সিমেন্ট চুরির অভিযোগ তুলে গ্রামে সালিশি সভা বসিয়ে দুই গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আদায় ও বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল। গত শুক্রবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার আমড়াগোহাল গ্রামের এই ঘটনায় ওই শালিসি সভায় নেতৃত্ব দেওয়া ৯ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা পলাতক। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “বিষয়টি এখনও আমার নজরে আসেনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বর মাসে পাঁশকুড়ার প্রতাপপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার আমড়াগোহাল গ্রামে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কংক্রিটের রাস্তা তৈরির কাজ হয়েছিল। ওই কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার রাস্তা তৈরির কাজের জন্য নিয়ে আসা সিমেন্ট স্থানীয় বাসিন্দা অনুতোষ পাঁজার বাড়িতে রেখেছিলেন। কাজ শেষ হওয়ার পর চার বস্তা সিমেন্ট উদ্বৃত্ত হয়। ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে ওই চার বস্তা সিমেন্ট অনুতোষবাবুর বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন গ্রামেরই বাসিন্দা ভ্যান চালক সুশান্ত পাল। কিন্তু ওই সিমেন্ট চুরি করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সুশান্ত ও অনুতোষের বিচারের জন্য গ্রামে সালিশি সভা ডাকে গ্রামের মাতব্বররা।
প্রথম দিনের সালিশি সভায় অনুতোষবাবু ও সুশান্তবাবু হাজির হননি। এরপর ফের গত শুক্রবার রাতে গ্রামের শিব মন্দির প্রাঙ্গণে সালিশি সভা বসিয়ে গ্রামের দুই বাসিন্দা সুশান্ত ও অনুতোষকে সেখানে ডেকে পাঠানো হয়। সুশান্ত ওই সালিশি সভায় না গেলেও অনুতোষবাবু ওই সালিশি সভায় হাজির হন। ওই সালিশি সভায় সভাপতিত্ব করেন গ্রামের মাতব্বর মানস কর। এছাড়াও লালু দাস, উত্তম মাইতি, বিমল ঘোড়াই, অমল পাঁজা-সহ প্রায় ৩০ জন গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে ওই সালিশি সভায় মাতব্বররা সিমেন্ট চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে অনুতোষবাবুকে মারধর করে ও শাস্তি হিসেবে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে বলে অভিযোগ। সভায় অনুপস্থিত থাকা সুশান্ত পালের ২০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করে ওই মাতব্বররা।
ওই দিন রাতেই সুশান্তবাবুর বাড়ির সামনে গিয়ে তাঁকে গালিগালাজ, হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকী দু’জনকেই শিবমন্দিরে পূজার আগেই জরিমানার টাকা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। গ্রামে সালিশি সভা বসিয়ে মারধর-সহ জরিমানার বিষয়ে ওই রাতেই পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ জানান স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসী। শনিবার সুশান্তবাবু পাঁশকুড়া থানায় মানস কর-সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সালিসি সভা বসিয়ে জরিমানা আদায় ও বাড়িতে হামলার অভিযোগ জানান।
সুশান্তবাবু বলেন, “ঠিকাদারের নির্দেশেই অনুতোষবাবু নিজের বাড়ি থেকে আমাকে চার বস্তা সিমেন্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামের কয়েকজন এ নিয়ে অনুতোষ ও আমাকে চোর অপবাদ দিয়ে হুমকি দিয়ে সালিশি সভায় হাজির হওয়ার জন্য বলেছিল। আমি সালিশি সভায় না গেলেও আমার ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর ওই রাতেই ওই সালিশি সভার মাতব্বর-সহ একদল লোক আমার বাড়িতে চড়াও হয়ে গালিগালাজ করে জরিমানার টাকা দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যায়।”
ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তথা প্রতাপপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান কাজল হাইত। কাজলদেবী বলেন, “একশো দিনের কাজে রাস্তার কাজের উদ্বৃত্ত সিমেন্ট চুরির অভিযোগ নিয়ে ঠিকাদার আমাদের কোনও অভিযোগ জানাননি। তা সত্বেও আমাদের গ্রামের দু’জন বাসিন্দার বিরুদ্ধে ওই সিমেন্ট চুরির অভিযোগ নিয়ে গ্রামের কিছু লোক সালিশি সভা বসিয়েছিল। সালিশি সভায় জোর করে জরিমানা ধার্য ও একজনের বাড়িতে গিয়ে চড়াও হওয়ার ঘটনার কথা জানতে পেরেই ঘটনার বিষয়ে থানায় জানিয়েছিলাম।”