২৫টি ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ ৩৭টি, গরিবের বাড়ি তৈরিতে অসন্তোষ

গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির প্রকল্প ঘিরে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে মেদিনীপুর পুর-এলাকায়। চলতি বছরের গোড়ায় ঠিক হয়েছিল, ‘ইন্টিগ্রেটেড হাউসিং অ্যান্ড স্লাম ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (আইএইচএসডিপি) নামে ওই প্রকল্পে পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডে আড়াইশোটিরও বেশি বাড়ি তৈরি করা হবে। সেই মতো প্রত্যেক কাউন্সিলরের কাছে ১০ জনের নামের তালিকা চাওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০০:০৭
Share:

গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির প্রকল্প ঘিরে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে মেদিনীপুর পুর-এলাকায়।

Advertisement

চলতি বছরের গোড়ায় ঠিক হয়েছিল, ‘ইন্টিগ্রেটেড হাউসিং অ্যান্ড স্লাম ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (আইএইচএসডিপি) নামে ওই প্রকল্পে পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডে আড়াইশোটিরও বেশি বাড়ি তৈরি করা হবে। সেই মতো প্রত্যেক কাউন্সিলরের কাছে ১০ জনের নামের তালিকা চাওয়া হয়। সঙ্গে জমা দিতে বলা হয় আবেদনকারীদের সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রয়োজনীয় নথি। অনেকে তা জমাও দেন। শেষমেশ অবশ্য দেখা গেল, ২৫টি ওয়ার্ডের জন্য মাত্র ৩৭টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন মিলেছে। আর তাতেই ঘনিয়েছে ক্ষোভ।

তড়িঘড়ি পুর-পারিষদের বৈঠক ডেকে ওয়ার্ডপিছু বাড়ি ভাগ করে দেওয়ায় অসন্তোষের মাত্রা আরও বেড়েছে। কোনও ওয়ার্ড পেয়েছে একটি বাড়ি, কোনও ওয়ার্ড দু’টি। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা ‘সঙ্কীর্ণ রাজনীতি’ করেছে বলে অভিযোগ বিরোধী-শিবিরের। বেছে বেছে তৃণমূলের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলোকে ২টি করে বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “৫২টি বাড়ি বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিল, ৩৭টি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আরও বাড়ির অনুমোদন মিলবে।” উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস জানান, বাড়ি বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে রাজনীতির অভিযোগ ঠিক নয়। তাঁর মতে, ২৫টি ওয়ার্ডের জন্য ৩৭টি বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। ফলে, ওয়ার্ডপিছু ২টি করে বাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু ওয়ার্ডকে তো একাধিক বাড়ি দিতেই হবে। উপ-পুরপ্রধানের কথায়, “পুর-পারিষদের বৈঠকে আলোচনার প্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হয়েছে। তৃণমূলের ৫ জন কাউন্সিলরও তাঁর ওয়ার্ডের জন্য একটি করে বাড়ি পেয়েছেন।”

Advertisement

পুর-কর্তৃপক্ষের এই ব্যাখ্যায় অবশ্য অসন্তোষ চাপা থাকছে না। কেন বেশি সংখ্যক বাড়ি বরাদ্দ হল না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিরোধীদের অভিযোগ, পুর-কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এই পরিস্থিতি তৈরি হল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তালিকা রাজ্যে পৌঁছলে এত কম সংখ্যক বাড়ি মেদিনীপুরের জন্য বরাদ্দ হত না। শহরের কংগ্রেস কাউন্সিলর সৌমেন খান বলেন, “১০ জনের নামের তালিকা তৈরি করে জমা দিতে বলা হয়েছিল। সেই মতো তালিকা তৈরি করে জমাও দিই। দিন কয়েক আগে জানলাম, ওয়ার্ডের জন্য মাত্র একটি বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে।” তাঁর কথায়, “আমি জেনেছি, মার্চ মাসের মধ্যে পুরো তালিকা পাঠানোর কথা ছিল। পুরসভা থেকে তা পাঠানো হয়নি। তাই মেদিনীপুরের জন্য বরাদ্দ বাড়ি আরামবাগ পুরসভা পেয়েছে।”

পুর-কর্তৃপক্ষের সমালোচনায় সরব হয়েছেন আর এক কংগ্রেস কাউন্সিলর কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যে ১০ জনের নামের তালিকা তৈরি করেছিলাম তাঁরা আশায় ছিলেন। এখন বলা হচ্ছে, ওয়ার্ডের জন্য মাত্র একটিই বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে উদ্যোগী হলে, পরিস্থিতি এমন হত না।” শহরের সিপিএম কাউন্সিলর জয়ন্ত মজুমদারের কথায়, “২৫টি ওয়ার্ডের জন্য ৩৭টি বাড়ি। সংখ্যাটা খুবই কম।”

মেদিনীপুর শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বেশ কয়েকটি বস্তি রয়েছে। সেখানেই মূলত গরিব মানুষের বাস। গরিব মানুষের মাথার উপর পাকা ছাদ তৈরি করে দিতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য সরকার। এ জন্য কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। তারই একটি আইএইচএসডিপি-তে মেদিনীপুর শহরের জন্য ৩৭টি বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, প্রকল্পের জন্য পুরসভাস্তরে কমিটি গড়ে যদি কাজ এগোনোর ভাবনাচিন্তা করা হত, তাহলে আরও দ্রুত গতিতে সব কাজ এগোত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নামের তালিকা রাজ্যে পৌঁছনো সম্ভব হত। উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথবাবুর অবশ্য দাবি, “সময়ের মধ্যে তালিকা না পৌঁছনোয় বরাদ্দ কমে গিয়েছে, এটা ঠিক নয়। রাজ্য থেকে ওয়ার্ডপিছু ১০টি করে নামের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। পরে জানানো হয়, এ বার ৩৭টি বাড়ি বরাদ্দ হচ্ছে। রাজ্য থেকে যেমন নির্দেশ এসেছে, পুরসভা তেমনই কাজ করেছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement