ডায়ালগই ডায়লেমার কারণ। তাঁর মারকাটারি সংলাপই এখন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীর। অথচ, বাংলা সিনেমার চমকে দেওয়া সংলাপেই তিনি গুরু থেকে মহাগুরু।
বাংলার বিধানসভা ভোটের আগে বাংলার ছেলে মিঠুনের সংলাপের শরণাপন্ন হয়েছিল বিজেপিও। বিজেপির হয়ে মিঠুনের সভাগুলির মূল আকর্ষণই ছিল তাঁর সংলাপ।
ব্রিগেড থেকে শুরু করে জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সেই সব সভায় মিঠুনের সংলাপ প্রচুর হাততালি কুড়িয়েছিল।
সভায় কখনও নিজেকে ‘জাত গোখরো’ কখনও ‘ফাটাকেষ্ট’ বলে পরিচয় দিয়েছেন মিঠুন। দর্শক আনন্দও পেয়েছেন তাতে।
তবে মিঠুনের সংলাপ এর বেশি সাহায্য করতে পারেনি। বরং ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পর এই সংলাপের জন্যই অভিযোগ দায়ের হয় মিঠুনের বিরুদ্ধে।
২ মে ভোটের ফল প্রকাশ হওয়ার ঠিক ৪ দিন পর মিঠুনের বিরুদ্ধে মানিকতলা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। ৬ মে রাতে মিঠুনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ করে সিটিজেনস ফোরাম নামে তৃণমূল প্রভাবিত একটি সংগঠন। অভিযোগ ছিল, ভোটের প্রচারে লাগাতার ‘উস্কানিমূলক’ মন্তব্য করে গিয়েছেন মিঠুন।
মামলাটি খারিজ করতে চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মহাগুরু। হাই কোর্ট তাঁকে তদন্তে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয়।
বুধবার, ১৬ জুন ছিল মিঠুনের জন্মদিন। সেদিনও পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয় মিঠুনকে। মানিকতলা থানার আধিকারিকরা তাঁর কাছে জানতে চান, তিনি কি টাকার বিনিময়ে বিজেপির হয়ে প্রচার করেছিলেন? যে সংলাপগুলি মিঠুন বিজেপির হয়ে ভোটের প্রচার সভায় বলেছিলেন, তার পিছনে কারও নির্দেশ ছিল কি না, তা-ও জানতে চেয়েছে পুলিশ।
মিঠুন অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি টাকা নেননি। বিজেপির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই প্রচার করেছেন। ফিল্মের সংলাপ বলেছেন, কারণ ভেবেছিলেন, সেগুলো দর্শকদের শুনতে ভাল লাগবে।
ঠিক কী কী সংলাপ বলেছিলেন মিঠুন বাংলায় ভোটের প্রচারে? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
শুরুটা হয়েছিল ব্রিগেডের মঞ্চে। সে দিন তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল তাঁর অভিনীত ছবি ‘এমএলএ ফাটাকেষ্ট’-র একটি জনপ্রিয় সংলাপ। মিঠুন বলেন, ‘‘আমি জানি আপনারা আমার সংলাপ শুনতে চান। আর আপনারা অপেক্ষা করছেন এটার জন্য— মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে।’’
তার পরই মিঠুন বলেন, ‘‘কিন্তু আজ আমি একটা নতুন ডায়ালগ বলব। আমি মিঠুন চক্রবর্তী। আমি যা বলি, তাই করি। ডায়লগটা হল— আমি জলঢোঁড়াও নই, বেলেবোরাও নই। আমি একটা কোবরা। আমি জাতগোখরো। এক ছোবলেই ছবি।’’
এখানেই থামেননি। মিঠুন বলেছিলেন, ‘‘আমি এখানেই থাকব। আপনাদের মধ্যেই থাকব। তাই ডায়ালগটা ভুলবেন না।’’
ব্রিগেডে বিজেপি সমাবেশে নিজের পরিচিতি মিঠুন দিয়েছিলেন বেশ নাটকীয় ভাবেই। বলেছিলেন, ‘‘গরিব পরিবারে জন্ম। বস্তিতে বড় হয়েছি। কলকাতার যে কানাগলিতে থাকতাম, সেখানে চিঠি দিতে এসে রাস্তা হারিয়ে ফেলত পোস্টম্যান। প্রধানমন্ত্রীকে বাংলায় স্বাগত জানাতে পেরে আমার মনে হচ্ছে, স্বপ্ন সত্যি হল।’’
পরে বাংলার যেখানেই ভোট প্রচারে গিয়েছেন, সংলাপের ভাঁড়ারে টান পড়েনি। মিঠুনের সভা মানেই নতুন নতুন সংলাপ, বুঝে গিয়েছিলেন দর্শকরা। সংলাপের তোড়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত 'দুয়ারে রেশন' প্রকল্পকে ‘ললিপপ’ বলেও কটাক্ষ করেন মিঠুন।
জলপাইগুড়িতে মিঠুন বলেন,
পরে আরও একটি সভায় মিঠুন বলেছিলেন,
বাংলা সিনেমাতেও মিঠুনের এমন অজস্র সংলাপ এখনও জনপ্রিয়। একটি ছবিতে মিঠুন অভিনীত চরিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি খবর দেখি না, খবর পড়ি না, খবর তৈরি করি।’’ আরেকটি জনপ্রিয় সংলাপ, ‘‘আমি যেখানে পা রাখি সেই জায়গাটা গরম হয়, তার পর আগুন জ্বলে, শেষ হয় ছাই হয়ে।
এমন সংলাপও আছে— ‘‘আমি কুকুরকে বিস্কুট, বেড়ালকে দুধ আর ক্রিমিনালকে গুলি খাওয়াই। তাই তারা আমার পায়ের কাছে পড়ে থাকে।’’
'জাত গোখরো' ব্রিগেডের সমাবেশের জন্যই তৈরি। তবে, সাপ আর ছোবল নিয়ে সিনেমার সংলাপও ছিল মহাগুরুর— ‘‘সাপের ছোবল আর চিতার খাবল যেখানেই পড়বে, আড়াই কেজি মাংস তুলে নেবে।’’
তবে বাংলার ভোটের আগে মিঠুনের ‘জাত গোখরোর ছোবল’ জনপ্রিয়তায় পুরনো সব সংলাপকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। এখন অবশ্য সেই 'ছোবলে'র জ্বালায় জ্বলতে হচ্ছে তাঁকেই।