ফের আক্রান্ত নির্বাচন কর্মীরা, অভিযুক্ত সেই শাসক দলই

নির্বাচন কমিশনের কাজ করতে গিয়ে ফের মার খেলেন ‘মডেল কোড অব কনডাক্ট’ (এমসিসি)-এর কর্মীরা। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি এবং জামবনিতে। জেলায় কেশপুরের পরে এমন অভিযোগ উঠল দ্বিতীয় বার। এবং এ বারও অভিযুক্ত সেই শাসক দল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৭
Share:

শালবনিতে ভাঙচুর হওয়া নির্বাচন কমিশনের এমসিসি-র সদস্যদের গাড়ি।—নিজস্ব চিত্র

নির্বাচন কমিশনের কাজ করতে গিয়ে ফের মার খেলেন ‘মডেল কোড অব কনডাক্ট’ (এমসিসি)-এর কর্মীরা। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি এবং জামবনিতে। জেলায় কেশপুরের পরে এমন অভিযোগ উঠল দ্বিতীয় বার। এবং এ বারও অভিযুক্ত সেই শাসক দল।

Advertisement

ঘটনার পরে প্রতি ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করলেও, কাজের সময়ে এমসিসি কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রচারের হালচাল নজরবন্দি করার মতো কাজ করতে গিয়ে তাঁরা যে অনেকটাই অরক্ষিত থেকে যাচ্ছেন, তা আরও এক বার প্রমাণ হয়েছে এ দিন। এই পরিস্থিতিতে এমসিসি কর্মীদের জন্য আলাদা পাহারার ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছে প্রশাসনও। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এমন ঘটনা বার বার ঘটলে কমিশন তো শেষ পর্যন্ত আমাদেরই ধরবে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, “এই আক্রমণ দেখিয়ে দিচ্ছে যে শাসক দল ভয় পেয়েছে। এটা লক্ষ্যণীয়, যে হামলা বেড়ে গেল রাজ্যে দু’টো পর্বের ভোট হওয়ার পরে। তৃণমূল যত বুঝতে পারছে যে তারা পায়ের তলায় জমি হারাচ্ছে, তত মরিয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ অবিলম্বে এ সব ঠেকাতে ব্যবস্থা নিন।”

Advertisement

পক্ষান্তরে, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দলের স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল কোনও ভাবেই জড়িত নয়। জঙ্গলমহলের সব মানুষের মন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতে নিয়েছেন। সেখানে তৃণমূলের জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “তৃণমূলের নাম ব্যবহার করে সিপিএমের লোকজন এই সব গণ্ডগোল করছে। আর দোষ দিচ্ছে আমাদের লোকেদের উপরে।”

চলতি ভোট-মরসুমে এমসিসি সদস্যদের নিগ্রহের প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল হাবরায়। সেখানে সরকারি ভবনে তৃণমূলের ফ্লেক্স-ব্যানার খোলানোর ব্যবস্থা করায় আক্রান্ত হন বিডিও। পরে হাওড়া ও মালদহের মানিকচক এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরেও এমসিসি সদস্যদের মারধরের অভিযোগে ওঠে তৃণমূলের কর্মীদের বিরুদ্ধে। মানিকচকের ঘটনায় রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের জামাই-সহ সাত জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’জায়গায় এমসিসি কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। প্রথম ঘটনা শালবনির কলসিভাঙার। এ দিন সকালে শালবনির গড়মাল ও সাতপাটি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচার-কর্মসূচি ছিল মেদিনীপুর কেন্দ্রের বাম-প্রার্থী প্রবোধ পণ্ডার। গড়মাল থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলে পুলিশের গাড়ি ছাড়াও ছিল এমসিসি সদস্যদের জন্য আলাদা গাড়ি। এমসিসি-র গাড়িতে চালক ছাড়া ছিলেন দুই সরকারি কর্মী। তাঁরা মিছিলের ভিডিও তুলছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, এমসিসি-র গাড়ি যখন ভীমচকে দাঁড়ায়, তখন মিছিল প্রায় তিন কিলোমিটার এগিয়ে গিয়েছিল। এগিয়ে গিয়েছিল পুলিশের গাড়িও। তখনই এমসিসি-র গাড়ি ঘিরে ধরে তৃণমূলের লোকজন।

গাড়ির চালক প্রসেনজিৎ দুলে বলেন, “গাড়ি ঘিরে কিছু লোক জানতে চায়, কেন এলাকায় এসেছি। পরিচয় দিয়েও লাভ হয়নি। একপ্রস্ত কথা কাটাকাটির পরেই ওরা আমাদের মারধর করে, গাড়ি ভাঙচুর করে।” প্রবোধবাবুর দাবি, “নানা জায়গায় এমসিসি কর্মীদের নজরে এবং সঙ্গে থাকা ক্যামেরায় শাসক দলের নানা ধরনের গা-জোয়ারি, বিধিভঙ্গের নমুনা ধরা পড়ছে। সেই আক্রোশেই এই হামলা।” তৃণমূল জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতির বক্তব্য, “গাড়ি ভাঙচুর করা অন্যায়। কী ঘটেছে দেখছি।”

শালবনির বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাস পুলিশে লিখিত অভিযোগ করেন। তবে নির্দিষ্ট কারও নাম করেননি তিনি। বিডিও বলেন, “কিছু লোক ওই হামলা চালিয়েছে। তারা কারা জানি না বলেই, নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি।” তবে ধৃত অনিল মাহাতোকে দলীয় সমর্থক বলে মেনে নিয়েছেন তৃণমূলের শালবনি ব্লক সভাপতি নেপাল সিংহ। তবে তাঁর বক্তব্য, “শুনেছি, ঘটনার সময় ও দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। তবু পুলিশ কেন ওকে ধরল বুঝতে পারছি না।” আজ, রবিবারের মধ্যে শালবনির ঘটনায় জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতর।

দ্বিতীয় ঘটনা ঝাড়গ্রামের জামবনির। বেলা ১২টা নাগাদ কাপগাড়িতে কেন্দ্রের অনুদান পাওয়া এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়ালে ঝাড়গ্রামের তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেনের প্রচার-লিখন মুছতে যান এমসিসি সদস্যেরা। তখন তৃণমূলের সমর্থকেরা তাঁদের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। আহত হন এমসিসি-র ফ্লাইং স্কোয়াডের সদস্য গণপতি হাঁসদা, ব্লকের সমবায় পরিদর্শক অজয়কুমার মজুমদার, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী স্বপন ধাউড়িয়া, রবি বেহারা এবং ক্যামেরাম্যান গুণধর মান্ডি। পরিচয় দেওয়ার পরেও তাঁদের মাটিতে ফেলে কিল-চড়-লাথি মারা হয়। স্বপনবাবু মাথায় চোট পান। তাঁকে চিল্কিগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে।

জামবনির ঘটনাতেও ধৃত যুব তৃণমূলের কাপগাড়ি অঞ্চল সভাপতি কানু চট্টোপাধ্যায়-সহ তিন জন। ঝাড়গ্রামের এসপি বলেন, “এমসিসি সদস্যদের কাজে বাধাদান ও মারধরে তিন জনকে ধরা হয়েছে।” জামবনি ব্লক তৃণমূল সভাপতি সমীর ধল বলেন, “দেওয়ালটি যে সরকারি তা জানা ছিল না। এমসিসির লোকজনকে কানুবাবুরা চিনতে পারেননি বলেই কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement