কর্মীদের সভা, বর্ধমানের টাউনহলে। নিজস্ব চিত্র
মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ প্রশ্ন করলেন, ‘সরকারি প্রকল্পগুলির কথা কত জন জানেন?’ হলে টুঁ শব্দটি নেই। দৃশ্যতই বিরক্ত মন্ত্রী মঞ্চে পাশেই থাকা বর্ধমান পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর মমতা রায়ের কাছে এ বার কয়েকটি প্রকল্পের নাম করে সেগুলির বিষয়ে জানতে চাইলেন। উত্তর মিলল, ‘জানি না’। মঙ্গলবার বর্ধমানের টাউন হলে আয়োজিত তৃণমূলের মহিলা কর্মীদের সভায় এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে।
এ দিন তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের তরফে জেলা স্তরের ওই সভাটি আয়োজিত হয়। সেখানে ছিলেন, জেলার পাঁচটি পুরসভার মহিলাকর্মীরা। ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা সংগঠনের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বিধায়ক স্মিতা বক্সী, সংগঠনের জেলা সভানেত্রী শিখা দত্ত সেনগুপ্ত প্রমুখ।
সভার শুরুতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বপনবাবু মহিলাকর্মীদের এলাকাবাসীর কাছে সরকারি প্রকল্পগুলির প্রচার করার জন্য বলেন। এর পরেই তিনি ওই প্রশ্ন করেন। মমতাদেবীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দ স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প (এসভিএসকেপি), মাতৃ যোজনা, কিশোরী শক্তি যোজনা, নগর জীবিকা মিশন প্রকল্প কী?’’ মমতাদেবীর উত্তর, ‘‘বিশদে কিছু জানি না।’’ এর পরে সভায় হাসির রোল ওঠে। সকলকে থামিয়ে মন্ত্রী স্বপনবাবু বলেন, ‘‘মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত প্রকল্প করছেন, কিন্তু আপনারা খবর রাখছেন না, এটা অপরাধ।’’ তাঁর আরও সংযোজন: ‘‘উনি (মমতাদেবী) হয়তো বলতে পারেননি, কিন্তু অনেকেই হয়তো এটা জানেন না। সকলে জেনে নিন।’’
এর পরেই চন্দ্রিমাদেবী চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে স্বপনবাবুর হাতে একটি বই দেন। মাইক নিয়ে তিনি জানান, ওই বইতে সমস্ত সরকারি প্রকল্পগুলির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। সকলকে বইটি পড়ে দেখতেও অনুরোধ করেন তিনি। চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ‘‘কর্মিসভায় অনেকের হাতেই খাতা-পেন নেই। এটা ঠিক নয়। যাঁরা জানেন না, জেনে নিন।’’ কিন্তু এর পরেই কিছু কর্মীকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘‘সরকারি সুযোগ-সুবিধা আমাদের জানানো হয় না।’’ তখন চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ‘‘আপনার দায়িত্ব জেনে নেওয়া। আমাদের দায়িত্ব জানিয়ে দেওয়া।’’ বিষয়টি নিয়ে পরে মন্তব্য করতে চাননি মমতাদেবী।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এসভিএসকেপি প্রকল্পে ১৮ থেকে ৪৫ বছরের বেকার যুবক বা যুবতী, মাসে আয় ১৫ হাজার টাকার নীচে হলে সর্বাধিক দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যাঙ্কে গ্রহণযোগ্য কোনও প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারেন। আবার মেয়েদের অপুষ্টি দূরীকরণের জন্য রয়েছে ‘কিশোরী শক্তি যোজনা’।
কিন্তু এমন নানা প্রকল্পের বিষয়ে মহিলা কর্মীরা আদৌ সচেতনতা কি না, এই ঘটনায় সে প্রশ্নই উঠেছে। সে প্রসঙ্গে শিখাদেবী অবশ্য বলেন, ‘‘মন্ত্রীর নির্দেশ মতো সরকারি প্রকল্পগুলি নিয়ে প্রচার চালানো হবে।’’