শিল্পী ভাতা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে দশ হাজার টাকা দাবি করেছেন তৃণমূল নেতা। টাকা না-পেলে ভাতা বন্ধ এমনকী প্রাণ নাশের হুমকিও দিয়েছেন তিনি। এমনই অভিযোগ উঠল চন্দ্রকোনা ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে। সমিতির সভাপতি শম্ভুনাথ নায়েকের বিরুদ্ধে বিডিওকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন এক প্রতিমা শিল্পী। অভিযোগ হয়েছে চন্দ্রকোনা থানায়ও সঙ্গে রয়েছে একটি বিডিও ফুটেজও।
ঘটনায় ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে চন্দ্রকোনা ১ ব্লক জুড়ে। বিডিও সুরজিৎ ভড় বলেন, “আমি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ বিডিও জানিয়েছেন দশরথ দোলই নামে ওই প্রতিমা শিল্পীকে তাঁর সব রকম নথি নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। চন্দ্রকোনা থানার তরফেও জানানো হয়েছে, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষ না হলে কিছু বলা যাবে না। অভিযুক্ত শম্ভুনাথ নায়েক অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। দশরথবাবুকে শিল্পী ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা আমিই করে দিয়েছি। কিন্তু টাকা চাওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
এ দিকে টাকা চাওয়ার বিষয়ে একটি ভিডিও ফুটেজও বিডিও-র হাতে তুলে দিয়েছেন দশরথবাবু। সে বিষয়েও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেছেন, ‘‘আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবই সম্ভব। পুলিশ ও বিডিও সাহেব ঘটনার তদন্ত করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। আমি চাই ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের মনোহরপুর-২ পঞ্চায়েতের চাঁদুর গ্রামের বৃদ্ধ দশরথ দোলই পেশায় মৃৎশিল্পী। সম্প্রতি ১২ হাজার টাকা সরকারি ভাতা পান। দশরথবাবুও জানিয়েছেন, ‘‘আমাকে শম্ভুনাথ বাবুই টাকা পাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এককালীন ১২ হাজার টাকা পেয়েছি। কিন্তু তারপর উনি আমাকে জেলা পরিষদের ক্যাশ বিভাগে জমা দিতে হবে বলে দশ হাজার টাকা চান।’’ দশরথবাবুর দাবি তিনি তিন হাজার টাকা ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। এরপর আরও সাত হাজার টাকা দেওয়ার জন্য হুমকি দেন শম্ভুনাথবাবু।
এ দিকে প্রশ্ন উঠছে এককালীন ১২হাজার টাকা পেলেন কী করে দশরথবাবু? বিডিও নিজেও জানিয়েছেন বিষয়টা এখনও পরিষ্কার নয়। এখন সাধারণ বার্ধক্য ভাতা ছাড়াও শিল্পী ভাতা-সহ নানা ধরনের সহায়তা দেয় সরকার। দশরথবাবু নিজেও তাঁর অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেননি ওই টাকা তিনি ঠিক কোন খাতে পেয়েছিলেন। তাঁর দাবি, আমাকে শিল্পী ভাতাই বলা হয়েছিল। সরকার আমার অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছে।’’
ঘাটালের মহকুমাশাসক যতীন্দ্রবিমল কর জানান, ‘‘এক একটি ভাতা এক একরকম সময়ে পাওয়া যায়। কোনটি মাসিক, কোনটি ষণ্মাসিক। বিডিওকে ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। তারপরই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”
অন্য দিকে জানা গিয়েছে, ঘটনা জানাজানি হতেই দলীয় ভাবেও শুরু করেছে তৃণমূল। চন্দ্রকোনা ১ ব্লক সভাপতি চিত্ত পাল বলেন, “ওই উপভোক্তা আমাদের কিছু জানাননি। পুলিশি তদন্ত হোক। তারপর এ বিষয়ে মন্তব্য করব।’’ যদিও তাঁর সাফাই, দলের ভাবমূর্তিই নষ্ট করতে কেউ এ কাজ করাতেও পারেন। তিনি বলেন, ‘‘শম্ভুনাথবাবু খুব সৎ মানুষ। তবে তদন্তে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হলে দলীয় ভাবে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”