মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
দু’দফার মুখ্যমন্ত্রিত্বের ৬ বছরে বিধানসভায় প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি খুব আগ্রহী, এমন কথা শোনা যায়নি।
এ বার রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতালের
খরচের বিল ঘিরে যখন তুলকালাম চলছে, তখন স্বাস্থ্য নিয়ে বিধায়কদের প্রশ্নের জবাব দিতে চেয়েছিলেন তিনিই। বিধানসভায় আজ, শুক্রবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! কিন্তু উত্তরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সামনে যে প্রশ্নের থালি সাজানো হয়েছে, তাকে পর্বতের মূষিক প্রসবই বলছে বিরোধীরা!
একে তো বিরোধীদের কোনও প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য রাখা নেই। মহার্ঘ সুযোগ শুধুই শাসক পক্ষের বিধায়কদের জন্য! তাঁরা এমনিতেই মুখ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চান না। তার উপরে বিশেষ অনুরোধ পেয়েও তালিকায় তারকা-চিহ্নিত হয়ে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্ন স্থান পেয়েছে সাকুল্যে দু’টি। একটি প্রশ্ন, সকলের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে? আর দ্বিতীয় প্রশ্ন, রাজ্যের কোন কোন সরকারি হাসপাতালে সি টি স্ক্যান ও এমআরআইয়ের সুবিধা আছে? বিধানসভার অলিন্দে ও বিধায়ক মহলে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই গুঞ্জন, কোন হাসপাতালে সি টি স্ক্যান হয় জাতীয় প্রশ্নের জন্য কি মুখ্যমন্ত্রীকে খুব দরকার? পরিষেবার বিষয়েই এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না?
তৃণমূলের এক বিধায়ক বলছেন, ‘‘যা প্রশ্ন জমা পড়েছে, তার থেকেই বাছাই করতে হবে। বিধায়কেরা যেমন প্রশ্ন তৈরি করেছেন, তেমনই সভায় আসবে। এখানে অন্য কী করার আছে?’’ বিরোধী এক বাম-বিধায়কের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘আমাদের সুযোগ দিলে ভাল প্রশ্ন করতাম!’’ তবে বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, লিখিত তালিকায় তারকা-চিহ্নিত প্রশ্ন আছে। মুখ্যমন্ত্রী যখন জবাব দেবেন, তার সূত্র ধরে আরও প্রশ্নের সুযোগ বিধায়কেরা পাবেন। বিরোধী শিবির থেকে কটাক্ষ, নিখরচায় চিকিৎসা নিয়ে জবাব দিতে উঠলে মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য দফতরের সব কাজই বলে দিতে পারেন!
তৃণমূলের দুই বিধায়ক অসিত মজুমদার ও কালীপদ মণ্ডলের দু’টি স্বাস্থ্যের প্রশ্ন ছাড়াও কল্লোল খাঁর একটি সওয়াল আছে তালিকা অনুযায়ী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মন্ত্রী হিসাবে মমতার কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, পাঁচ বছরে ‘তাঁতসাথী’ প্রকল্পের জেলাওয়াড়ি হিসাব কী? বিরোধী শিবির থেকে প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রীকে সভায় পেয়ে ‘তাঁতসাথী’ জানতে চাওয়া কি সুযোগের সদ্ব্যবহার? পুলিশ, সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা উন্নয়নের মতো দফতরকে ছোঁয়াই গেল না? রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন করা যাচ্ছে না! পরিষদীয় দফতর সূত্রে যদিও পাল্টা বলা হচ্ছে, ‘‘পুলিশ বাজেটে তো বিরোধীরা বলবেন। এত তাড়াহুড়ো কীসের?’’