শব্দ-তাণ্ডবে তাল কাটল বাণীবন্দনার

পুজো জমজমাট। থিমেও জোর টক্কর। তবে সব কিছুর তাল কাটল সেই শব্দ-তাণ্ডবে! এ ছবি মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ের। শুধু শহর নয়, আশপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ এখানে সরস্বতী পুজো দেখতে আসেন। রবিবার এঁদের অনেককে নিরাশ হতে হয়েছে। শব্দের দাপটে সব ঠাকুর দেখে উঠতে পারেননি তাঁরা! দু’-চারটে পুজো দেখে ফিরতে হয়েছে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৪
Share:

কানে আঙুল। মেদিনীপুর কলেজ স্কোয়ারে কিংশুক আইচের তোলা ছবি।

পুজো জমজমাট। থিমেও জোর টক্কর। তবে সব কিছুর তাল কাটল সেই শব্দ-তাণ্ডবে! এ ছবি মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ের।

Advertisement

শুধু শহর নয়, আশপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ এখানে সরস্বতী পুজো দেখতে আসেন। রবিবার এঁদের অনেককে নিরাশ হতে হয়েছে। শব্দের দাপটে সব ঠাকুর দেখে উঠতে পারেননি তাঁরা! দু’-চারটে পুজো দেখে ফিরতে হয়েছে! মেদিনীপুরের বাসিন্দা চন্দ্রশেখর দাস, শান্তনু মাইতিরা ক্ষোভের সুরে বলেন, “যাবতীয় বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এত বিকট শব্দে সাউন্ড বক্স বাজছে যে সব পুজো দেখা সত্যিই মুশকিল। পরিস্থিতি একই থাকলে আগামী দিনে কলেজ মোড়ে দর্শক সংখ্যা কমে যাবে।” এই আশঙ্কা একাংশ পুজো উদ্যোক্তারও। কলেজ মোড়েরই যুববাণী সঙ্ঘের পুজো মণ্ডপে যেমন ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘ফিরিয়ে দাও কলেজ স্কোয়ারের সেই পুরনো ছন্দ, চেনা পরিবেশ। দর্শকরা আবার শান্তিতে প্রতিমা, মডেল দর্শন করে উপভোগ করুক। তা না হলে একদিন দর্শক শূন্য হয়ে পড়বে কলেজ স্কোয়ার।’

আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সকলকেই শব্দবিধি মেনে চলতে হবে। তা না- মানলে পুজো কমিটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কোথায় কী? পুজো দেখতে এসে রবিবার দিনভর সমস্যায় পড়লেন অনেকে। সব দেখেও নির্বিকার থাকল পুলিশ-প্রশাসন। কেন? পুলিশ জানাচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ের সরস্বতী পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে রাজনীতির আকচাআকচি। থাকে থিমযুদ্ধে একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই। ছবিটা এ বারও এক। ব্যঙ্গচিত্রে উঠে এসেছে বিভিন্ন ইস্যু। বিরোধীরা যেমন বিভিন্ন থিম বানিয়ে শাসক দলকে খোঁচা দিয়েছে। তেমন শাসক দলও পাল্টা থিম বানিয়ে এর মোকাবিলা করেছে। শহরের এই এলাকায় প্রায় কুড়িটি পুজো হয়। প্রায় প্রতিটি পুজোর সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কোথাও পুজোর নেপথ্যে টিএমসিপি। কোথাও সিপি। কোথাও বা এসএফআই কিংবা এবিভিপি। এ বার থিমের মধ্যে অবশ্য সারদা ইস্যু অন্যতম।

Advertisement

কলেজ মোড়ের পুজো দেখার জন্য অনেকে বছরভর অপেক্ষা করে থাকেন। রাজনীতির আকচাআকচিই এই পুজোর মূল আকর্ষণ। পুজো মণ্ডপে বিভিন্ন মডেল থাকে। কোনওটা মাটির, কোনওটা প্লাইউডের। সঙ্গে ব্যঙ্গচিত্র। এখন অবশ্য ফ্লেক্সেই বেশি ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয়। কিন্তু সময় নিয়ে সে সব দেখার জো নেই। কারণ, কোনও পুজোয় ১২টা, কোথাও ১৬টা সাউন্ড বক্স রয়েছে। বিকট শব্দেই সাউন্ড বক্সগুলো বাজছে। শব্দ-তাণ্ডবের জেরে এদিন পুজো দেখতে এসে অনেকেই কানে হাত দিয়ে যাতায়াত করেছেন। বিশেষ করে ছোট এবং বয়স্করা। শহরের বাসিন্দা সৌরভ ত্রিপাঠী, সুদীপ্ত পালরা বলছেন, “বক্সের আওয়াজ যেন বুকে এসে লাগছে। এত আওয়াজের মধ্যে পুজো দেখা সম্ভব? এ ভাবে পুজো করার থেকে না করাই ভাল! ”

পরিস্থিতি দেখে দুপুরের পর অবশ্য সক্রিয় হয় পুলিশ। সাদা পোষাকের পুলিশও কলেজ মোড়ে নজরদারি চালাতে শুরু করে। বেশ কয়েকটি পুজো কমিটিকে সতর্ক করা হয়। পুলিশের ধমক খেয়ে বিকেলের দিকে কয়েকটি পুজোর উদ্যোক্তারা শব্দসীমা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসেন। শনি ও রবি দু’দিন ধরে সরস্বতী পুজো ঘিরে উৎসবের মেজাজ ধরা দিয়েছে খড়্গপুর মহকুমাতেও। রেলশহরের রূপেশ্বর মন্দির ‘রকস্টার’ ক্লাবের পুজোর এ বার ছিল ৩২তম বর্ষ। এখানেও মেদিনীপুর কলেজ স্কোয়ারের মতোই রাজনৈতিক ভাবনা দেখা গিয়েছে। খড়্গপুর কলেজের আবাসিক পড়ুয়াদের পুজোয় হস্টেলের আসবাব দিয়ে টাইটানিকের আদলে গড়া হয়েছে মণ্ডপ। কর্মকর্তাদের অন্যতম সুদীপ রথ বলেন, “সামর্থ্য অনুযায়ী আয়োজন করেছি। পুরোহিত মণিশঙ্কর চক্রবর্তীও আমাদের আবাসিক ছাত্র।”

কেশিয়াড়িতে আবার দেখা গিয়েছে থিমের লড়াই। বাসস্ট্যান্ডের ‘টাইগার’ ক্লাবের ২৩তম বর্ষের পুজোয় হয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় চালাঘরের আদলে টিন দিয়ে বানানো হয়েছে মণ্ডপ। পিতলের দেবীমূর্তিতেও দক্ষিণী ছোঁয়া। এই পুজোর বাজেট ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুদীপ্ত আচার্য বলেন, “কেশিয়াড়িতে দুর্গাপুজোর জাঁক তেমন নেই। তাই সরস্বতী পুজোয় স্থানীয় ছ’টি ক্লাবের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে।” বেলদার দিকে দাশিসরিষায় ‘আহেলি’ সঙ্ঘের ২৩তম বর্ষের পুজোয় থিম ‘সহজপাঠ’। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সহজপাঠের প্রচ্ছদ মণ্ডপের প্রবেশপথ এছাড়া প্রথম ভাগের ১ থেকে ১৯পাতার ছবি-সহ ছড়ার অঙ্কন হয়েছে মণ্ডপের দেওয়ালে সেই সঙ্গে হাট কবিতা অনুসারে মডেল নির্মান করা হয়েছে শুভ্র বসনের মৃণ্ময়ী দেবীমূর্তি পুজোর বাজেট এবার এক লক্ষ টাকা এছাড়াও বাসস্ট্যাণ্ড থেকে ভসরা যাওয়ার পথে ড্যাফোডিল ক্লাবের বাবুই দড়ির কারুকার্যে মণ্ডপ দর্শনার্থী টানছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement