বক্সীর বার্তা কি দলে রদবদলের ইঙ্গিত, জল্পনা

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, স্বজনপোষণে জেরবার দল। অবিলম্বে পদক্ষেপ না করলে দলেরই একটা অংশ যে বিজেপি-র দিকে চলে যেতে পারে, সে বিষয়ে নিঃসংশয় তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বও। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সেই সম্ভাবনা রুখতেই দু’ই মেদিনীপুরের নেতাদের নিয়ে কিছু দিন আগে তমলুকে বৈঠক করার পরেই, ফের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে বৈঠক করতে হল পশ্চিম মেদিনীপুরে। রইল স্পষ্ট বার্তাও, ‘নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মেয়াদে ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয়ে যাব, এটা ভাবলে ভুল হবে। মনে রাখবেন, উপরে ভগবান আছে, নীচে মানুষ!’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৬
Share:

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, স্বজনপোষণে জেরবার দল। অবিলম্বে পদক্ষেপ না করলে দলেরই একটা অংশ যে বিজেপি-র দিকে চলে যেতে পারে, সে বিষয়ে নিঃসংশয় তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বও।

Advertisement

তৃণমূলের অন্দরের খবর, সেই সম্ভাবনা রুখতেই দু’ই মেদিনীপুরের নেতাদের নিয়ে কিছু দিন আগে তমলুকে বৈঠক করার পরেই, ফের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে বৈঠক করতে হল পশ্চিম মেদিনীপুরে। রইল স্পষ্ট বার্তাও, ‘নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মেয়াদে ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয়ে যাব, এটা ভাবলে ভুল হবে। মনে রাখবেন, উপরে ভগবান আছে, নীচে মানুষ!’

তৃণমূল নেতৃত্ব আগেও বহুবার এমন বার্তা দিয়েছেন। তবু কাজ হয়নি। ফের বার্তা দিয়ে কী লাভ? দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নেতারাও বুঝে গিয়েছেন, আর শুকনো ‘বুলি’তে চিঁড়ে ভিজবে না। রাজ্য সভাপতি যে বার্তা দিয়ে গেলেন, তার ফল মিলবে কয়েক দিন পরেই, ২৪ নভেম্বর যে দিন স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় আসবেন। সে দিন হয়তো সংগঠনেও রদবদল হতে পারে। যার প্রাথমিক পর্বের হুঁশিয়ারি এটাই।

Advertisement

দলের এক নেতার কথায়, “বুঝতে হবে, বিজেপি ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। অনেক দলীয় নির্বাচিত সদস্যও বিজেপি যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এমন সময়েও দল কড়া না হলে বিপদ।” সেই বিপদের কথা শুনিয়েছেন রাজ্য সভাপতিও, ‘মনে রাখবেন, মানুষ দল থেকে বিমুখ হয়ে গেলে তখন চাওয়াও থাকবে না, পাওয়াও থাকবে না। এটা আমাদের কেউ কেউ ভুলে গিয়েছে!’

তৃণমূলের অন্দরের খবর, বর্তমানে দু’জন নেতার কথায় পশ্চিম মেদিনীপুরে দল পরিচালিত হয়। জেলা সভাপতি দীনেন রায় ও কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ। অনেক বৈঠকের খবর পর্যন্ত পান না অন্য তিন কার্যকরী সভাপতিও! পেশায় আইনজীবী প্রদ্যোৎবাবু কার্যকরী সভাপতি ছাড়াও দলের একাধিক পদে রয়েছেন। তিনি পরিবহণ দফতরের জেলা বোর্ডের সদস্য, একই সঙ্গে জেলা পরিকল্পনা কমিটিরও সদস্য! এ রকম বহু নজির রয়েছে। জেলা পরিষদেও রয়েছে নানা বিরোধ। কোনও ক্ষেত্রে কর্মাধ্যক্ষদের মধ্যে বনিবনার অভাব, তো কোনও ক্ষেত্রে কর্মাধ্যক্ষের সঙ্গে সভাধিপতির দূরত্ব। কিছু ক্ষেত্রে আবার স্বজনপোষণ-দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যাকে কেন্দ্র করেই ভুটাতে (বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন) হার। তা বিশদে জানতে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও বিশ্ববিদ্যালয় সফরের কথা রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। দলের এক নেতার কথায়, ‘বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্য নেতৃত্ব জেলার সংগঠন ও প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। এখনও কাজ চলছে। রিপোর্টে রাজ্য নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ বলেই দু’বার বৈঠকে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি। এ বার নেত্রী স্বয়ং পদক্ষেপ করবেন।”

যদিও এ সব প্রশ্নের সদুত্তর এড়িয়ে জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “আমরা সংগঠন আরও মজবুত করারই চেষ্টা করছি।”

বস্তুত, আগামী বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এখন থেকেই সংগঠনের দিকে বিশেষ নজর দিতে চাইছে তৃণমূল। বুথ থেকে জেলা স্তর, সর্বত্রই সংগঠনকে চাঙ্গা করতে না পারলে যে ভয়ঙ্কর বিপদ, তা সকলেরই জানা। বিশেষত, পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের তেমন কর্মসূচি না দেখা গেলেও বেশ কিছু এলাকায় সিপিএম তলে তলে সংগঠনকে জাগিয়ে রেখেছে। যেখানে অসমর্থ হয়েছে সেখানে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সকলে বিজেপিতে ঝুঁকেছে। ফলে আগামি বিধানসভা নির্বাচনে এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে যে সমস্যায় পড়তে হবে, তা প্রকাশ্যে স্বীকারও করে নিয়েছে দলের রাজ্য সভাপতি।

তিনি সকলকে জানিয়ে গিয়েছেন, ‘সামনে আরও একটা পরীক্ষা আসছে। তৈরি হতে হবে।’ পাশাপাশি, প্রস্তুতি সভা থেকে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তাও দেন তিনি। বুঝিয়ে দেন, মানুষকে গোলাম ভাবলে ভুল হবে! জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর দলীয় বৈঠকের আগে যে বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে দুই মেদিনীপুরের রাজনৈতিক মহল। এখন সকলে দলনেত্রী এসে কী বার্তা দেন, সে দিকেই সাগ্রহে চেয়ে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement