নির্বাচন কমিশনের সাংবাদিক বৈঠক।
পুরসভা নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হল বুধবার। পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬টি পুরসভায় নির্বাচন হবে আগামী ২৫ এপ্রিল। বুধবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে মনোনয়নপর্ব। চলবে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত। ২৬ মার্চ মনোনয়নপত্র খতিয়ে দেখা হবে। ২৮ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এরপরই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে। অবশ্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলই দোলাচলে। ভোটের দিন ঘোষণার পরেও বুধবার দিনভর কোনও দলই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এ দিন কেউই মনোনয়নপত্র তোলেননি। তবে সব দলই জানিয়েছে, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই তা চূড়ান্ত হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই, রামজীবনপুর, খড়ার-এই ৬টি পুরসভার ৯৫টি ওয়ার্ডে নির্বাচন রয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র খড়্গপুর পুরসভা কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। বাকি ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভাই তৃণমূলের দখলে। ফলে এই পাঁচ পুরসভা দখলে রাখার পাশাপাশি রেলশহরের পুরসভা দখল করাই চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের কাছে। বামফ্রন্টের কাছে চ্যালেঞ্জ, নির্বাচনে ধারাবাহিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করা। ছ’টি পুরসভাতেই সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই দেওয়া। কংগ্রেসের কাছে চ্যালেঞ্জ, খড়্গপুর পুরসভা দখলে রাখা। পাশাপাশি, ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভায় ভাল ফল করা। অন্য দিকে, গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে খড়্গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে বিজেপিই। তাই বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ, রেলশহরের পুরসভা দখল।
রাজনৈতিক দলগুলি প্রার্থী তালিকা না প্রকাশ করলেও বেশ কিছু এলাকায় দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথাও প্রার্থীর নামেই দেওয়াল লিখন হচ্ছে। কোথাও বা প্রার্থীর নাম বাদ রেখে দলের নাম আর প্রতীক আঁকা হচ্ছে। কিন্তু কেন বুধবার পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারল না? দলীয় সূত্রে খবর, সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে আলোচনা এগোচ্ছে। তবে সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বিজ্ঞপ্তি জারির পর অবশ্য সব দলই নড়েচড়ে বসেছে। নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক করতে নেতৃত্ব বৈঠকও করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পুরভোটে রেলশহরে খড়্গপুর বিকাশ মঞ্চের সঙ্গে বামেদের আসন সমঝোতা হয়েছিল। এ বার বিকাশ মঞ্চের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হওয়ার কথা। মঞ্চের পক্ষ থেকে কংগ্রেসের কাছে তিনটি আসন চাওয়া হয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। রেলশহরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬টি ওয়ার্ডের প্রার্থী নিয়ে সহমতে পৌঁছেছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। তবে ৯টি ওয়ার্ডের প্রার্থী নিয়ে জট রয়েছে। দলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী এবং প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল নিজেদের দাবিতে অনড় থাকায় এই ৯টি আসন নিয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। অন্য দিকে, খড়্গপুরে বিজেপির মধ্যেও দলীয় কোন্দল রয়েছে। ৩৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে চেয়ে ১৪০ জন আবেদন করেছেন। ফলে, প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছেন নেতৃত্ব। সমস্যায় রয়েছেন বামেরাও। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে সিপিএম ১৮টিতে ও সিপিআই ১৭টিতে প্রার্থী দেবে। পরে ফরওয়ার্ড ব্লক ২টি আসন দাবি করে। এ নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ঘাটালে ১৩, ১৪, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড-সহ কয়েকটি ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। একই সমস্যা রয়েছে চন্দ্রকোনা, খড়ারে। এক সময় রামজীবনপুরে বামেদের বিরুদ্ধে মহাজোট করেছে তত্কালীন বিরোধীরা। এ বার এখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের মহাজোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণা নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ও বলেন, “স্থানীয় স্তরে আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে। দ্রুতই তালিকা প্রকাশ হবে।” একই দাবি সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণার। কংগ্রেসের অবশ্য আলাদা ভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার ভাবনা নেই। খড়্গপুরের ক্ষেত্রে দলের তরফে নির্বাচনী কাজকর্ম দেখভালের দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হয়েছে প্রবীণ বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহনপালকে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “ছ’টি পুরসভার সব আসনে দলের প্রার্থী থাকবে। সেই মতোই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”
তবে বিজ্ঞপ্তি জারির পর জট কাটিয়ে, প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে কবে থেকে পুরোদস্তুর প্রচারে নামে রাজনৈতিক দলগুলো, সেটাই দেখার!