রণকৌশল জঙ্গলমহলে

সংগঠন বাড়াতে বিজেপির জোর পাড়া বৈঠকে

হাজার হাজার লোকের জমায়েত করে চোখ ধাঁধানো সভা নয়। বরং চল্লিশ-পঞ্চাশ ঘর রয়েছে এমন প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝখানে বট বা অশত্থতলায় গ্রামবাসীদের নিয়ে ছোটখাটো মঞ্চ গড়ে সভা। যাকে পাড়া বৈঠকও বলা চলে। সেখানেই শাসকদলকে মোকাবিলার পাঠ পড়াচ্ছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

লালগড় শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০০:২০
Share:

বেলাটিকরির শুঁটপিপুল গ্রামে চলছে পাড়া বৈঠক। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

হাজার হাজার লোকের জমায়েত করে চোখ ধাঁধানো সভা নয়। বরং চল্লিশ-পঞ্চাশ ঘর রয়েছে এমন প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝখানে বট বা অশত্থতলায় গ্রামবাসীদের নিয়ে ছোটখাটো মঞ্চ গড়ে সভা। যাকে পাড়া বৈঠকও বলা চলে। সেখানেই শাসকদলকে মোকাবিলার পাঠ পড়াচ্ছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা।

Advertisement

জঙ্গলমহলে দলীয় সংগঠন বাড়াতে বিজেপির এই রাজনৈতিক কৌশল মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০০৮-২০০৯ সালে জনগণের কমিটির আন্দোলন পর্বকে, সে সময় এ ভাবেই গ্রামে-গ্রামে, পাড়ায়-পাড়ায় সংগঠনকে ছড়িয়ে দিয়েছিল কমিটি। বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি তাপস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “রাজ্যে তিন বছরের শাসনে তৃণমূলের নখ-দাঁত বেরিয়ে পড়েছে। শাসকদলের নির্দেশে বিরোধীদের কোনও রকম রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি দিচ্ছে না পুলিশ-প্রশাসন। তাই গ্রাম-বৈঠক ও পাড়া-বৈঠক করছি। এতে ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে লালগড়ের বেলাটিকরি অঞ্চলের শুঁটপিপুল গ্রামের বটতলায় বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির উদ্যোগে একটি সভার আয়োজন করা হয়। সভার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দেয়নি পুলিশ-প্রশাসন। তাপসবাবু বলেন, “সভা করার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আগাম লিখিত আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন স্থানীয় নেতারা। কিন্তু বিরোধীদের কন্ঠরোধের জন্য সভা বা পদযাত্রার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।” তাঁর মতে, বিরোধী দল হিসেবে শান্তিপূর্ণ ভাবে সভা করার অধিকার রয়েছে। তাঁরা সেটাই করছেন। এ দিন সভায় শুঁটপিপুল ও পার্শ্ববর্তী গোপীনাথপুর ও কুরকুটশোল গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা হাজির ছিলেন। তাপসবাবু ছাড়াও সভায় ছিলেন বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের দুই নেতা মহাদেব বসাক ও শাম্যাপ্রসাদ মণ্ডল। ছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলার স্থানীয় নেতারাও।

Advertisement

জঙ্গলমহলে জনগণের কমিটির আন্দোলন পর্বে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছিল। সরাসরি জনতাকে গুরুত্ব দিয়ে ওই সময় সাফল্য পেয়েছিল কমিটি। বিজেপিও কমিটির ধাঁচে আম দরবার করে ধীরে ধীরে জঙ্গলমহলের মাটির দখল নিতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। সংগঠনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আদিবাসী-মূলবাসীদের। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, নানা ধরনের কর্মসূচিকে সমর্থন বাড়ানোর হাতিয়ার করলেও দলীয় সদস্যপদ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চলে নীতিই নিচ্ছেন নেতৃত্ব। যাকে তাকে দলে সংযুক্ত করা নয়, বরং দেখেশুনে, খোঁজখবর নিয়ে নেতা-কর্মীদের দলে নেওয়া হচ্ছে।

এ দিন শুঁটপিপুল গ্রামের সভায় হাজির বিজেপি নেতারা সরাসরি তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘গণতান্ত্রিক ভাবে’ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ডাক দেন। তাপসবাবু, শ্যামাপ্রসাদবাবুরা বলেন, “কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ গ্রামোন্নয়নের টাকা পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলি কীভাবে খরচ করছে, সেই হিসেব চাওয়ার সময় এসেছে। কারা ইন্দিরা আবাসে বাড়ি পাচ্ছে, একশো দিনের প্রকল্পে কারা কতদিন কাজ করল, সেই মাস্টার রোলে কাদের নাম রয়েছে, তা জানার পূর্ণ অধিকার রয়েছে এলাকাবাসীর। পঞ্চায়েতের প্রধান, সভাপতি ও বিডিও’রা সেই তথ্য না দিলে তথ্য জানার অধিকার আইনে আপনারা এসব জানতে চাইবেন। তখন ওরা তথ্য জানাতে বাধ্য থাকবে। পঞ্চায়েতে তৃণমূলের পুকুর চুরি ঠেকাতে গ্রামবাসীদের একজোট হতে হবে।” এ দিন যেখানে সভা হয়, ওই এলাকার বহু বাসিন্দার নামে রাষ্ট্রদ্রোহ-সহ নানা মামলা রয়েছে। পেশায় আইনজীবী তাপসবাবুর আশ্বাস, “বাম আমলের মতো এই সরকারও বিরোধীদের মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। আমরা ওই সব বাসিন্দাদের আইনি সহায়তা দেব।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বিজেপির সভায় হাজির ছিলেন। বুদ্ধেশ্বর মাহাতো, লক্ষ্মণ মাহাতোরা বলেন, “এক সময় জনগণের কমিটির আন্দোলনে ছিলাম। তারপর তৃণমূল অনেক আশা দেখিয়েছিল, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পালাবদলের পরে দেখলাম ওরা বামেদের মতোই। এখন তাই বিজেপিতে ভরসা রাখছি।” উল্লেখ্য, বুদ্ধেশ্বরের ছেলে কমলেশ ফেরার। অভিযোগ, একাধিক মিথ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে তাঁকে।

আজ, শুক্রবার বেলিয়াবেড়া থানার বাহারুনা থেকে রান্টুয়া পর্যন্ত সন্ত্রাস বিরোধী পদযাত্রার ডাক দিয়েছে বিজেপি। ওই কর্মসূচির জন্য অনুমতি দেয়নি পুলিশ। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সহ সভাপতি শুভাশিস পাল বলেন, “আমরা তৃণমূলকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না। ২০১৬ কে পাখির চোখ করে আমরা সংগঠনকে জঙ্গলমহলের সর্বত্র ছড়িয়ে দেব। রাজ্যের বিরোধী দল হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক অধিকার হরণের চেষ্টা হলে আমরাও পাল্টা প্রতিরোধে যাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement