নাটকের একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র।
সুপ্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্যের প্রেক্ষাপটেই দাঁতনে অভিনীত হল সুবোধ ঘোষের পথ নাটিকা সখিসেনার পাঠশালা।
কলকাতার ড্যান্স থিয়েটার গ্রুপ ‘রূপনগর’ বেলদা, দাঁতন ও মনোহরপুরে সোমবার পরিবেশন করল তিরিশ মিনিটের এই পথ নাটিকা। যোগ নেন ষোলো জন শিল্পী। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা নাটিকাটির পরিচালক মধুশ্রী চৌধুরী জানান, একটি বৌদ্ধবিহারের ঢিবিকে কেন সখিসেনার পাঠশালা বলা হয়, তার খোঁজ নিতে গিয়ে সুবোধ ঘোষের লেখাটি হাতে আসে। স্থানীয় তরুণ সেবা সঙ্ঘ ও পাঠাগারের কাছ থেকে জানা যায়, অতীতে এই বিষয়ে পালাগান বা যাত্রা হয়েছে গ্রামে। কিন্তু বর্তমানে তার লেখিত রূপের হদিস নেই। তিনি নিজে বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার সদস্য হওয়ায় সভার প্রবীণ সদস্যদের কাছ থেকে এই কাহিনীর সঙ্গে বৌদ্ধদর্শনের কোথাও প্রভাব আছে কি না জানতে চান।
তিনি বলেন, “সুবোধ ঘোষের কাহিনিটিকে আমরা নাট্যরূপ দিয়ে তাতে রবীন্দ্রনাথের কিছু গান যোগ করেছি। যেগুলি প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। এই স্থানে এসে এই নাটিকা পরিবেশন করে আমরা যেন বৌদ্ধ যুগকে নতুন করে ফিরে পেয়েছি। খুব ভাল লাগছে। তবে ভবিষ্যতে এখানে বৌদ্ধ যুগের ঐতিহাসিক তথ্য ও চরিত্র নিয়ে নাটিকা করব।” বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার সভাপতি হেমেন্দুবিকাশ চৌধুরী বলেন, “কাহিনিটির উদ্ভবের সময়কাল ধরলে ষষ্ঠ-সপ্তম শতাব্দীর কথাই বলা হচ্ছে। বৌদ্ধ দর্শনের জটিল তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা সহজে করে পরিবেশন করতে অনেক সময় লোককাহিনির ব্যবহার করা হতো। আমাদের ধারণা ভালো মন্দের পার্থক্য বোঝাতে এই কাহিনীর সখিসেনা ও হীরা মায়াবিনী চরিত্র দু’টির অবতারণা। তাই এই কাহিনির মধ্যে বৌদ্ধ দর্শনের প্রভাব রয়েছে বলে আমাদের মনে হয়।”
মধুশ্রীদেবীরও দাবি, বৌদ্ধ ধর্মে বিভিন্ন শতাব্দীতে সাধন মার্গের রূপান্তর বা বদল ঘটেছে। সেই সূত্রেই এই কাহিনি আসতে পারে কোনও বৌদ্ধ স্থাপত্যকে ঘিরে। সখিসেনার চরিত্রে প্রিয়তা বড়ুয়া ও অহিমাণিক চরিত্রে অর্ক তলাপাত্র অভিনয় করেছেন। তাঁরা বলেন, “এই রকম একটা ঐতিহাসিক ক্ষেত্রে এত প্রাচীন কাহিনি নিয়ে অভিনয় করে রীতিমত রোমাঞ্চ অনুভব করেছি।”