আগামী ২৪ নভেম্বর মেদিনীপুরে দলের সাংগঠনিক সভা করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই মেদিনীপুর জেলার দলীয় নেতৃত্বকে নিয়েই হবে এই সভা। নেত্রীর সভার প্রস্তুতি হিসেবে গত মঙ্গলবার তমলুকে দুই জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে গিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তৃণমূল সূত্রে খবর, এ বার মেদিনীপুর শহরে প্রস্তুতি বৈঠক করতে আসছেন সুব্রতবাবু। আগামী রবিবার দুপুরে বিদ্যাসাগর হলে এই প্রস্তুতি বৈঠক হবে বলে দলীয় সূত্রে খবর। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “আগামী রবিবার দলের এক প্রস্তুতি সভা হবে। সভায় সুব্রত বক্সী উপস্থিত থাকবেন।”
এত ঘনঘন বৈঠক কেন? তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষায় কড়া হচ্ছেন মমতা। বস্তুত, সারদা কেলেঙ্কারি থেকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ বিভিন্ন ঘটনায় তৃণমূলের যোগ নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছে। তাছাড়া, বিভিন্ন এলাকাতেই গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার শাসকদল। তার উপর বিজেপির বাড়বাড়ন্তও তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলীয় সংগঠন আরও মজবুত করতে তৎপর হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আর সে ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি রক্ষায়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি আশিস চক্রবর্তী, “কোনও উদ্ধত আচরণ নয়। নেতা-কর্মীদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হচ্ছে বৈঠকে। ভুলে গেলে চলবে না যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততার জন্যই তৃণমূল সরকারে আসতে পেরেছে। অনেকে নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক হয়েছেন। সেই সততার প্রতীককে কেউ কলঙ্কিত করতে চাইলে তাঁকে রেয়াত করা হবে না। এটা বুঝিয়ে দিতেই বৈঠক।”
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুকের বৈঠকে এই কথাগুলিই জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। পশ্চিম মেদিনীপুরের সভাতেও সেই বার্তাই দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সংযোজিত হয়েছে। আগে প্রশাসনিক কর্তাদের কাছ থেকেই শুধু প্রশাসনিক কাজকর্মের রিপোর্ট সংগ্রহ করা হত। কিন্তু সব সময় সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যেত না। সেই সুযোগে স্থানীয় নেতারা ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন। এতে দলেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হত। এ বার থেকে দলীয় নেতাদেরও সেই রিপোর্ট পাঠাতে বলা হবে। অনেক ক্ষেত্রেই আগে দলীয় নেতা-নেত্রীর কাজকর্ম সম্বন্ধেও পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে রিপোর্ট নিতেন দলনেত্রী। এ বার জেলার নেতাদেরই দলের নেতাদের কাজ নিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে খবর, কোনও এলাকায় কোন কাজ না হওয়ার জন্য কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে, কোনও কাজে বিলম্ব হলে তা কেন হচ্ছে, সেখানে দলীয় নেতৃত্ব বা কোনও গোষ্ঠী বাধা দিচ্ছে কিনা, কী ভাবে তার সমাধান করা যায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে হবে। অন্য দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা সকলেরই জানা। এতে কাদের মদত রয়েছে, কী ভাবে তার সমাধান সম্ভব, তারই সঙ্গে কেউ যদি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, সে সম্বন্ধেও বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাতে বলা হবে।
সংগঠনের বুথ সভাপতি থেকে জেলা সভাপতি, কী ভাবে পরস্পরের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করবেন, কী ভাবে গ্রামেগঞ্জে কাজ করবেন, অন্য দিকে পঞ্চায়েতের সদস্য থেকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি সমন্বয়ের মাধ্যমে কী ভাবে উন্নয়নের কাজ করবেন তার রূপরেখাও তৈরি করে দেবেন তৃণমূল নেত্রী। দলীয় সূত্রে খবর, নেত্রী এটাও জানিয়ে দেবেন, কাজ না করলে দলে তাঁর ঠাঁই নেই।