মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার পথে। তমলুকে পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।
মঙ্গলবার সকাল সওয়া এগারোটা। আর কিছুক্ষণ বাদেই শুরু হবে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলার শুনানি। ততক্ষণে তমলুক আদালতে পৌঁছে গিয়েছেন ওই মামলায় অভিযুক্ত সদ্য প্রাক্তন-সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ, খেজুরির সিপিএম নেতা হিমাংশু দাস, বিজন রায়েরা। তমলুকে জেলা আদালতের একটি ঘরে বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন তাঁরা। এমন সময়েই কয়েক ফুট দূরে উঠল স্লোগান ‘আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী শেখ ইব্রাহিমকে জয়ী করুন।’
পিতা-পুত্র শিশির-শুভেন্দু’র পর মঙ্গলবার মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিলেন দুই বামপ্রার্থী, তমলুকের শেখ ইব্রাহিম আলি এবং কাঁথির প্রার্থী তাপস সিংহ। সকাল সওয়া এগারোটা নাগাদ তাঁদের মিছিল যখন জেলা আদালতের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল আদালতের একটি ঘরে ঘনিষ্ঠদের বসেছিলেন লক্ষ্মণ শেঠরা। দলের মিছিল দেখে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্ত খেজুরির সিপিএম নেতা হিমাংশু দাস, বিজন রায়-সহ বেশ কিছু দলীয় নেতা-কর্মী আদালত চত্বরের বাইরে বেরিয়ে এলেন। ‘নড়লেন’ না কেবল তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ।
মিছিলের সঙ্গে এসে জেলা আদালতের কাছেই তমলুক পুরসভা অফিস চত্বরে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী ও সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তিতে মাল্যদান করেন ইব্রাহিম ও তাপসবাবু। সিপিএম প্রার্থীদের মিছিল নিয়ে লক্ষ্মণবাবুর উৎসাহ না থাকলেও, এ দিন দুই প্রার্থীর মিছিল জেলা আদালত ছাড়িয়ে কয়েকশো মিটার এগোনোর পর ওই একই রাস্তায় বিপরীত দিক থেকে গাড়িতে আসা লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকা শেঠ সৌজন্য বিনিময় করতে এগিয়ে আসেন। তমলুক শহরের বর্গভীমা মন্দিরের কাছে মিছিলের কিছুটা দূরেই গাড়ি থামিয়ে নেমে আসেন তমালিকাদেবী। ইব্রাহিম-তাপসের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের পর তাঁদের সঙ্গে মিছিলে কিছুক্ষণের জন্য পা-ও মেলান তমালিকাদেবী। লক্ষ্মণ-জায়া দুই প্রার্থীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “তোমরাই জিতবে। এগিয়ে যাও। আমরা সঙ্গে আছি।”
নন্দীগ্রামের শহিদদের স্মরণ, পীরের মাজার, দেব-দেবীর মন্দিরে পুজো দিয়ে দলীয় সমর্থকদের নিয়ে তমলুকে শোভাযাত্রা করে সোমবার নিজের মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। মনোনয়ন জমা দেন কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারীও।
এ দিন সকাল ১০টা থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সিপিএম-সহ বাম সমর্থকরা তমলুক শহরের মানিকতলায় সিপিএমের জোনাল কমিটির অফিসের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। মঙ্গলবার ছিল লেনিনের জন্মদিন। সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ের সামনে লেনিনের মূর্তিতে মাল্যদান করেন দুই প্রার্থী। পরে শুরু হয় মিছিল। ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্মল জানা, শক্তি বেরা, নিরঞ্জন সিহি প্রমুখ। মানিকতলায় শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তিতে মাল্যদান করার পর মিছিল এগোয় তমলুক শহরের ভিতরের মূল সড়ক ধরে। প্রায় দেড় হাজারের বেশি দলীয় সমর্থকদের নিয়ে দুই প্রার্থী রাস্তার ধারে অপেক্ষারত সাধারণ মানুষের উদেশ্যে নমষ্কার জানান।
এরপর দুই প্রার্থীকে নিয়ে মিছিল শহরের বড়বাজার, হাসপাতাল মোড় হয়ে বেলা ১২টা নাগাদ জেলাশাসকের অফিসের সামনে আসে। তমলুক লোকসভার রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের কাছে মনোনয়ন জমা দেন তমলুকের প্রার্থী ইব্রাহিম আলি। কাঁথি লোকসভার রিটার্নিং অফিসার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিজিৎ মৈত্রের কাছে মনোনয়ন জমা দেন কাঁথির প্রার্থী তাপস সিংহ।
মনোনয়ন জমা দিতে আসা দুই বামপ্রার্থীর সঙ্গে বামফ্রন্টের জেলা নেতৃত্ব ছাড়াও ছিলেন তাপসবাবুর স্ত্রী তৃপ্তি সিংহ ও তাঁর কন্যা রোজা ও পুত্র জো। তাপসবাবু বলেন, “রাজ্যে তৃণমূলের ৩৫ মাসের অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে এসেছে। মানুষ এই অপশাসনের অবসান চাইছে। প্রচারে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।”
তমলুকের সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলি বলেন, “রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন বৃদ্ধি, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।” ইব্রাহিমের অভিযোগ, “হলদিয়া শিল্পাঞ্চল শুকিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এ সবের প্রতিকার চাইছেন।” এ বারের নির্বাচনে মানুষ বামপন্থী প্রার্থীদের জয়ী করে তৃণমূলকে জবাব দেবেন বলেই তাঁর আশা।