দলবিরোধী কাজের দায়ে লক্ষ্মণ শেঠকে বহিষ্কার করা হয়েছে আগেই। লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পরে এ বার পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দলের লক্ষ্মণ-শিবিরকে আরও কোণঠাসা করার পথে হাঁটল সিপিএম। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠ চার সদস্যকে সাসপেন্ড করা হল। সরাসরি বহিষ্কার করা হল লক্ষ্মণ-অনুগামী আরও এক নেতাকে। সেই সঙ্গে লক্ষ্মণ শিবিরের নেতা বলে পরিচিত কানু সাহুকে জেলা সম্পাদকের পদ থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি দিয়ে জেলা কমিটিতে আনা হল তমলুক ও কাঁথি লোকসভা আসনে দলের দুই পরাজিত প্রার্থী শেখ ইব্রাহিম আলি ও তাপস সিংহকে।
তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে নিমতৌড়িতে দলীয় কার্যালয়ে দলেরই এক গোষ্ঠীর হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব, মৃদুল দে ও নৃপেন চৌধুরী। সেই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছিল লক্ষ্মণ-অনুগামীদের দিকেই। দলীয় স্তরে ঘটনার তদন্ত চালানোর পর এ বার লক্ষ্মণ অনুগামীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সেরে ফেলা হয়েছে। তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক অমিয় সাহু এবং তিন জোনাল নেতা বিজন রায়, প্রণব দাস ও প্রশান্ত পাত্রকে। জেলা কমিটির আর এক সদস্য অমিত দাসকে দল বিরোধী কাজের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সব সিদ্ধান্তই অনুমোদিত হয়েছে শনিবার আলিমুদ্দিনে দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে। জেলা সম্পাদক কানুবাবু অসুস্থ থাকায় বেশ কিছু দিন ধরেই পূর্ব মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন প্রশান্ত প্রধান। লক্ষ্মণ-অনুগামীদের ডানা ছেঁটে দেওয়ার পরে আপাতত প্রশান্তবাবুই ‘স্বাধীন ভাবে’ জেলায় দল চালাবেন।
দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “আর কয়েক মাসের মধ্যেই আমাদের সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সমস্যার জায়গাগুলো মেরামত করে নতুন করে জেলা কমিটি গড়ার কাজ সম্মেলনেই হবে।” তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগ সত্ত্বেও এবং দলের প্রবল গোষ্ঠী কোন্দল মোকাবিলা করে লোকসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএম এ বার ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। রাজ্যের সব কটি জেলার মধ্যে দলের ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে এই জেলাই সব থেকে এগিয়ে। এই লড়াইয়ের ‘পুরস্কার’ হিসেবে জেলার দুই কেন্দ্রের দুই প্রার্থী তাপসবাবু ও ইব্রাহিমকে জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ছাত্রনেতা ইব্রাহিম পাঁশকুড়ার পঞ্চায়েত সদস্য হলেও দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় যুব সম্পাদক তাপসবাবুর দলীয় সদস্যপদ এখন ওই জেলার নয়, দলের রাজ্য-কেন্দ্র থেকে। এই দু’জনকে রাজ্য কমিটির বৈঠক থেকে জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে এ দিনের বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছিলেন অন্যান্য জেলার কয়েকজন নেতা। তাঁদের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত জেলা কমিটিতে বসেই নেওয়া যেত। রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অবশ্য বৈঠকে জানিয়েছেন, জেলা নেতৃত্বের ইচ্ছাকেই মর্যাদা জানানো হয়েছে।