মহিলা কামরায় ঢুকে হামলা-ছিনতাই, অবাধে দাপাল দুষ্কৃতীরা

দফায় দফায় রেল অবরোধ, ভোগান্তি, মহিলা কামরায় ঢুকে হামলা, ছিনতাই, মারধর— বাদ গেল না কিছুই। আর সে সব সামলানোর বদলে একটা দীর্ঘ সময় ধরে রেল এবং প্রশাসনের নির্বিকার থাকাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশঙ্কার দিকটাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ১৬:৪০
Share:

দফায় দফায় রেল অবরোধ, ভোগান্তি, মহিলা কামরায় ঢুকে হামলা, ছিনতাই, মারধর— বাদ গেল না কিছুই। আর সে সব সামলানোর বদলে একটা দীর্ঘ সময় ধরে রেল এবং প্রশাসনের নির্বিকার থাকাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশঙ্কার দিকটাকে।

Advertisement

বুধবার সকাল থেকেই শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে একের পর এক ট্রেন অবরোধ করা হয়। কোথাও মহিলা যাত্রীরা অবরোধ করে মাতৃভূমি লোকালে পুরুয যাত্রীদের উঠতে না দেওয়ার দাবি জানালেন। কোথাও পুরুষ যাত্রীরা অবরোধ করলেন গোটা মাতৃভূমি লোকালটিকে তুলে দেওয়ার দাবিতে। কোথাও বা স্রেফ গুজোবের উপর ভিত্তি করে আটকে দেওয়া হল ট্রেন। আর এ সবের ভিতরেই মহিলা কামরায় উঠে তাঁদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠল। মারধর করা হল মহিলা যাত্রীদের। মোবাইল ঘড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হল। পাল্টা পুরুষ যাত্রীরাও অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদের উপর চড়াও হয়ে মহিলারা চড়-থাপ্পড় মেরেছেন। পরিস্থিতির কথা জানিয়ে যাত্রীদের একাংশ ফোন করেছিলেন জিআরপিতে। কিন্তু অভিযোগ, খবর পেয়ে তাদের মধ্যেও দেখা গিয়েছে গয়ংগচ্ছ ভাব।

বিরাটিতে তখন অবরোধ চলছে। মহিলা কামরায় বসে ছিলেন কয়েক জন তরুণী। ট্রেন চললে শিয়ালদহ যাবেন বলে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাত্ই তাঁদের উদ্দেশে ধেয়ে আসে এক দল লোক। তাঁরা এসেই ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। বাধা দিতে গেলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। কয়েক জন মোবাইল বের করে ভিডিও তুলতে গেলে তাঁদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। এর পরই ওই তরুণীদের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। কোনও রকমে তাঁরা ধাক্কাধাক্কি করতে করতে প্ল্যাটফর্মে নেমে আসেন। অভিযোগ জানান জিআরপি-র কাছে।

Advertisement

বিরাটিতেই কয়েকজন মহিলা যাত্রীকে হাত ধরে টানতে টানতে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাগ ধরে টানার পাশাপাশি কোনও কোনও মহিলা যাত্রীর শাড়ি, সালওয়ারের ওড়না ধরেও টান মারা হয়। তখন, গোটা কামরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন কয়েক জন পুরুষ। অদিতি রায় নামের এক যাত্রীর অভিযোগ, আক্রমণকারী সকলেরই বয়স ত্রিশের মধ্যে। কোনও একজন পুরুষ যাত্রীকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এটা রটতেই তাণ্ডব আরও বেড়ে যায়।

বামনগাছিতে তখন অবরোধ চলছে। লাইনের উপর অবরোধকারীদের সঙ্গেই ছিলেন অশোকনগরের কল্যাণী দত্ত। হঠাত্ই তাঁর মাথার পিছন দিকটায় উড়ে আসে একটি পাথর। সঙ্গে সঙ্গে হাত চাপা দিয়ে বসে পড়েন তিনি। রক্ত গড়াতে শুরু করে। অভিযোগ প্ল্যাটফর্মের উপর দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ যাত্রীরাই তাঁর দিকে পাথর ছুড়ে মেরেছে। অলি মিস্ত্রি নামের এক মহিলা যাত্রীর অভিযোগ, তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করেছে পুরুষ যাত্রীরা। মাকে নিয়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন তিনি। অন্য দিকে রাজা বিশ্বাস নামে এক পুরুষ যাত্রীর অভিযোগ, রেল অবরোধের প্রতিবাদে তিনি অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁর গালে থাপ্পড় মারেন এক মহিলা যাত্রী।

তবে বিভিন্ন স্টেশনে যখন এই সব ঘটনা ঘটছে, তখন জিআরপিতে একাধিক বার ফোন করেন যাত্রীরা। সাড়া মিললেও সাহায়্য তেমন মেলেনি। শুধুই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এমনকী দত্তপুকুর, বামনগাছি, মধ্যমগ্রাম, বিরাটির গণ্ডগোল সামলাতে নিধিরাম সর্দারের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বারাসত জিআরপির পুলিশ কর্মীদের। সঙ্গে দত্তপুকুর থানার পুলিশ। তাও ঘটনা শুরু হওয়ার প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বাদে। তত ক্ষণে যা হওয়ার তাই হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement