পুলিশ পরিচয় দিয়ে এক ব্যবসায়ীর গাড়ি দাঁড় করিয়ে নগদ টাকা এবং সোনা-রুপোর আংটি, মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়েছে শালবনিতে। ঘটনাটি ঘটে শনিবার সন্ধ্যায়। দিলীপ তিওয়ারি নামে কলকাতার বড়বাজারের ওই ব্যবসায়ী রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশে অভিযোগ জানান। তদন্ত নেমে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খোওয়া যাওয়া ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মধ্যে ১ লক্ষ ৩ হাজার টাকা উদ্ধারও করা হয়েছে। পাওয়া গিয়েছে একটি সোনার ও একটি রুপোর আংটি এবং মোবাইলটি। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “এই ঘটনায় জড়িতরা নিজেদের পুলিশের লোক বলেই পরিচয় দিয়েছিল। ইতিমধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও এক জনের খোঁজ চলছে।” সোমবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হলে ধৃত তিন জনের পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। ধৃতেরা কোনও চক্রের সঙ্গে জড়িত কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, গত শনিবার বিকেলে জওহর আলি মল্লিক নামে এক পরিচিতের মোটর বাইকে চেপে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে আসছিলেন দিলীপ তিওয়ারি। মাঝপথে বৃষ্টি নামায় শালবনির দক্ষিণশোলে রাস্তার এক ধারে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। দক্ষিণশোলের উপর দিয়েই গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। বৃষ্টি না থামায় দিলীপবাবু গাড়ি ভাড়া নিয়ে খড়্গপুরে ফেরার কথা ভাবেন। ঠিক হয়, বৃষ্টি থামলে জওহর মোটর বাইকেই বিষ্ণুপুর ফিরে যাবেন। ভাড়া গাড়ির খোঁজও মেলে। চালক ছিলেন ফিরদৌস খান।
পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতার ওই ব্যবসায়ীকে গাড়িতে তুলে রওনা হন ফিরদৌস। তবে সে মেদিনীপুর হয়ে খড়্গপুরের দিকে না গিয়ে আনন্দপুরের রাস্তা ধরেন চালক। দিলীপবাবু অবশ্য বুঝতে পারেননি তাঁকে ভুল রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আনন্দপুরের রাস্তায় ঢোকার পরই উল্টো দিক থেকে একটি গাড়ি এসে দিলীপবাবুর গাড়ির পথ আটকায়। ওই গাড়িতে চালক-সহ তিনজন ছিলেন। তিনজনই নিজেদের পুলিশের লোক বলে পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীর গাড়িতে তল্লাশি শুরু করে। তাঁকে নানা প্রশ্নও করা হয়।
তারপর ওই তিন জন দিলীপবাবুকে বলে, তাঁর কাছে যা যা আছে, সব দিয়ে দিতে হবে। না হলে বৈধ কাগজপত্র না থাকার জন্য তাঁর নামে মামলা হতে পারে। ফিরদৌসও ওই ব্যবসায়ীকে পরামর্শ দেন, সব দিয়ে দেওয়াই ভাল। এরপর থেকে দিলীপবাবুর কাছে থাকা নগদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, দু’টি সোনার আংটি, একটি রূপোর আংটি এবং একটি মোবাইল নিয়ে পালায় ওই তিনজন। আর ফিরদৌস ওই ব্যবসায়ীকে খড়্গপুরে পৌঁছে দেয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গাড়ির চালক ফিরদৌসও এই চক্রে জড়িত। তিন ছিনতাইকারী দিলখুশ খান, শেখ রাজু এবং শেখ সাদেক তাঁর পরিচিত। দিলখুশ আবার ফিরদৌসের ভাই। রবিবার রাতে সুন্দ্রা থেকে ফিরদৌস, রাজু ও সাদেককে গ্রেফতার করে পুলিশ। নগদ অর্থ, সোনা-রূপোর আংটি, মোবাইল উদ্ধারের পাশাপাশি দু’টি গাড়িও আটক করা হয়। তবে দিলখুশের হদিস মেলেনি। তাঁর খোজে তল্লাশি চলছে।