প্রেমের পসরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
ফের হাজির প্রেমের পার্বণ। আজ, শনিবার ভ্যালেন্টাইন্স ডে, প্রেম উদ্যাপনের দিন। এই দিনটাতে প্রেমিক-প্রেমিকারা একান্তে সময় কাটাতে চান। কিন্তু মেদিনীপুর শহরে তো দু’জনে মিলে নিরিবিলিতে সময় কাটানোর জায়গা মেলাই ভার!
জেলার সদর শহর মেদিনীপুর। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই শহরের অনেক কিছুই পাল্টেছে। আবার অনেক কিছুই বদলায়নি। যেমন, শহরের মধ্যে এখনও কোনও ভাল পার্ক নেই। নেই ঝাঁ চকচকে শপিং মল। মাল্টিপ্লেক্স দূর, শহরে ভাল সিনেমাহল পর্যন্ত নেই। শহরে তেমন ফুডকোর্টও নেই যেখানে আড্ডা দিয়ে অনেকখানি সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। অগত্যা প্রেমিক-প্রেমিকাদের ছুটতে হয় শহরতলির পার্কগুলিতে। একমাত্র সেখানেই যে নিভৃতে কিছুটা সময় কাটানো যায়।
শহরের মধ্যে ভাল পার্ক না থাকায় আক্ষেপের শেষ নেই অল্পবয়সীদের। কলেজ পড়ুয়া রাজা প্রামানিক বলেন, “মেদিনীপুর পুরনো শহর। অথচ এখানে ভাল পার্ক নেই ভাবতেই কেমন লাগে। প্রেমিকার সঙ্গে নিরিবিলিতে বসে একটু গল্প করব, তেমন জায়গাও তো শহরে নেই।” কলেজ পড়ুয়া অন্তরা পালের কথায়, “সত্যিই শহরে প্রেম করার জায়গার বড় অভাব। এই বিশেষ দিনে বন্ধুর সঙ্গে রাস্তাঘাটে ঘুরলে টিপ্পনি শুনতে হয়। তাই শহরতলির পাকের্র্ যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।”
মেদিনীপুর শহরের মধ্যে সব মিলিয়ে তিনটি পার্ক রয়েছে। এর মধ্যে একটি শিশুদ্যান। সেখানে বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোটরাই বেশি যায়। বাকি দু’টির মধ্যে একটি পুলিশ লাইন পার্ক, অন্যটি বিদ্যাসাগর পার্ক। তবে এই দু’টি পার্কই তেমন খোলামেলা না হওয়ায় প্রেমিক যুগলদের না-পসন্দ। তাই ভ্যালেন্টাইনস্ ডে-তে ভিড় বেশি হয় শহরতলির দু’টি পার্ক গোপগড় পাক এবং ক্ষুদিরাম পার্ক। এর মধ্যে আবার গোপগড় পার্কই ছেলেমেয়েদের বেশি পছন্দের! কারণ, এখানে খোলা জায়গাটা বেশ মনোরম। গতবার প্রেম-দিবসে এই দু’টি পার্কে বেশ ভালই ভিড় হয়েছিল। পার্ক-কর্তৃপক্ষের আশা, এ বারও ভাল ভিড় হবে। গোপগড় পার্কের এক কর্মীর কথায়, “অন্তত তিন-চার হাজার লোক হতে পারে!” শহরের একমাত্র শিশুদ্যানের পরিদর্শক সুব্রত সরকার মানছেন, “এই সময় পার্কগুলোয় ভালই ভিড় হয়। তবে বেশি ভিড় হয় শহরতলির পার্কেই।”
ভ্যালেন্টাইনস্ ডে-তে প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার চল রয়েছে। সেই মতো শুক্রবার থেকেই শহরের দোকানগুলোয় তরুণ-তরুণীদের হুজুগ দেখা গিয়েছে। পুরুষ বন্ধুদের জন্য তরুণীরা কিনেছেন শো-পিস, আফটার শেভ লোশন, পারফিউম। প্রেমিকার জন্য ছেলেরা কিনেছেন ব্যাগ, টেডি, আংটি, কস্টিউম জুয়েলারি। কার্ড, কলম, গান-সিনেমার সিডি, মোবাইলও বিকিয়েছে ভালই। মেদিনীপুর শহরের এক দোকানের মালিক গোপাল রায়ের কথায়, “এই সময় গিফ্টের চাহিদা থাকেই। এক- একজনের এক- একরকম পছন্দ। আমাদের তাই সবই রাখতে হয়।”
সময় বদলেছে। উপহারের তালিকায় কিছু রদবদল হয়েছে। তবে চিরায়ত লাল গোলাপের চাহিদায় কিন্তু এতটুকুও ভাটা পড়েনি। শুক্রবারই শহরের বাজারে এক-একটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৮-১০ টাকায়! মেদিনীপুর শহরের এক ফুল দোকানের কর্মী অমল দাস বলেন, “জোগান কম থাকলে দাম বাড়বেই। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে-র সময় গোলাপের দাম একটু বেশি হয়। যা বাজার তাতে শনিবার এক-একটা ফুলের দাম ১৫ টাকাও হতে পারে। পুরো ফোটা ফুলের দামই বেশি হয়। সদ্য ফোটা কিংবা কুঁড়ি ফুলের দাম একটু কম হয়।”