সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত। ফাইল চিত্র।
অনেক পিছিয়ে শুরু করেও শাখার সংখ্যায় জাতীয় গড়ের চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছে বঙ্গ আরএসএস। যা নিয়ে সাম্প্রতিক সফরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত।
প্রতি বছর মার্চ মাসে সঙ্ঘের বার্ষিক সভায় সারা বছরের তথ্য ও পরিসংখ্যান-সহ কাজকর্মের হিসেব তুলে ধরাই সঙ্ঘের রীতি। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে রাজ্যগুলি সেই রিপোর্ট তৈরি করে। এই মুহূর্তে দেশে সঙ্ঘের সাংগঠনিক বিভাজন অনুযায়ী ৪২টি বিভাগ রয়েছে। সঙ্ঘ সূত্রের খবর, দেশ জুড়ে ৩৪ হাজার ৯০০ জায়গায় ৫৬ হাজার ৭০০ সক্রিয় শাখা রয়েছে। যার চার শতাংশের উপরেই পশ্চিমবঙ্গে। সর্বশেষ পেশ করা প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলায় সঙ্ঘের সক্রিয় শাখার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। যেখানে রাজ্যপ্রতি শাখার সংখ্যায় জাতীয় গড় ১৩৫০, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের এই সংখ্যা সঙ্ঘের অন্যতম উৎসাহের কারণ। সূত্রের দাবি, সঙ্ঘ প্রধান নিজে জানিয়েছেন, ভাল কাজ হচ্ছে। আরও মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। যাঁরা বয়সের কারণে বসে গিয়েছেন, তাঁদেরও অন্য কাজে লাগাতে হবে।
সঙ্ঘ সূত্রের খবর, ২০১১ সালে রাজ্যে সঙ্ঘের শাখার সংখ্যা ছিল ৭৫০। ২০১৪-১৫ সালে এক লাফে পৌঁছয় দেড় হাজারে। ২০২১-২২ সালে তা আড়াই হাজার ছুঁয়েছে। মার্চের বার্ষিক শিবিরে নতুন প্রতিবেদন এলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে, ধারণা তাঁদের। শুধু শাখার সংখ্যা নয়, প্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে এই সময়কালে। সঙ্ঘ সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে সঙ্ঘ পরিচালনার জন্য একটি প্রান্ত ও এক জন প্রান্ত প্রমুখ ছিলেন। শাখা এবং কাজের পরিধি বাড়ায় ২০২১ সালে বাংলায় সঙ্ঘের প্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় তিন। দক্ষিণবঙ্গ, মধ্যবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের তিন প্রান্তে তিন জন প্রান্ত প্রমুখ শাখা পরিচালনা করছেন।
সঙ্ঘের দাবি, এই মুহূর্তে রাজ্যে যে সাংগঠনিক জেলাগুলি রয়েছে সেগুলির মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, বারাসাত এবং বারুইপুরের অবস্থা বেশ কিছুটা এগিয়ে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেবা কাজ এবং গ্রাম বিকাশ যোজনার মাধ্যমে তাঁরা কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় তিন হাজার সেবা কাজ চলছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বয়ং সেবকেরা কোথাও সংগঠিত ভাবে, কোথাও ব্যক্তিগত ভাবে সেবামূলক কাজ করছেন। এ ছাড়া প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার একটি ব্লক বাছাই করে সেখানে গ্রাম বিকাশ যোজনার কাজ চলছে। যেখানে শিশুশিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, সামাজিক কর্মসূচি, শারীরশিক্ষা ও অন্যান্য জনহিতকর কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে ওই এলাকার মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটানো হয়ে থাকে। সঙ্ঘের দাবি, ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া, হুগলির বালিবেলা, উত্তর ২৪ পরগনার কর্ণমাধবপুর, বর্ধমানের আমূল, আসানসোলের লাউদোহা গ্রামে এই কাজ সবচেয়ে এগিয়ে আছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পরে বিজেপি যে ভাবে ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগে সরব হয়েছিল, তা সত্ত্বেও সঙ্ঘের কাজ কী করে এগোচ্ছে? সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত প্রচারক বিপ্লব রায় বলেন, “জনমত আমাদের সঙ্গে আছে। তাই সন্ত্রাস হলেও আমাদের পক্ষে তাকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। মানুষ বহুদিন ধরে বিকল্প খুঁজছে। আরএসএস সেই বিকল্প পৌঁছে দিচ্ছে। আমাদের কাজ পৌঁছে দেওয়ার আগেও আমাদের কথা যাতে পৌঁছে যায়, আমরা সেই চেষ্টাই করছি।”