ফাইল চিত্র।
সফরের উদ্দেশ্য, একশো দিনের কাজ প্রকল্পের অগ্রগতি, আবাস ও সড়ক যোজনার কাজের মান ইত্যাদি খতিয়ে দেখা এবং আবাস যোজনার মতো কিছু প্রকল্পের নাম বদল সংক্রান্ত বিতর্ক মাঠে নেমে বুঝে নেওয়া। কিন্তু বিভিন্ন কেন্দ্রীয় দলের পূর্ববর্তী পরিদর্শনের সঙ্গে এ বারের সফরের পার্থক্য অনেক। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা আগের মতো জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত পথে নির্দিষ্ট এলাকায় না-ও যেতে পারেন, আচমকা যে-কোনও রাস্তায় ঘুরে যেতে পারে তাঁদের গাড়ি। রাজ্য প্রশাসনের অন্দরের পর্যবেক্ষণ, আগের বিভিন্ন সফরের থেকে কেন্দ্রীয় দলের এ বারের সফরের গুরুত্ব এবং চরিত্র দু’টিই তাই অনেকটা আলাদা।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অফিসারেরা সোমবার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে শুরু করেছেন। আবাস যোজনার নাম বদল নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সারবত্তা যাচাই করা তাঁদের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য। প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, আগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের তুলনায় এ বারের দলের সফর পদ্ধতিতে বেশ কিছুটা বদল এসেছে। জেলা প্রশাসনের ঠিক করে দেওয়া এলাকায় না-ঘুরে ওঁরা এ বার গন্তব্য স্থির করতে চাইছেন নিজেরাই।
জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, আগে কোনও কেন্দ্রীয় দল পরিদর্শনে এলে আগে থেকে স্থির করা কিছু এলাকায় নিয়ে যাওয়া হত তাদের। কিন্তু এ বার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা আসার আগেই জেলা প্রশাসনগুলির কাছে বার্তা গিয়েছে, গন্তব্য স্থির করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁরা নিজেরাই তা ঠিক করবেন। সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, ‘সাজানো-গোছানো’ কাজ দেখার বদলে আচমকা কোনও জায়গায় গিয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে কেন্দ্রের অফিসারেরা বেশি আগ্রহী। কারণ, এ বার তিন-চারটি প্রকল্পের কাজ দেখার কথা থাকলেও নাম-বদল বিতর্ক বুঝতেই এসেছেন তাঁরা। তাই তাঁদের ঘোরাফেরা হবে সেই বিতর্ক-কেন্দ্রিক।
কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে আসার অনেক আগে থেকেই অবশ্য জেলায় জেলায় ‘বাংলা আবাস যোজনা’র বদলে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ লেখার কাজ চলছে। কারণ, নাম বদলের অভিযোগেই আটকে রয়েছে এই প্রকল্পের টাকা। এ বারের কেন্দ্রীয় দলের রিপোর্টের সঙ্গে টাকা আটকে থাকা বা না-থাকা অনেকটাই নির্ভর করছে। ফলে অস্থায়ী স্টিকারের বদলে পাকাপাকি ভাবে রং দিতে আবাস যোজনার ‘আসল’ নাম লেখা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় দলের এ বারের বঙ্গ সফরকে কিছুটা ভিন্ন নজরে দেখতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন। সংশ্লিষ্টদের অনেকেই জানাচ্ছেন, আগে কেন্দ্রীয় দল এলেও তাদের পরিদর্শন সীমাবদ্ধ থাকত তিন-চারটি জেলায়। এ বার কিন্তু একসঙ্গে ১৫টি জেলায় পরিদর্শন হবে। আগে বেশি দিন ধরে পরিদর্শনের কর্মসূচি থাকত না কেন্দ্রীয় দলের। এ বার টানা চার দিন ঘুরবেন কেন্দ্রের অফিসারেরা। প্রতিটি জেলার জন্য পৃথক দল গড়েছে মন্ত্রক। কোন কোন ব্লকের ক’টি পঞ্চায়েত এলাকায় তাদের গাড়ি পৌঁছবে, সেই তথ্য জেলা প্রশাসনগুলিকে দেওয়া হয়নি। “শুধু বলা হয়েছে, প্রতিনিধিরা আসবেন, বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করবেন। তাঁদের থাকা ও গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। যা জানতে চাইবেন, দিতে হবে সেই তথ্য,” বলেন এক জেলা-কর্তা।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে জেলা-কর্তাদের। যে-কোনও প্রশ্নের ঠিক উত্তর যাতে তৈরি থাকে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেরই আশা, এই কেন্দ্রীয় সফরের পরে আটকে থাকা টাকা ছাড়ার ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপই করবে মন্ত্রক।