ঝাড়গ্রামের শ্যামসুন্দরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
টিচার-ইনচার্জ মোরগ লড়াইয়ের আসরে ব্যস্ত থাকেন। শুধু মোরগ লড়াই-ই নয়, আরও বহুবিধ শখ তাঁর। তাই তিনি স্কুলে আসার সময় পান না। টিচার-ইনচার্জের দেখাদেখি বাকি তিন সহ শিক্ষক-শিক্ষিকাও স্কুলে অনিয়মিত আসায় গত তিন মাস ধরে ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামসুন্দরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন ও পরিচালন ব্যবস্থা কার্যত লাটে উঠেছে! পুজোর ছুটির পর থেকেই স্কুলে মিড ডে মিলও বন্ধ। গত ডিসেম্বর মাসে টিচার-ইনচার্জ সহ চার শিক্ষক-শিক্ষিকার কেউই স্কুলমুখো হননি। যে কারণে চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক মূল্যায়ন হয়নি। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা ‘বিদ্যালয় পরিত্যাগ নিদর্শন শংসাপত্র’ (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) না-পাওয়ায় তারা নতুন শিক্ষাবর্ষে অন্য স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছে না। দু’বার টিচার ইন-চার্জ রবীন্দ্রনাথ মাহাতোকে শো-কজ করেছে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতর। এমনকী গত ডিসেম্বর থেকে রবীন্দ্রনাথবাবু-সহ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া ৯১ জন।
অবশেষে, সোমবার ‘ফাঁকিবাজ’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামল খুদে পড়ুয়ারা। এক মাস পরে সোমবার স্কুলটি খোলা হয়। তবে এ দিন টিচার ইন-চার্জ স্কুলে যাননি। অপর এক সহ-শিক্ষকও অনুপস্থিত ছিলেন। কেবলমাত্র দু’জন সহ শিক্ষিকা সোমা হেমব্রম ও শকুন্তলা হেমব্রম এ দিন স্কুলে গিয়েছিলেন। দুই শিক্ষিকাকে নাগালে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রছাত্রীরা। সকাল এগারোটা থেকে শিক্ষিকাদের প্রথমে স্কুলের বাইরে ঘেরাও করে রাখে পড়ুয়ারা। গ্রামবাসী ও অভিভাবকেরাও ঘেরাও-বিক্ষোভে যোগ দেন। এর পর দুই শিক্ষিকাকে স্কুলের অফিসঘরে ঢুুকিয়ে তালা বন্ধ করে রাখেন গ্রামবাসী। খবর পেয়ে স্কুলে এসে পৌঁছয় ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। গ্রামবাসীর দাবি মেনে চতুর্থ শ্রেণির ১৯ জন পড়ুয়াকে তৎক্ষণাৎ ট্রান্সফার সার্টিফিকেট লিখে দেন দুই শিক্ষিকা। নিয়মিত স্কুলে আসারও প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে বিকেল চারটে নাগাদ দুই শিক্ষিকা ঘেরাও-মুক্ত হন। দুই সহ-শিক্ষিকাই নিয়মিত স্কুলে না আসার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “টিচার-ইনচার্জ গরহাজির থাকায় তিন মাস ধরে অনিয়মিত স্কুল হচ্ছিল। আমাদের পক্ষে পড়ানোর পাশাপাশি, স্কুলের প্রশাসনিক কাজকর্ম করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মাস খানেক আমরাও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিই। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থেই এ দিন আমরা স্কুলে এসেছিলাম।”
গ্রামবাসী ও পড়ুয়াদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, টিচার-ইনচার্জ মোরগ লড়াইয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন। আরও নানা শখে মশগুল থাকেন তিনি। গত পাঁচ মাস তিনি মর্জিমাফিক স্কুলে আসেন। স্কুল নিয়ে কোনও মাথাব্যথাই নেই কর্তৃপক্ষের।
টিচার-ইনচার্জ রবীন্দ্রনাথ মাহাতো মোরগ লড়াইয়ের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “মোরগ লড়াই করাই। এটা অস্বীকারের জায়গা নেই। তবে স্কুলেও যাই। নানা সমস্যায় ইদানিং অনিয়মিত যাচ্ছি।” তাঁর দাবি, “বামপন্থী সমর্থক বলে কেউ কেউ পিছনে লেগেছে। এলাকার পড়ুয়া চতুর্থ শ্রেণির পরে কেউ হাইস্কুলে ভর্তি হয় না। স্কুলে কেবল ওরা মিড ডে মিল খেতে আসে। কিছু সমস্যার জন্য মিড ডে মিল বন্ধ রয়েছে।” শো-কজ ও বেতন বন্ধ প্রসঙ্গে কোনও সদুত্তর দেননি রবীন্দ্রনাথবাবু। ঝাড়গ্রাম পশ্চিম চক্রের ভারপ্রাপ্ত অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রকাশ সরকার বলেন, “সদ্য দায়িত্বে এসেছি। মেটানোর চেষ্টা করছি।” এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে, জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরা।