর্ষা’ তকমা দিতে নারাজ। তাঁদের মতে, এর মূলে রয়েছে স্থানীয় ভাবে তৈরি বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ। মৌসম ভবন এখনও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছে না, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা কবে আসবে।

মরসুমি ক্যালেন্ডার মোতাবেক, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু কেরল হয়ে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ১ জুন। গত বেশ ক’বছর ধরে নানা কারণে সেই নির্ঘণ্ট ব্যাহত হচ্ছে। এ বার যেমন বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র বাধায় বর্ষার গতি হোঁচট খেয়েছে, আরবসাগরের পথে কেরলে পৌঁছতে সে দেরি করে ফেলেছে। এ দিন মৌসম ভবনের পূর্বাভাস: আর দিন তিনেকের মধ্যে কেরল দিয়ে বর্ষা মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকবে। তার পরে উপরের দিকে উঠে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ার পালা। বায়ুপ্রবাহ যত অনুকূল থাকবে, মৌসুমি বায়ুর শাখা বিস্তারের প্রক্রিয়া তত মসৃণ হবে।

Advertisement

এবং পরিস্থিতি ঠিকঠাক থাকলে ১৫-১৬ জুনের মধ্যে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার পদার্পণ ঘটবে বলে আবহবিদদের ধারণা। ওঁরা জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক নিয়মে দিল্লিতে বর্ষা ঢোকার কথা ১ জুলাই। কিন্তু এ বার বর্ষা-গাড়ি উত্তর-পশ্চিম ভারতে পৌঁছতে পৌঁছতে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ গড়িয়ে যেতে পারে।

তত দিন রাজস্থান, গুজরাত, পঞ্জাব, হরিয়ানাকেও জ্বলে-পুড়ে খাক হতে হবে। তাপপ্রবাহের প্রকোপে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টির ঘাটতি ৮১% ছুঁয়ে ফেলেছে। দক্ষিণ উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাত, বিদর্ভে আগামী কয়েক দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা। অসমে ইতিমধ্যে এক বার বন্যা হয়ে গেলেও পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে বৃষ্টির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১%। মধ্য ভারতে ৩৯%। পূর্ব ভারতের কিছু অংশে ও উত্তর-পশ্চিমে ভূগর্ভস্থ জলস্তরও নামছে লাফিয়ে লাফিয়ে। উপরন্তু জলাধারগুলো খটখটে। এমতাবস্থায় অতিবৃষ্টিই একমাত্র সুরাহা। অথচ তাতে উল্টো বিপত্তির সমূহ সম্ভাবনা। কারণ, টানা অনাবৃষ্টির জেরে উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য ভারতে বিভিন্ন নদীর তল অনেকটা উঠে এসেছে। অতিবর্ষণ হলে সেখানে বৃষ্টির ঘাটতি মিটবে বটে, কিন্তু বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আবহবিদদের পর্যবেক্ষণ। এ হেন ‘তপ্ত’ পরিবেশে দক্ষিণ ভারত যেন ‘মরূদ্যান।’ রোয়ানুর দৌলতে সেখানে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের ৬৩% বেশি। আর তারই সুবাদে সারা দেশে বৃষ্টির গড় ঘাটতি আপাতত ৩২%।

কিন্তু গড়ের এই অঙ্কে যে সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রতিফলন নেই, প্রকৃতির দিকে তাকালেই তা মালুম হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement