ভোট-প্রচারের শুরু থেকেই সিপিএম-সহ বিরোধীদলগুলি শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল। শনি ও সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় দুই সিপিএম কর্মী নিহত হওয়ার পর সেই সুর আরও চড়াল বামেরা।
আজ, বুধবার আরামবাগ লোকসভার অর্ন্তগত পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় ভোট রয়েছে। তার আগে সিপিএম-কর্মী খুনে সরাসরি তৃণমূলের দিকে আঙুল ওঠায় অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে বাম-সহ বিরোধীরা চন্দ্রকোনার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে সামনে রেখে সন্ত্রাস-প্রশ্নে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছে। অন্যত্রও এটিকে প্রচারের অন্যতম মুখ্য বিষয় করেছে।
শনিবার বিকেলে সূর্যকান্ত মিশ্রের সভা শেষে চন্দ্রকোনায় বাড়ি ফেরার পথে তরুণ সিপিএম কর্মী প্রহ্লাদ রায়কে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। নাম জড়িয়েছিল ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলুইয়ের আত্মীয়দেরও। এর একদিনের মধ্যে সোমবার ফের খুন হন সিপিএম কর্মী মইসন খান। মইসনের-স্ত্রী সাজেদা বিবির অভিযোগ ছিল, সভার নাম করে জোর করে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে তৃণমূলের লোকেরা।
দু’দুটি খুনকে সামনে রেখে বিরোধীদলগুলির অভিযোগ, জনভিত্তি হারিয়েই তৃণমূল সরাসরি সন্ত্রাসের পথ নিয়েছে। তৃণমূল অবশ্য এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, দলকে হেয় করতেই ঘাটালে প্রহ্লাদ-খুনে তৃণমূলকে জড়ানো হয়েছে। আর চন্দ্রকোনায় নিহত মইসন খান সিপিএম নন, তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী।
তৃণমূল নেতৃত্ব যাই দাবি করুন না কেন, মঙ্গলবার চন্দ্রকোনায় চায়ের ঠেক থেকে আড্ডা সর্বত্রই ঘুরে ফিরে আসছে এই প্রসঙ্গ। এমনতিই এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল। তার উপরে বোঝার উপের শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাস-প্রশ্নে বিরোধীদের প্রচার। এমনিতেই চন্দ্রকোনা বিধানসভা এলাকায় সিপিএমের ভাল সংগঠন রয়েছে। বর্তমান বিধায়ক সিপিএমের। একাধিকবার প্রচারে এসেছেন আরামবাগের বামপ্রার্থী শক্তিমোহন মালিক। খুলেছে লোকাল-জোনাল মিলিয়ে একাধিক দলীয় কার্যালয়। ঘাটালে সিপিএম নেতা সূযর্কান্ত মিশ্রের জনসভায় অপ্রত্যাশিত ভিড়ে সিপিএমের মনোবল বেড়েছে অনেকটাই। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে বেকায়দায় তৃণমূল।
অন্য দিকে, তুলনায় আরও কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরেছে বামেরা। ঘাটালের সিপিএম নেতা উত্তম মণ্ডল, দাসপুরের সুনীল আধিকারী কিংবা গুরুপদ দত্তরা বলছেন, ‘‘প্রশাসন সহযোগিতা করলে এ বার আমরা প্রায় সব বুথে পোলিং এজেন্ট দিতে পারব।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “আমরা জেলার তিনটি লোকসভা আসনেই ভাল ফল করব। সাধারণ মানুষ আর তৃণমূলের সঙ্গে নেই।” সন্ত্রাস-প্রশ্নে আরও জোরদার প্রচার চালানো হচ্ছে বলেও তিনি জানান। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ারও অভিযোগ, “তৃণমূল ভয় পেয়ে এখন খুন-সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছে। আমরা দলীয় ভাবে বিশেষ পর্যবেক্ষক সুবীরকুমার রাকেশকে সব জানিয়েছি।”
ঘাটাল-সহ সর্বত্র জিতবে তৃণমূলই। বিরোধীরা অলীক স্বপ্ন দেখছেন কটাক্ষ করেছে জেলা তৃণমূল নেতা দীনেন রায়। তিনি বলেন, “কোথাও কোনও রকম সন্ত্রাস করা হচ্ছে না। পঞ্চায়েতের মতো লোকসভাও অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে।”