কেশপুরে বামফ্রন্টের মিছিল। ছবিটি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল।
এর আগে বিক্ষিপ্ত ভাবে অঞ্চল স্তরে সভা-মিছিল হয়েছে। কিন্তু, কেশপুরে সিপিএমের জোনাল অফিস বা কেশপুর ব্লকের অর্ন্তগত ১৫টি অঞ্চলের কর্মীদের এনে এই প্রথম কেন্দ্রীয় ভাবে মিছিল করল সিপিএম। তার আগে এক কর্মিসভাও হল। সভা থেকে তৃণমূলকে পরাস্ত করার ডাক দিলেন দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এই কর্মিসভা বানচাল করার চেষ্টা করেও পারেনি। আমাদের বিশ্বাস, আপনাদের এই প্রত্যয়-আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করেই আমরা তৃণমূলকে পরাস্ত করতে পারব। কেশপুর থেকেও বামপ্রার্থীকে জয়যুক্ত করতে পারব।” কর্মিসভা-মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তরুণ রায়, প্রাক্তন মন্ত্রী নন্দরানি ডল, বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই, দলের কেশপুর জোনাল সম্পাদক আহমেদ আলি প্রমুখ। এ ছাড়াও ছিলেন ঘাটালের বামপ্রার্থী তথা সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণাও।
গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে কেশপুর জোনাল এলাকায় সিপিএম রাজনৈতিক ভাবে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। দলের অনেক নেতা-কর্মী মামলায় জড়িয়ে পড়েন। ফলে, সংগঠনে ধস নামে। তরুণ রায়, এন্তাজ আলি, আহমেদ আলির মতো নেতারা জামিনে মুক্ত হওয়ার পরপরই কেশপুরে দলের সংগঠন পুনর্গঠনের কাজে উদ্যোগী হয় সিপিএম। দলীয় নেতৃত্বের দাবি, কেশপুরের পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হবে। রবিবার দীপকবাবুদের বক্তব্যেই ঘুরেফিরে এসেছে এই দাবি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক বলেন, “নজিরবিহীন-প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আমাদের পঞ্চায়েত নির্বাচনের কাজকর্ম করতে হচ্ছে। তবে আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে। আমরা পারব। আমরা জিতব। ওরা (তৃণমূল) পারবে না। ওরা হারবে। শেষ কথা বলবে জনগণই।”
নাম না-করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধে দীপকবাবু বলেন, “ওদের একজনই নেত্রী। নেত্রীর চোখমুখের চেহারা পাল্টে গিয়েছে। ওঁর জনপ্রিয়তা কমছে। তাই সভায় সঙ্গে করে স্টার-সুপারস্টারদের নিয়ে আসছেন। এঁদের ছাড়া সভা জমছে না।” তিনি বলেন, “লোকসভার নির্বাচনেই ওদের একটা ধাক্কা দিতে হবে। কেশপুরের মানুষও ওদের রথকে থমকে দেবে। এক সময় উনি (মুখ্যমন্ত্রী) কেশপুর সিপিএমের শেষপুর হবে বলেছিলেন। তা করতে পারেননি। বরং কেশপুর তৃণমূলেরই শেষপুর হয়ে গিয়েছিল। মানুষ জাগছে। প্রতিরোধ হচ্ছে। তাই এ বারও পারবেন না। এ জেলা বামপন্থী আন্দোলনের দুর্জয় ঘাঁটি ছিল, আছে, থাকবে।”
রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে দীপকবাবু বলেন, “এই সরকার সমাজবিরোধীদের সরকার, দুর্বৃত্তদের সরকার, ডাকাতদের সরকার। এখন রাজ্যে দু’টি খুবই সস্তা। এক, মানুষের জীবন। যে কোনও সময় আপনার উপর হামলা হতে পারে। দুই, নারীর ইজ্জত। যে কোনও সময় মহিলাদের উপর ওরা চড়াও হতে পারে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক বলেন, “আমাদের কিছু ভুল-ত্রুটি ছিল। তার সুযোগ নিয়েই ওরা ক্ষমতায় এসেছে। তবে এখন মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে।”
কর্মীদের সাহস-ধৈর্য্য-আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোনোর পরামর্শ দেন দীপকবাবু। রবিবার বিকেলে সিপিএমের কেশপুর জোনাল কার্যালয় ‘জামশেদ ভবন’-এ কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। কর্মীদের উপস্থিতি ছিল ভালই। সভা শেষে কেশপুর সদরে মিছিল হয়। অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে ছিল বাড়তি পুলিশ বাহিনী।