আহত রিয়াজুল মির্জা মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি।— নিজস্ব চিত্র।
সামনে লোকসভা নির্বাচন। আর আগে বৃহস্পতিবার কেশপুরের চরকায় ফের সংঘর্ষে জড়াল সিপিএম-তৃণমূল। শুরুতে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। পরে আচমকাই হাতাহাতি শুরু হয়। অভিযোগ, সিপিএম সমর্থকদের মারধর করে তৃণমূল সমর্থকরা। প্রহৃত তিনজন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গোলমালে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, স্থানীয় সিপিএম নেতা শেখ নিয়ামত্ আলি দীর্ঘদিন থেকে ঘরছাড়া। এ দিন কয়েকজন তৃণমূল নেতা এলাকায় রটিয়ে দেন, নিয়ামত্ ঘরে ফিরতে পারেন। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এলাকায় একটা অঘোষিত বন্ধের চেহারা ছিল। একটি চায়ের দোকানে এই বিষয় নিয়ে কয়েকজন কথা বলছিলেন। হঠাত্ই সিপিএম সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের বচসা বাধে। কিছু পরে বাইরে থেকে কয়েকজন তৃণমূলকর্মী এসে জড়ো হন। শুরু হয় হাতাহাতি। জখম হন রিয়াজুল মির্জা, এনায়েত খান, মনিকুল মির্জা নামে তিন ব্যক্তি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মনিকুল বলেন, “এক সিপিএম নেতার না কি এ দিন বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তা নিয়েই আমরা কয়েকজন আলোচনা করছিলাম। আচমকাই কয়েকজন এসে মারধর শুরু করে।” নিজেকে তৃণমূল সমর্থক বলে দাবি করে রিয়াজুল বলেন, “সিপিএম আমলেও আমাদের বাড়ি লুঠ হয়েছিল। এখনও আমরা আক্রান্ত হচ্ছি।”
তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান বলেন, “চরকায় একটা ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। তবে ওটা রাজনৈতিক নয়, পারিবারিক।” তাঁর দাবি, “একটা ছাগল কার জমিতে ধান খেয়ে নিয়েছিল। তার থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে গোলমাল হয়! ওই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।” কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই অবশ্য বলেন, “শুধু চরকা নয়। বিভিন্ন এলাকাতেই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। আমাদের প্রার্থীর সমর্থনে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-কর্মসূচিতে কেউ যাতে যোগ দিতে না পারেন, সেই জন্যই এই পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।” প্রসঙ্গত, এই গ্রামেরই বাসিন্দা সিপিএম নেতা এন্তাজ আলি। কয়েকদিন আগে তাঁর মেদিনীপুরের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছিল।
লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে কেশপুরে এক সর্বদল বৈঠক হয়েছে। রাজনৈতিক চাপানউতোরে সেই বৈঠকও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। সিপিএমের পক্ষ থেকে ঘরছাড়া নেতাকর্মীদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা, বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা দলীয় কার্যালয়গুলো খোলার ব্যবস্থা করার মতো কিছু দাবি জানানো হয়। রে রে করে ওঠেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, কেশপুরে এখন সন্ত্রাসের পরিবেশ নেই। কাউকে ঘরছাড়া করে রাখা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ-প্রশাসন কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা না করলে আগামী দিনে এখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা আরও ঘটবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।