উইঢিবির মাটি দিয়ে তৈরি প্রতিমা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
উইঢিবির মাটি দিয়ে তৈরি করতে হবে প্রতিমা। এক রাত্রির বেশি প্রতিমা রাখাও যাবে না। এই নিয়ম মেনেই কালী পুজো হয়ে আসছে কেশপুর থানা এলাকার ধলহারা গ্রামের ভট্টাচার্য বাড়িতে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বহুকাল আগে হুগলির বৈদ্যবাটি থেকে এসে কেশপুরের ধলহারায় বসতি স্থাপন করেছিলেন পরিবারের পূর্বসূরিরা। তখন এলাকা ছিল খুবই দরিদ্র। বহু কষ্টে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। হঠাৎ এলাকায় মহামারী দেখা দেয়। তখনই কালীপুজোর প্রচলন। পারিবারিক হয়েও সর্বজনীন ভট্টাচার্য বাড়ির তিনশো বছরের পুরনো কালীপুজো। শুধু ধলহারা নয়, আশপাশের গ্রামের মানুষও এতে সামিল হন। অনেকে মানত করেন।
ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করেন, পুজোর নিয়মে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে বিপদ ঘটবে। প্রৌঢ়া ভারতী ভট্টাচার্য জানালেন, একবার পুজোর পরদিন বড় করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে আসা সকলে যাতে প্রতিমা দর্শন করতে পারে, তাই প্রতিমা রেখে দেওয়া হয়েছিল। পরদিন সকালে দেখা যায়, গোয়ালে অন্তঃসত্ত্বা গাভী মরে পড়ে রয়েছে। আর প্রতিমার গলা থেকে প্রায় সাড়ে তিন ভরি সোনার হার উধাও। ভারতীদেবী বলেন, “তারপর থেকে আর মাকে দু’রাত রাখা হয়নি। এক রাত পরেই বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়।” একবার নাকি পুজোর সময় পুরোহিতকে নিয়েই মাটি থেকে উপরে ভাসমান অবস্থায় ছিল পঞ্চমুণ্ডির আসন। মন্দিরের আশপাশে রাতে ঘুঙুরের আওয়াজও নাকি শুনেছেন অনেকে। পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, দেবী কালী রাতে এখানে ঘুরে বেড়ান।
পুজোর জন্য রয়েছে স্থায়ী মন্দির। তবে সেখানে নিত্য পুজো হয় না। কালীপুজোর সময়ে দু’দিন ধরে পুজো হয়। পুজোর আগে গড়া হয় প্রতিমা। উইঢিবি ভেঙে প্রতিমা তৈরির মাটি সংগ্রহ করা হয় বিজয়া দশমীর দিনে। পরিবারের সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য, তপন ভট্টাচার্যদের কথায়, “এখন তো পরিবারের সকলেই বাইরে থাকেন। কিন্তু পুজোর সময় সকলেই গ্রামে হাজির হন। পুজোটা সুন্দর করে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। গ্রামের প্রতিটি মানুষ এ ব্যাপারে আমাদের সব ধরনের সহযোগিতাও করেন।”
এই কালীপুজোয় ৫০-৬০টি ছাগ বলির রীতিও রয়েছে। পুজোর দিন প্রচুর ছাগ বলি হলেও পুজোর পরদিন কেবলমাত্র একটি ছাগল বলি দেওয়া হয়। তারপরই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনের দিনে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর ভুরিভোজের আয়োজন। আত্মীয় পরিজন, গ্রামবাসী সমেত কয়েকশো মানুষকে পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়। পুজোর দু’দিন ধলহারা গ্রাম জুড়ে থাকে উৎসবের মেজাজ।