ভাড়াটের পরিচয়ের নথি জমা নেবে ঘাটাল পুরসভা

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর অবশেষে টনক নড়ল। শহরের নিরাপত্তা আঁটোসাটো করতে এ বার শহরের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নজরদারি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল ঘাটাল পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন থেকে শহরের কেউ বাড়ি ভাড়া দিলে ভাড়াটিয়ার ভোটার পরিচয়পত্র-সহ যাবতীয় নথি পুরসভার কাছে জমা দিতে হবে। পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি বাড়ির মালিককে নিজের কাছেও রাখতে হবে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০২
Share:

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর অবশেষে টনক নড়ল। শহরের নিরাপত্তা আঁটোসাটো করতে এ বার শহরের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নজরদারি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল ঘাটাল পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন থেকে শহরের কেউ বাড়ি ভাড়া দিলে ভাড়াটিয়ার ভোটার পরিচয়পত্র-সহ যাবতীয় নথি পুরসভার কাছে জমা দিতে হবে। পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি বাড়ির মালিককে নিজের কাছেও রাখতে হবে। আগামী নভেম্বর মাস থেকেই পুরসভা এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। এই মর্মে পুরসভার পক্ষ থেকে প্রচারও করা হবে। ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ বলেন, “যাঁরা বাড়িতে নতুন ভাড়া দিয়েছেন বা যাঁরা আগেই ভাড়া দিয়েছেন-সকলের ক্ষেত্রেই একই নিয়ম কার্যকর হবে। কেউ তথ্য গোপন রেখে বাড়ি কাউকে ভাড়া দিলে তাঁর বিরুদ্ধে পুর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুরসভার উপ-পুরপ্রধান উদয়শঙ্কর সিংহরায় বলেন, “শহরে যাতে কেউ বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোনও অসামাজিক কাজ করতে না পারেন সেজন্যই এই উদ্যোগ। বর্ধমান কান্ডের পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভাড়াটিয়ার সমস্ত নথি জমা রাখলে অসামাজিক কাজ অনেকটাই বন্ধ করা সম্ভব হবে।”

Advertisement

আড়ে বহরে বাড়ছে ঘাটাল শহর। সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে গ্রামের দিকেও শহরের পরিধি বিস্তৃত হচ্ছে। শহরে অনেক নতুন বাড়িও তৈরি হচ্ছে। ফলে এখন শহরে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার রেওয়াজও শুরু হয়েছে। অনেকেই নতুন বাড়ি তৈরি করে মোটা টাকার বিনিময়ে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন। তবে অনেকক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত তথ্য পুরসভায় না জানানোয় পুরসভার কর ফাঁকির পরিমাণ বাড়ছে। অভিযোগ, এক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষ আগে কোনও নজর দেয়নি। ফলে পুরসভার কর আদায়ের পরিমাণ কমেছে, তেমনই বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসার রমরমাও বেড়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, এতদিন পুরসভা কেন নজরদারি চালায়নি? উদয়শঙ্কর সিংহরায়ের কথায়, “আমাদের কর্মী কম। তাই নজরদারি চালানো সম্ভব হয়নি।” তিনি বলেন, “এটা ঠিক, যে হারে শহরে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, তাতে পুর আইন অনুযায়ী বাণিজ্যিক ভাবে কর নেওয়া যায়। এই কর নেওয়া হলে পুরসভার আয় বর্তমানের চেয়ে তিন গুণ বেড়ে যাবে। তাছাড়াও পুরসভার নিয়মনীতি মেনে চললে কোনও অসাধু ব্যক্তি সহজে বাড়ি ভাড়া পাবেন না।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কাউকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হলে অবশ্যই বাড়ির মালিককে ভাড়াটিয়ার পরিবারের সকল সদস্যের পরিচয় পত্র, কী উদ্দেশে তাঁরা বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন, কতদিনের জন্য বাড়ি ভাড়া নিতে চাইছেন, তাঁদের আদি বাসস্থান-এই সমস্ত যাবতীয় তথ্য জানতে হবে। এবং ভাড়াটিয়াদের পরিচয়পত্রের যাবতীয় নথির কপি পুরসভায় জমা দিতে হবে। বাড়ির মালিককে নিজের কাছেও ওই নথিগুলির প্রতিলিপি রাখতে হবে।

Advertisement

ঘাটাল পুরসভা এলাকায় কমবেশি সব ওয়ার্ডেই বাড়ি ভাড়া দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তবে শহরের কুশপাতা, কোন্নগর, গোবিন্দপুর, বিবেকানন্দ পল্লি-সহ প্রায় আট-দশটি এলাকায় বহু বাড়িতে ভাড়াটে রয়েছে। ঘাটাল মহকুমার সদর শহর হওয়ায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের লোকও নানা কাজে শহরে বসবাস করেন। পুরসভা সূত্রে খবর, শহরে যাতে কেউ কারও বাড়ি ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কাজকর্ম চালাতে না পারে, সেজন্য পুরসভার এই নজরদারি শুরু করতে চলেছে। তাছাড়া শহরের প্রতিটি বাড়ির ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত নথি পুরসভার হাতে থাকলে কোনও বাড়িকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত বাড়ি বলে চিহ্নিত করে কর আদায়েও সুবিধা হবে। পুরসভার চেয়ারম্যন বিভাস ঘোষ বলেন, “আমার একটি নির্দিষ্ট নিয়মাবলী তৈরি করছি। সকলকে সেগুলি দিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রচার করার সময়ও ওই সব তথ্য সকলকে জানানো হবে। ফলে কেউ ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত তথ্য গোপন রাখলেও প্রতিবেশীরা সেই বিষয়ে পুরসভায় জানিয়ে দিতে পারবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement