পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
টানা প্রশ্ন-পর্বের দিনরাত্রি শেষে শনিবার সকালে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ পার্থের নাকতলার বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যায় ইডির একটি দল। সারা দিন তো বটেই, রাতভর মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
শুক্রবার সাতসকালে নাকতলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দরজায় হাজির হয়। সকালে ঘুম থেকে তুলে দফায় দফায় চলে জিজ্ঞাসাবাদ। সারা রাত ইডির আধিকারিকেরা মন্ত্রীর বাড়িতে ছিলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় মন্ত্রীর বাড়ি। সূত্রের খবর, টানা জিজ্ঞাসাবাদের মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন পার্থ। দু’বার তাঁর বাড়িতে পৌঁছন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তাতেও প্রশ্ন-পর্ব থামেনি।
একই সঙ্গে ইডির দাবি, দক্ষিণ কলকাতায় পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা নগদ পাওয়া গিয়েছে। দুবস্তায় ভরা ছিল ২০০০ এবং ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিল। ওই বাড়ি থেকে ২০টি মোবাইল ফোনও পাওয়া গিয়েছে বলে ইডির দাবি। যে নগদ উদ্ধার হয়েছে, তা ব্যাঙ্ককর্মীদের দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে শনিবার সকাল পর্যন্ত গোনার কাজ চলেছে। ইডি সূত্রের খবর, ওই টাকা স্কুলে বেআইনি নিয়োগে নেওয়া ঘুষের অংশ বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে তারা।
ইডির দাবি, প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে ও সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন জানিয়েছেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশেই সমস্ত নিয়োগ করা হয়েছিল। উনিই নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে নথি সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ করে তা যাচাই করা হয় বলে ইডি সূত্রের খবর। কোনও রকম তলবি নোটিস ছাড়াই শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় পার্থকে ঘুম থেকে তুলে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। নাকতলার বাড়িতে পৌঁছনোর পরেই মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী ও দেহরক্ষীদের মোবাইল বন্ধ করার নির্দেশ দেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রের দাবি, একই নির্দেশ দেওয়া হয় পার্থকেও। দুপুরে দু’জন আইনজীবীকে বাড়িতে ডেকে পাঠান পার্থ। তবে সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তাঁদের হাজির থাকার অনুমতি দেননি তদন্তকারীরা। ইডি সূত্র জানাচ্ছে, দুপুরে পুলিশের সঙ্গে এসে পার্থের পারিবারিক চিকিৎসক তদন্তকারীদের সামনেই তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করেন। পরে এসএসকেএম থেকে তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও মন্ত্রীকে দেখে যান। তার পরেও চলে জিজ্ঞাসাবাদ।
রাতভর চলে সেই প্রশ্ন-পর্ব। সেই পর্ব মিটতেই শনিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে পার্থকে।