Age Mistake in Ration Card

ছেলে বাবার চেয়ে বড় ৭৮ বছরের, মায়ের বয়স ৪০! ছেলের বয়স কত? অঙ্ক কষল নদিয়ার রেশন কার্ড

বেঁচে থাকলে তিনিও এমন অঙ্ক মিলিয়ে দিতে পারতেন না। পিতা-পুত্রের বয়সের হিসেবের নানা জটিল অঙ্কের কথা মনে পড়লেই যাঁর কথা স্মরণে আসে, সেই কেশবচন্দ্র নাগও পারতেন না।

Advertisement

প্রণয় ঘোষ

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪১
Share:

অঙ্ক কী কঠিন। উত্তরও অজনা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কারও কাছে সোজা আর মজা। কিন্তু অনেকের কাছেই মূর্তিমান আতঙ্ক। পিতা, পুত্রের বয়স কষে বার করার সেই অঙ্কই যেন জীবন্ত গোলকধাঁধাঁ হয়ে প্রবেশ করেছে নদিয়ার কর্মকার পরিবারে। এ পরিবারে বাবার বয়স ৪৫, মায়ের ৪০ আর ছেলের ১২৩। অন্তত সরকারি খাতায়কলমে এটাই এখন ‘বাস্তব’। দিনের পর দিন কেটে গেলেও এমন অসম্ভব অঙ্ক কোনও এক অজানা কারণে কিছুতেই মিলিয়ে দিতে পারছে না প্রশাসন। ফলে বেশ বিপাকে পরিযায়ী শ্রমিক পরিবার।

Advertisement

বেঁচে থাকলে তিনিও এমন অঙ্ক মিলিয়ে দিতে পারতেন না। তেল মাখানো বাঁশ বেয়ে বাঁদরের ওঠানামা, ফুটো বালতিতে জল ভরা কিংবা পিতা-পুত্রের বয়সের হিসেবের নানা জটিল অঙ্কের কথা মনে পড়লেই যাঁর কথা স্মরণে আসে, তিনি কেশবচন্দ্র নাগ। তবে পরিচিতি বেশি কেসি নাগ হিসাবেই। তিনি জন্মেছিলেন ১৮৯৩ সালে। আর যার বয়সের অঙ্ক নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তার জন্ম ২০০৯ সালে। কিন্তু সরকারি ভুলে ছোট্ট সূর্য কেসি নাগের চেয়ে মাত্র সাত বছরের ছোট। রেশন কার্ডে জন্মসাল ১৯০০ বলে ছাপা রয়েছে। বয়সের গোলমালে ১৪-র কিশোর সূর্য বেশ কিছু দিন ধরে মায়ের কাছে থাকতে পারে না। মায়ের আদর পায় না ওর ছোট ভাইটাও।

গল্পটা গোড়া থেকে শুরু করা দরকার। আদতে শান্তিপুরের বাবলা এলাকার বাসিন্দা হলেও কর্মকার পরিবার এখন কাজের সূত্রে থাকেন মহারাষ্ট্রে। সেখানেই রয়েছেন পরিবারের কর্তা সাধন কর্মকার। যাঁর বয়স ৪৫ বছর। তাঁরই পুত্র সূর্যের ‘বয়স ১২৩’। সেটা ঠিক করতে স্বামী, ছেলে, সংসার ছেড়ে দিনের পর দিন শান্তিপুরে পড়ে রয়েছেন সূর্যের মা শ্রাবণী। এ দফতর, সে দফতর করে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু অঙ্ক মিলছে না। ছেলের বেড়ে যাওয়া বয়সও কমছে না।

Advertisement

স্বামী, স্ত্রী এবং দুই পুত্র নিয়ে পরিবারে চার জন। ঘটনাচক্রে চার জনেরই সরকারি নথিতে নানা রকম ভুল। সূর্যের জন্ম ২০০৯ সালে। কিন্তু রেশন কার্ডে হয়ে রয়েছে ১৯০০ সাল। সেই অনুযায়ী বয়স এখন ১২৩। আবার সূর্যের ভাই সুব্রতর নাম বদলে হয়ে রয়েছে সুকান্ত। তাদের বাবা সাধনের আবার ঠিকানাটা ভুল। আর মা শ্রাবণী আধার কার্ডের দৌলতে হয়ে গিয়েছেন শর্বরী কর্মকার।

এ সব নথি ঠিকঠাক করতেই বছর খানেক আগে মহারাষ্ট্র থেকে কাজ ও সংসার ছেড়ে শান্তিপুরে আসনে পেশায় শ্রমিক শ্রাবণী। শুরু হয় তাঁর নথি রদবদলের লড়াই। কিন্তু এক ছেলের বয়স, স্বামীর ঠিকানা, নিজের ও ছোট ছেলের নাম ঠিকঠাক করে উঠতে পারেননি এখনও।

সূর্য কর্মকারের রেশন কার্ড। — নিজস্ব চিত্র।

একটা সময় শান্তিপুরে থেকে তাঁতের কাজ করতেন সাধন ও শ্রাবণী। কিন্তু তাঁতের কাজে এখন আর ভাতের চিন্তা মেটে না। ফলে সপরিবারে চলে যান মহারাষ্ট্রে। সেখানে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে বিভিন্ন রকমের কাজ করেন। কিন্তু এখন সেই কাজটাও করতে পারছেন না শ্রাবণী। এখন কাজ হয়েছে বিভিন্ন দফতরে ঘুরে ঘুরে নাম, ঠিকানা, বয়স ঠিক করানোর চেষ্টা। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘‘যখনই কিছুর জন্য আবেদন করেছি, সঙ্গে দরকারি সব নথি জমা দিয়েছি। তা সত্ত্বেও এমন সব ভুল কী করে হল সেটা বুঝতে পারছি না। আর এখনও নানা সরকারি নথি জমা দিয়েও সংশোধন হচ্ছে না।’’ ছেলের আর নিজের রেশন কার্ড দেখিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘‘আপনিই বলুন না, আমার বয়স ৪০ হলে আমার ছেলের কী করে ১২৩ হতে পারে?’’

এই প্রশ্ন নিয়েই আনন্দবাজার অনলাইন সরাসরি যোগাযোগ করেছিল নদিয়ার জেলাশাসক শশাঙ্ক শেট্টির সঙ্গে। শশাঙ্ক বললেন, ‘‘বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে এবং সরকারি কোন কোন দফতরে তিনি আবেদন করেছিলেন, কেন কাজ হয়নি, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement