কেশপুর-কাণ্ডে সিবিআই দাবি

রাতে দুষ্কৃতীদের চিনল কী করে, প্রশ্ন দীপকের

রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনে তাঁদের আস্থা নেই। কেশপুরে তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্যা কাকলি বরদোলুই খুনের ঘটনায় তাই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলল সিপিএম। এই ঘটনায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ-সহ ২৬ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ায় সরব হয়েছে দল। শুক্রবার মেদিনীপুরে এক সাংবাদিক বৈঠক করে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “আমরা চাই না রাজ্য প্রশাসনের কোনও স্তর থেকে এই ঘটনার তদন্ত হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share:

রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনে তাঁদের আস্থা নেই। কেশপুরে তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্যা কাকলি বরদোলুই খুনের ঘটনায় তাই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলল সিপিএম। এই ঘটনায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ-সহ ২৬ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ায় সরব হয়েছে দল। শুক্রবার মেদিনীপুরে এক সাংবাদিক বৈঠক করে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “আমরা চাই না রাজ্য প্রশাসনের কোনও স্তর থেকে এই ঘটনার তদন্ত হোক। কারণ, রাজ্য প্রশাসনের সব স্তরই শাসক দলের আজ্ঞাবহ হয়ে গিয়েছে। সিবিআই বা কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থা তদন্ত করুক। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলুক। তা হলেই সব স্পষ্ট হবে।”

Advertisement

তৃণমূল অবশ্য সিবিআই বা কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ বলেন, “দীপকবাবুদের আমলে এর চেয়েও অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। কখনও কোনও তদন্ত হয়নি! রাজ্য পুলিশের উপর প্রতিটি মানুষের আস্থা আছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরও আস্থা রাখা উচিত।”

গত মঙ্গলবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে খুন হন কেশপুরের জগন্নাথপুর অঞ্চলের লোয়াদা গ্রামের বাসিন্দা কাকলিদেবী। কাকলিদেবীর স্বামী বিশ্বজিত্‌ বরদোলুই তৃণমূলের জগন্নাথপুর অঞ্চল সভাপতি। তাঁর সামনেই গুলি করে মারা হয় বছর আঠাশের কাকলিদেবীকে। ঘটনার পরেই জ্ঞান হারান বিশ্বজিত্‌বাবু। আপাতত এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। বুধবার রাতে তাঁর বড়দা হরেন বরদোলুই আনন্দপুর থানায় সুশান্তবাবু-সহ ২৬ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। তাতে তিনি দাবি করেছেন, ‘গোটা ঘটনা আমরা জানলা দিয়ে দেখি। শুনি দুষ্কৃতীরা বলছে, সুশান্ত ঘোষের নির্দেশেই তোদের শায়েস্তা করতে এসেছি।’

Advertisement

কাকলিদেবীর ভাসুর হরেনবাবু রাতের অন্ধকারে কী ভাবে এত জনকে চিনতে পারলেন, এ দিন সেই প্রশ্নও তুলেছেন দীপকবাবু। তাঁর যুক্তি, “মঙ্গলবার রাতে কৃষ্ণপক্ষ ছিল। তা সত্ত্বেও উনি (হরেনবাবু) জানলা দিয়ে কী ভাবে সব দেখতে পেলেন?” দীপকবাবু আরও জানান, যে ২৬ জনের নামে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরা ১০টি অঞ্চলের ২১টি গ্রামের বাসিন্দা। এই সিপিএম নেতার কথায়, “অভিযোগকারী রাত দেড়টার সময় এতজনকে চিনতে পারলেন কী করে, সেটাই রহস্য।”

এই খুনের তদন্তে নেমে পুলিশের ধারণা ছিল, আততায়ীরা কাকলি নয়, তাঁর স্বামী বিশ্বজিত্‌কে মারতে এসেছিল। ঘটনার পরে বিশ্বজিত্‌বাবুর মেজদা রঞ্জিতবাবু দাবি করেছিলেন, ঠিকাদারি ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত এবং রাজনৈতিক যোগাযোগের ফলেই বিশ্বজিতের সঙ্গে অনেকের ‘শত্রুতা’ ছিল। পুলিশের অনুমান, ছিল এই সংক্রান্ত গোলমালের জেরে নিশানা হয়েছিলেন বিশ্বজিত্‌বাবু। তবে সিপিএম নেতা-কর্মীদের নামে অভিযোগ দায়ের হওয়ায় বিষয়টি অন্য দিকে মোড় নেয়। সিপিএমের অবশ্য দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ঘটনাটি ঘটেছে।

এ দিন দীপকবাবু বলেন, “বোঝাই যাচ্ছে এটা ওদের (তৃণমূলের) অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জের। মৃতার স্বামীর বিরুদ্ধে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কেরও অভিযোগ রয়েছে বলে শুনছি। উনি (বিশ্বজিত্‌বাবু) আগে মুম্বইয়ে সোনার কাজ করতেন। পরে কিছু সোনা নিয়ে কেশপুরে পালিয়ে আসেন বলে শুনেছি। যখন মা-মাটি-মানুষের সরকার হল, তখন উনি ঠিকাদার হলেন। সপ্তাহ খানেক আগে ওঁকে অঞ্চল সভাপতিও করা হয়েছে! উনি গত কয়েক বছরে ফুলেফেঁপে ওঠেন। ফলে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়।” তৃণমূলের জেলা নেতা প্রদ্যোত্‌বাবুর অবশ্য বক্তব্য, “দীপকবাবুই তো দু’রকম কথা বলছেন। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে মৃত্যু না অবৈধ সম্পর্কের জেরে মৃত্যু আগে উনি সেই উত্তরটা দিন!”

এ দিকে, এই খুনের ঘটনায় সুশান্ত ঘোষের নাম জড়ানোয় শোরগোল পড়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পরে গড়বেতার সিপিএম বিধায়ক সুশান্তবাবু দাসেরবাঁধ কঙ্কাল মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট জামিন পান। তবে এখনও মেদিনীপুর আদালতে মামলার শুনানি ছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুরে ঢুকতে পারেন না তিনি। কাকলিদেবী খুনে অভিযুক্ত বাকি ২৫ জনের মধ্যেও অনেকে দীর্ঘদিন এলাকাছাড়া। এঁদের মধ্যে আছেন কেশপুর জোনাল সদস্য এন্তাজ আলি, নিয়ামত হোসেন প্রমুখ। দীপকবাবুও এ দিন বলেন, “এন্তাজ আলি, নিয়ামত হোসেনরা দীর্ঘদিন ধরে ঘরছাড়া।” তিনি জানান, ২৬ জনের মধ্যে ২ জন মাধ্যমিক শিক্ষক, ৪ জন প্রাথমিক শিক্ষক। অভিযুক্তদের কারও বাড়ি ২০ কিলোমিটার দূরে, কারও বাড়ি ৪০ কিলোমিটার দূরে, কারও বা আরও বেশি। অভিযোগে সুশান্ত ঘোষের নামের পাশে ঠিকানাও লেখা নেই। জেলার এই সিপিএম নেতার মতে, “যে গ্রামে এখন সিপিএমের কোনও লোক নেই, যারা আছেন সবাই তৃণমূল, সেই গ্রামের কোনও ঘটনায় সিপিএম কী ভাবে জড়িত থাকবে? গত প্রায় চার বছর ধরে মিথ্যা মামলার যে দীর্ঘ খতিয়ান রয়েছে, এই মামলাটি সেই খতিয়ানেই নির্লজ্জ সংযোজন।”

অনুষ্ঠান। লালগড়ের চ্যামিটাড়ায় কালী পুজোকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তিন দিনের ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা। উদ্যোক্তা চ্যামিটাড়া নবীন সংঙ্ঘ। বৃহস্পতিবার সংস্থার মাঠে কুইজ, আবৃত্তি, প্রবন্ধপাঠ প্রতিযোগিতা হয়। শুক্রবার ছিল ৫ কিমি দৌড়, ছোটদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। আজ, শনিবারও নানা অনুষ্ঠান হবে। থাকছে নানা ধরনের সান্ধ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement