শহরের পালজাগুলে সাইকেল মিছিলের পুরোভাগে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। ছবিটি তুলেছেন রামপ্রসাদ সাউ।
পুর এলাকা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে তৃণমূলের। মেদিনীপুর ও খড়্গপুরের ভোট কি দলের তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের পক্ষে যাবে? ভোট যত এগিয়ে আসছে, এই প্রশ্ন তাড়া করে বেড়াচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। এর একটি কারণ যদি তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল হয়, অন্য কার ণ তাহলে পুর-পরিষেবা। তার সঙ্গে রয়েছে তারকা প্রার্থীর রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা এবং বয়সের ভার। তৃণমূল সূত্রের খবর, চুয়াত্তর বছর বয়সে প্রথম নির্বাচনী ময়দানে নেমে সন্ধ্যাদেবী সাধারণ ভোটারের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতিতে ভরসা সেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি পুরসভা এলাকাতেই সভা করবেন তিনি। আপাতত ঠিক হয়েছে সভা হবে ২ মে, শুক্রবার। আর তা হলে প্রচারে ঘাটতি কিছুটা কমবে বলেই মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে তাঁরা অবশ্য এ সব মানছেন না। মেদিনীপুর শহর তৃণমূল সভাপতি আশিস চক্রবর্তী ও খড়্গপুর শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “আমরা এই নির্বাচনে জয়ের মার্জিন আরও বাড়াতে চাই। তাই সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। মুখ্যমন্ত্রী এলে আরও ভাল হবে। এই জন্যই দু’টি শহরে মুখ্যমন্ত্রীর দু’টি সভা করবেন বলে জানিয়েছেন।”
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহর। দুই পুর এলাকার মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার। লোকসভার মতো নির্বাচনে এত কাছাকাছি দু’টি এলাকায় দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীর সভা সচরাচর হয় না। তবে এ ক্ষেত্রে উপায় নেই বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। দলের এক নেতার কথায়, “এ ছাড়া উপায় নেই। এক পক্ষ মিটিং ডাকলে অন্য পক্ষ বাগড়া দিচ্ছে। গাঁয়েগঞ্জে মিটিং ডেকে তারকা প্রার্থী আসবেন বলায় জমায়েত হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু পরে তাঁরা না আসায় লোকজন ক্ষুব্ধ হচ্ছে। আর সেই সুযোগ পুরো মাত্রায় কাজে লাগাচ্ছে বামফ্রন্ট। তার উপর অবাম পুরসভায় যদি বেশি ভোট ভাগাভাগি হয়, তাহলে নির্বাচনে তার ব্যাপক প্রভাব পড়বে।”
তাই একদিকে কংগ্রেস ও অন্যদিকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে ভোট নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে মুখ্যমন্ত্রীকে জনসভার আয়োজন করছে তৃণমূল। এই দুই পুরসভাতেও তৃণমূলের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। মেদিনীপুর পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাথায় মাথায় ১৩টি পেয়ে পুরসভার দখল নিয়েছিল তৃণমূল। এ ক্ষেত্রে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের নির্দল প্রার্থীরাও ভাল ভোট পায়। পরবর্তীকালে আরও ৩ কংগ্রেস কাউন্সিলরকে অবশ্য দলে নিয়ে নিজেদের জোর বাড়িয়েছে এটা ঠিক, উল্টে আবার তারই ফলে দলের মধ্যে দ্বন্দ্বও বেড়েছে। সেই ওয়ার্ডে যিনি তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন, তিনি যে পরেরবার টিকিট পাবেন না তা নিশ্চিত। কারণ, বিগত নির্বাচনগুলিতে তৃণমূলের ফর্মুলা ছিল, জয়ী কাউন্সিলরকে প্রার্থী করা। ফলে পরাজিত প্রার্থী ও তাঁর অনুগামীরা ভেতরে ভেতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আবার দল বদল করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তাঁদের অনুগামীদের মধ্যেও ক্ষোভ তীব্র। তাঁদের কথায়, “একজন তৃণমূলের এই ভরা বাজারেও কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিল কেন? মানুষ কংগ্রেসকে চেয়েছিল বলে। তিনি তৃণমূলে চলে গেলে সকলেই কী তৃণমূলে চলে যাব? তাহলে তো তৃণমূল প্রার্থীকেই জেতাতে পারতাম। এত লড়াই করতে হত না। উল্টে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকায় কিছু সূযোগ সুবিধেও পেতাম।” এর বাইরে দলের জেলা নেতা বা শহর নেতৃত্বের মধ্যেই রয়েছে গোষ্ঠী লড়াই।
অন্যদিকে খড়্গপুরে প্রথমে পুরবোর্ড দখল করেছিল তৃণমূলই। পরবর্তীকালে নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, উল্টো দিকে কংগ্রেসের পরিকল্পনার কাছে হার মেনে পুরসভা হাতছাড়া হয়। বর্তমানে পুরসভা ফের কংগ্রেসের দখলে। এমনকি খড়্গপুর শহরের বিধায়ক এখনও কংগ্রেসের জ্ঞানসিংহসোহন পাল। দেশের বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ থাকায় সিপিআইয়ের যেমন কিছু ভোট রয়েছে তেমনি বিজেপি-রও সমর্থন রয়েছে। এভাবে ভোট ভাগাভাগি হলে যে সমস্যায় পড়তে হবে তৃণমূলকে। কারণ, এই লোকসভা কেন্দ্রে ৭টি বিধানসভার মধ্যে চারটি বামফ্রন্টের, ১টি কংগ্রেসের ও ২টি তৃণমূলের। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্য প্রায় সবই তৃণমূলের দখলে চলে যায়। লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য পঞ্চায়েতের অঙ্ক কাজ করে না। তাই স্বাভাবিক কারনেই পুর এলাকার ভোট এবার অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে তৃণমূলের কাছে। এবার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল, তৃণমূল ও অবাম ভোটকে এক জায়গায় অর্থাত্ তৃণমূলের দিকে নিয়ে আসতেই দুই পুরসভা এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে দু’টি সভা করানোর উদ্যোগ তৃণমূলের।