ভোটের বাকি আর এক মাস বাকি। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকায় জোরকদমে প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থীও নন্দীগ্রামে গিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। ব্যতিক্রম শুধু রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল। নন্দীগ্রামে এখনও সিপিএমের দেওয়াল লিখন, পোস্টার-ব্যানার চোখে পড়ছে না, হচ্ছে না মিছিল। রবিবার নন্দীগ্রামের দলীয় কর্মীদের নিয়ে জেলা সিপিএম সভাও করল নন্দীগ্রামের বাইরে।
চণ্ডীপুর বাজারে দিঘা-মেচেদা সড়কের ধারে যেখানে সভা হল, সেই এলাকা নন্দীগ্রাম বিধানসভা তো বটেই তমলুক লোকসভা কেন্দ্রেরও বাইরে। এক বেসরকারি অতিথিশালার সভাঘরে নন্দীগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কর্মীদের নিয়ে ওই সভায় সিপিএম প্রার্থী সেখ ইব্রাহিম আলি, দলের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহি, প্রণব দাস, সিপিআই জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন ঘড়া, পরমানন্দ ভারতী-সহ বাম নেতারা হাজির ছিলেন। আর ছিলেন জেলার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব। নন্দীগ্রামের বাইরে কর্মিসভা করা নিয়ে রবীনবাবু বলেন, “পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় অনেক পন্থা-পদ্ধতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রেও সে রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কারণ আমরা তো কর্মীদের বাঘের মুখে ফেলে দিতে পারি না। যারা নিজেরা নিজেদের লোককে খুন করছে, তাদের হাতে আমাদের কর্মীদের ছেড়ে দিতে পারি না।”
এ দিনের সভায় রবীনবাবু তৃণমূল সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি নাম না করে বহিষ্কৃত নেতা লক্ষ্মণ শেঠের থেকে সতর্ক থাকতে কর্মীদের পরামর্শ দেন। লক্ষ্মণবাবু তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে লক্ষ্মণবাবুর নাম না করে রবীনবাবু বলেন, “তৃণমূল সুবিধা পায় এমন কোনও কথা উচ্চারণ করবেন না। তৃণমূলের প্রশংসা যারা করছে, তাদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। যারা শুভেন্দু অধিকারীকে সার্টিফিকেট দেয়, তাদের সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে হবে।” সভায় রবীনবাবুর পাশেই অবশ্য ছিলেন লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রণব দাস। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে দলের তরফে নন্দীগ্রামের দ্বায়িত্বে রয়েছেন প্রণববাবু। সভায় রবীনবাবু অভিযোগ করেন, “নন্দীগ্রামের ঘরছাড়া কর্মীদের এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছেন না শুভেন্দু অধিকারী, আবু তাহের, সেখ সুফিয়ানরা।” সেই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “আপনারা ২০০৭ সাল থেকে দলের আদর্শকে রক্ষা করে আসছেন। বুক চিতিয়ে থাকুন। শুধুমাত্র আপনারাই পারবেন নন্দীগ্রামকে
রক্ষা করতে।”
কর্মিসভার পরে লক্ষ্মণবাবুর মুখে তৃণমূল সরকারের প্রশংসা প্রসঙ্গে রবীনবাবু বলেন, “যারা এসব বলছে, তারা দলের বাইরে গিয়ে বলছে। পাহাড়কে দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করতে আমাদের ১২২ জন কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। উনি (লক্ষ্মণ শেঠ) জানেন দার্জিলিংটা কাদের রক্তের বিনিময়ে আজ এই জায়গায়। তার পরেও উনি তৃণমূল সরকারের প্রশংসা করছেন, শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা করছেন। এটা ওঁর সুস্থ চিন্তার ফলশ্রুতি নয়। উনিও গভীর ভাবে ভাবলে নিজেই নিজের নিন্দা করবেন।”