কাহিনিটা অনেকটাই উলট পুরাণের!
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডাক দিয়েছেন, নগদের মায়া কাটিয়ে দেশকে ‘ক্যাশলেস’ হয়ে উঠতে হবে। কার্ড এবং মোবাইল ওয়ালেটে লেনদেনের সুবিধা কত, আম আদমিকে তা বোঝাতে পরিশ্রম করতে নেমে পড়েছেন বিজেপি নেতা-কর্মীরাও। অথচ রাজ্যে সেই দলের চেনা মুখ যাঁরা, তাঁদের প্রায় কারও হাতেই না আছে কার্ড, মোবাইলে না আছে ই-ওয়ালেট!
আবার ক্যাশলেস পরিষেবা চাপিয়ে দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়ানোর প্রতিবাদে প্রতি দিনই সুর চড়াচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে মঙ্গলবারও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তড়িঘড়ি নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দিনমজুরদের বিপাকে ফেলেছেন। বহু ক্ষেত্রে চাকরি ছাঁটাইয়ের পথ প্রশস্ত করেছেন। কিন্তু তাঁর দলের বিধায়ক তথা মেয়র সব্যসাচী দত্তের মতো নেতারা দিব্যি ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ওয়ালেটে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন!
বিজেপি-র রাজ্য নেতাদের কেউ কেউ ঘরোয়া আলোচনায় লাজুক হেসে বলছেন ‘‘দেখছেন এটিএমেই যাই না! আবার পেটিএম!’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা অধুনা কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ, প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য এবং সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়— দলের অন্দরে-বাইরে এই চারটিই পরিচিত নাম। এবং চার জনের কারওরই পেটিএম বা কোনও ধরনের মোবাইল ওয়ালেট নেই। কার্ড আছে এঁদের মধ্যে শুধু দিলীপবাবুর।
কার্ড না থাকায় এক বার বিদেশ-বিভুঁয়ে আক্ষরিক অর্থেই ভিক্ষা করে রুটি খেতে হয়েছিল শমীকবাবুকে। সে বার লস অ্যাঞ্জেলেসে বন্ধুর বাড়ি থেকে নিউ জার্সিতে বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। খাবার অর্ডার দেওয়ার পরে তাঁর কাছে দাম দেওয়ার মতো কোনও কার্ড নেই জেনে খাবারের ট্রে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন বিমানসেবিকা। বেগতিক বুঝে বিমানে দাঁড়িয়েই বক্তৃতার ঢঙে শমীকবাবুকে বলতে হয়েছিল, তাঁকে সকালে এমন কিছু ওষুধ খেতে হয়, যার জন্য তাঁর বেশি খিদে পায়। তখন না খেলে তিনি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। কাতর আর্জি শুনে এক মার্কিন সাহেব দু’টো রুটি দিয়ে শান্ত করেন শমীকবাবুকে!
এই ঘটনার পরেও শমীকবাবু কার্ড নেননি। কিন্তু এ বার ‘কড়া শিক্ষকে’র পাল্লায় পড়ে কার্ড, পেটিএম অ্যাকাউন্ট— সবই করাতে হবে! রাহুলবাবু আবার জানিয়েছেন, অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী কার্ড বা মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করেননি। এবং ভাবগতিকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন ও পথ মাড়ানোর বিশেষ সদিচ্ছা নেই! বিজেপি নেতাদের হাবভাব দেখে তৃণমূল নেতৃত্ব কটাক্ষ করছেন, মোদী দলের নেতাদের ডিজিটাল শিক্ষা দিতে পারেননি! দেশকে কী করে দেবেন?
বিজেপি নেতারা অবশ্য এই কটাক্ষ হজম করতে অপারগ। তাঁরা উল্টে দলের যুব মোর্চাকে রাস্তায় নামাচ্ছেন ঘুরে ঘুরে পেটিএম, ডেবিট কার্ড ব্যবহারের চল বাড়ানোর প্রচার করতে। আর তাঁরা নিজেরা? দিলীপবাবুরা এক কথায় বলেছেন, ‘‘এ বার অবশ্যই পেটিএম, ডেবিট কার্ড দুটোতেই হাতেখড়ি হবে।’’ এক মাত্র লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কার্ড আগেই ছিল। মোদীর আহ্বান শুনে পেটিএম অ্যাকাউন্টও করিয়ে ফেলেছেন। ‘আপনি আচরি ধর্মে’র সামান্য দৃষ্টান্ত অন্তত লকেটের সৌজন্যে সামনে রাখতে পারছে গেরুয়া শিবির!