MLA

বিধায়ক খুন হননি, অপপ্রচার চলছে: রাষ্ট্রপতিকে চিঠি মমতার

মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, বিজেপি রাজনৈতিক হত্যা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও এটা আসলে তেমন কোনও ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ১৭:৩৪
Share:

রাষ্ট্রপতির হাতে বুধবার এই চিঠিই তুলে দিয়েছেন ডেরেক ও' ব্রায়েন। —নিজস্ব চিত্র।

বিধায়কের রহস্যমৃত্যু ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে এ বার রাষ্ট্রপতির দরবারে তৃণমূলও। হেমতাবাদের বিধায়ক খুন হননি, আত্মহত্যাই করেছেন বলে তদন্তে ইঙ্গিত— রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে এ কথা জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধায়কের মৃত্যুতে বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রাজনৈতিক রং লাগাতে চাইছে বলেও চিঠিতে লিখলেন তিনি। আর সে চিঠি পৌঁছে দিতে গিয়ে মৃত বিধায়কের তত্ত্বাবধানে থাকা মিনি ব্যাঙ্কের আর্থিক গরমিলের একটি হিসাবও রাষ্ট্রপতিকে জানিয়ে এলেন রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।

Advertisement

বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে চিঠি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাতে তুলে দিয়েছেন ডেরেক, তাতে হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘‘ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানিয়েছে, এটা একটা সম্ভাব্য আত্মহত্যার ঘটনা এবং স্থানীয় আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে এর যোগ থাকতে পারে।’’ মৃত বিধায়কের পকেট থেকে সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে এবং তাতে দু’জনের নাম মিলেছে বলে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন রাষ্ট্রপতিকে। যে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে এই মৃত্যুর যোগ থাকতে পারে বলে পুলিশ মনে করছে, সুইসাইড নোটে নাম থাকা দুই ব্যক্তি সেই লেনেদের সঙ্গেই যুক্ত বলে অভিযোগ— চিঠিতে এমনই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মঙ্গলবার বিজেপির প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছিল বিধায়কের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবি করে। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ একটি খুনকে আত্মহত্যা হিসেবে দেখাতে চাইছে বলে রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছিলেন ওই প্রতিনিধি দলের সদস্য কৈলাস বিজয়বর্গীয়, বাবুল সুপ্রিয়, স্বপন দাশগুপ্ত, অরবিন্দ মেনন এবং রাজু বিস্তা। রাজ্য পুলিশ বা সিআইডি-কে দিয়ে নয়, সিবিআই-কে দিয়ে এই মৃত্যুর তদন্ত করানোর দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। রাজনৈতিক হিংসা পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ বাড়ছে এবং পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হোক— এই দাবিও কোবিন্দের সামনে মঙ্গলবার পেশ করেন বিজেপি নেতারা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘ঝুঁকি বাড়ছে’, করোনা নিয়ে রাজ্যকে একগুচ্ছ পরামর্শ অভিজিৎদের

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার যে চিঠি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠালেন, তাতে বিজেপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ওই সাক্ষাতের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। বিজেপির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির যে বৈঠক হয়ছে, তাতে রাষ্ট্রপতিকে বিজেপি বিকৃত তথ্য দিয়ে থাকতে পারে— চিঠির শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী এ কথা লিখেছেন। আর বিধায়কের মৃত্যু সম্পর্কে রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য জানানোর পরে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, বিজেপি রাজনৈতিক হত্যা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও এটা আসলে তেমন কোনও ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না।

রামনাথ কোবিন্দের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছে দেওয়ার পরে বাইরে এসে ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর ২৫ মিনিট কথা হয়েছে। হেমতাবাদের ঘটনা এবং তার প্রেক্ষিতে বিজেপির ‘অপপ্রচার’ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে তিনি বিশদ তথ্য দিয়েছেন বলে ডেরেক জানান। মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতে যে আর্থিক লেনদেনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সম্পর্কেও রাষ্ট্রপতিকে বিশদে জানিয়েছেন ডেরেক। তৃণমূল সূত্রে এ দিন জানানো হয়েছে যে, ‘বরাবর বালিয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি স্থানীয় ব্যাঙ্কের নির্বাচিত সম্পাদক ছিলেন হেমতাবাদের মৃত বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়। ওই মিনি ব্যাঙ্কে মোট ৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা জমা ছিল, যার মধ্যে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ঋণ হিসেবে বাজারে দেওয়া হয়েছে— কোঅপারেটিভ সোসাইটির অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রারকে উদ্ধৃত করে করে এমনটাই জানিয়েছে তৃণমূল। বাকি ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার কোনও খোঁজ নেই বলেও জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে পাশের হারে রেকর্ড, প্রথম পূর্ব বর্ধমানের অরিত্র পাল

ডেরেক ও’ব্রায়েন এ দিন আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন যে, এই আর্থিক অসঙ্গতি এবং তার সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথ রায়ের নাম জড়িয়ে থাকার বিষয়টি রাষ্ট্রপতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। রাজ্যের তদন্তকারীরা সব দিক খতিয়ে দেখছেন বলেও কোবিন্দকে আশ্বস্ত করে এসেছেন ডেরেক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement