জামবনি

পশ্চিমে এই প্রথম জোনালের দায়িত্বে মহিলা

নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক কদম এগোল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। জঙ্গলমহলে সিপিএমের এক মহিলা নেত্রীকে জোনাল কমিটির সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হল। সিপিএম সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই প্রথম কোনও মহিলাকে জোনাল সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

হেনা শতপথী। —নিজস্ব চিত্র।

নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক কদম এগোল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। জঙ্গলমহলে সিপিএমের এক মহিলা নেত্রীকে জোনাল কমিটির সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হল। সিপিএম সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই প্রথম কোনও মহিলাকে জোনাল সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সিপিএমের জামবনি জোনাল কমিটির সম্মেলনে নতুন জোনাল সম্পাদক হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হলেন হেনা শতপথী। বছর আঠান্নোর হেনাদেবী পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। তাঁর বাড়ি জামবনির দুবড়া গ্রামে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তরুণ রায় বলেন, “এর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে কোনও মহিলা জোনাল সম্পাদকের দায়িত্ব পান নি। হেনাদেবীই জেলায় প্রথম মহিলা জোনাল সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হলেন।” এদিন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা দলের তরফে জামবনির দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তরুণ রায়ের উপস্থিতিতেই জামবনির ব্লক-সদর গিধনিতে দলীয় কার্যালয়ে জামবনি জোনাল কমিটির সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

এতদিন জামবনি জোনাল কমিটির সম্পাদক পদে ছিলেন ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক অমর বসু। সিপিএমের দলীয় সূত্রের খবর, ২০০৮ ও ২০১১ সালে দু’দফায় জোনাল সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন অমরবাবু। কিন্তু বর্ষীয়ান অমরবাবু শারীরিক কারণে জোনাল সম্পাদক পদের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারছিলেন না। সেই কারণেই তিনি নিজেই অব্যহতি চেয়েছিলেন। এ দিন বিদায়ী জোনাল সম্পাদক অমরবাবুই নতুন জোনাল সম্পাদক হিসেবে হেনাদেবীর নাম প্রস্তাব করেন। সর্বসম্মতিক্রমে হেনাদেবীকে জোনাল সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। আগে জোনাল কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ১১ জন। সম্মেলনে নতুন ১৫ জন জোনাল সদস্যকে নির্বাচিত করা হয়। ওই ১৫ জনের মধ্যে অমরবাবু ও হেনাদেবী-সহ পুরনো ১১ জন সদস্য রয়েছেন। বাকি চার জন নতুন সদস্য।

Advertisement

অবিবাহিতা হেনাদেবীর বাড়ি জামবনির দুবড়া গ্রামে। পেশায় তিনি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। ’৭৭ সালে মহিলা সংগঠনের মধ্যে দিয়ে বাম রাজনীতিতে আসেন হেনাদেবী। ১৯৯৩ সালে সিটু প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতির জেলা সম্পাদক হন। ১৯৯৯ সালে জামবনি লোকাল কমিটির সদস্য হন হেনাদেবী। ২০০৮ সালে গিধনি লোকাল কমিটির সম্পাদকও হন। ওই বছরেই জামবনি জোনাল কমিটিরও সদস্য হন হেনাদেবী। ২০১১ সালে হেনাদেবীকে গিধনি লোকাল কমিটির সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে দলের জেলা কমিটির সদস্য করা হয়।

সিপিএম সূত্রের খবর, ‘ডাকাবুকো’ হেনাদেবী দলের দুর্দিনেও সংগঠনের কাজ করে চলেছেন। এলাকায় অসম্ভব পরিচিত মুখ তিনি। ফলে, অমরবাবুই জোনাল সম্পাদক হিসেবে এ দিন হেনাদেবীর নাম প্রস্তাব করেন। বিদায়ী জোনাল সম্পাদক অমর বসু বলেন, “৭৫ বছর বয়সে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছি। তাই এবার অব্যহতি চেয়েছিলাম। হেনাদেবীর জনসংযোগ প্রশ্নাতীত। উনি ভীষণই কর্মক্ষম। বিস্তর ছোটাছুটিও করতে পারেন। আমার বিশ্বাস উনি খুব ভালভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।”

জামবনি ব্লকটি এক সময়ে সিপিএমের মজবুত ঘাঁটি ছিল। কেবল ১৯৯৮ সালে জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করে নেয় ঝাড়খণ্ড পার্টি। ২০০৩ সালে অবশ্য পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা পুনর্দখল করে নেয় সিপিএম। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্য পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে সিপিএমের দুর্দিনেও দলের সংগঠন মেরামতের কাজে হেনাদেবীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য বলে মানছেন তাঁর দলেরই কর্মীরা।

হেনাদেবীর বক্তব্য, “আমি দলের একনিষ্ঠ কর্মী। দলের দায়িত্ব পালন করব। মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলন করছি। সেটাই করে যাব। জঙ্গলমহলের মহিলাদের সংগঠনে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement