Cattle Smuggling

Cattle Smuggling: গরু পাচারে অনুব্রত মণ্ডলের পরে দ্বিতীয় সারির এক প্রভাবশালী নেতার টাকা নেপালে

বীরভূমের যে নেতার টাকা নেপালে মেডিক্যাল কলেজ তৈরিতে বিনিয়োগ হয়েছে, তিনি এখন সিবিআই তদন্তের আওতায়। উত্তরবঙ্গে নাকি তাঁর নিত্য যাতায়াত।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২২ ০৬:০৮
Share:

গরু পাচারের টাকা বিনিয়োগ হয়েছে ওই পড়শি দেশের একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরির কাজে! ফাইল চিত্র।

এ এক বিচিত্র পারাপারের খেলা! এতটাই যে, সিবিআই-ও হতবাক। সীমান্ত পার হয়ে দেদার গরু গিয়েছে বাংলাদেশে। আর সেই প্রাণী পাচারের টাকা দেশের অন্য এক সীমান্ত পার হয়ে পৌঁছে গিয়েছে নেপালেও। গরু পাচারের টাকা বিনিয়োগ হয়েছে ওই পড়শি দেশের একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরির কাজে! তদন্তে এমন তথ্য পেয়ে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা বিস্মিত। তাঁদের কথায়, “জানি না, আগামী দিনে আরও কত বিস্ময় অপেক্ষা করছে!”

Advertisement

যাঁর টাকা নেপালের ভরতপুরে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চিতওয়ান মেডিক্যাল কলেজ তৈরিতে বিনিয়োগ হয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি, তিনি বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের পরে দ্বিতীয় সারির প্রভাবশালী নেতা বলে পরিচিত। তদন্তকারীদের বক্তব্য, তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে একটি বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিভিন্ন খাতে বেআইনি ভাবে তোলা কোটি কোটি টাকা বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেই সব দেশের মধ্যে রয়েছে নেপালও। ওখানে বীরভূমের যে-নেতার টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, তিনি এখন সিবিআই তদন্তের আওতায়। উত্তরবঙ্গে নাকি তাঁর নিত্য যাতায়াত। সিবিআই সূত্রের দাবি, সেখানে একটি রাস্তার টোল প্লাজ়া চালান তিনি। উত্তরবঙ্গ থেকে নেপালে যাতায়াতের সুবিধাও বেশি।

গরু পাচার মামলায় অনুব্রত ধরা পড়ার আগেই ধরা পড়েন তাঁর দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন। আসানসোল আদালতে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বার সেহগালকে হাজির করানো হয়েছে, জানানো হয়েছে তাঁর জামিনের আবেদন। সেহগালের আইন-আদালত সংক্রান্ত খরচ নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়েই তদন্তকারী সংস্থা ওই দ্বিতীয় সারির প্রভাবশালী নেতার খোঁজ পেয়েছে। অভিযোগ, সেহগালের আইনি লড়াইয়ের সমস্ত খরচ নাকি তাঁর কাছ থেকেই আসছে।

Advertisement

গরু ও কয়লা পাচারের তদন্তের পরতে পরতে রয়েছে নতুন নতুন তথ্য, জানাচ্ছেন অফিসারেরা। এখনও পর্যন্ত যে-সব তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তার ভিত্তিতে অনুমান, অনুব্রতের দরজায় টাকা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন দ্বিতীয় সারির ওই নেতাই। তদন্তকারীদের দাবি অনুযায়ী বীরভূম জেলা জুড়ে গরু ও কয়লা পাচার কার্যত নিয়ন্ত্রণ করতেন ওই নেতা।

সেহগাল এখন জেলে। কয়েক মাস আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায় সেহগালের মেয়ে। সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় মাধব কৈবর্ত নামে এক ব্যক্তিরও। সিবিআইয়ের দাবি, দ্বিতীয় সারির নেতাটির হয়ে গরু পাচারের টাকা তোলার দায়িত্বে ছিলেন মাধব। গরু পাচারে আব্দুল লতিফের নাম ইতিমধ্যে উঠে এসেছে। সে পলাতক। সিবিআইয়ের দাবি, বীরভূমের দ্বিতীয় সারির ওই নেতার সঙ্গে লতিফের সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ হাতে এসেছে। হাট থেকে গরু কিনে তাদের লোকেরাই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাঠাত বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা। ওই নেতার এক নিকটাত্মীয়ের নামে বিপুল সম্পত্তির হদিস পেয়েছে সিবিআই।

তদন্তকারীদের দাবি, গরু পাচারের টাকা সেহগাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ওই নেতার কাছে জমা দিতেন। সেখানে সেই টাকা চার ভাগ হত। সেহগাল, অনুব্রত এবং ওই নেতা ছাড়া চতুর্থ ভাগ পৌঁছত কলকাতায়। দ্বিতীয় সারির ওই নেতা গরু পাচারের টাকা মুর্শিদাবাদের ডোমকলের এক ব্যবসায়ীর কাছে রাখতেন বলেও একটি সূত্রে জানতে পেরেছে সিবিআই।

মূলত ফরওয়ার্ড ব্লকের হাত ধরে উঠে আসা ওই নেতার ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। এক সময় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বাম জমানায় রাজ্যের ফব মন্ত্রীদের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু হয় নানুরের ওই বাসিন্দার। তিনি মন্ত্রীর আপ্ত-সহায়ক হিসাবেও কাজ করেন। কখনও চালকল থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ, কখনও সমবায় তৈরি করে টাকা তছরুপের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। দলে অনুব্রত বা কেষ্টর পরামর্শদাতা হিসাবে তাঁর গুরুত্ব বাড়তে থাকে। বিধায়কও হন। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, তাঁকে নিয়ে দলেই বিরোধ রয়েছে। এবং অনুব্রতের গ্রেফতারির পরে সেই বিরোধ নাকি আরও বেড়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement