তমলুকের নিমতৌড়ির সভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি:পার্থপ্রতিম দাস।
নির্বাচনী প্রচারে নন্দীগ্রামে এসে সিবিআইকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর দিন রবিবার নন্দীগ্রাম থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে তমলুকের নিমতৌড়িতে সভা করতে এসে নন্দীগ্রাম ও সিবিআই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তুললেন না বহিষ্কৃত নেতা লক্ষ্মণ-প্রসঙ্গও। তবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবিন দেব দাবি করেছেন, নন্দীগ্রামের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে তৃণমূল।
নন্দীগ্রামবাসীকে সিবিআই বিচার দিতে পারেনি অভিযোগ করে শনিবার মমতা বলেছিলেন, “নন্দীগ্রামের মানুষ আজও বিচার পাননি। সিবিআই তদন্ত করে যদি বিচার দিতে না পারে তবে বিষয়টি আমরাই দেখব।” ২৪ ঘণ্টার মাথায় নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের নিমতৌড়িতে এসে ওই প্রসঙ্গে তুলে বুদ্ধবাবু সিবিআই চার্জশিটকে পাল্টা হাতিয়ার করতে পারেন, এমনটাই ধারণা ছিল সিপিএমের একাংশের। কেননা, নন্দীগ্রাম নিয়ে তাঁকেই বারবার আক্রমণের লক্ষ্য করেছে তৃণমূল। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে তা হল না। সভা শেষে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে একই সভামঞ্চে থাকা লক্ষ্মণ-জায়া তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যা তমালিকা পণ্ডা শেঠ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বরং বললেন, “নন্দীগ্রাম ইজ ডেড ইস্যু।”
‘নন্দীগ্রাম, তৃণমূলী ষড়যন্ত্র ফাঁস!’ সম্প্রতি এই বিষয়ে পুস্তিকা প্রকাশ করেছিল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। সেখানে তথ্যের ভিত্তিতে ছত্রে ছত্রে নন্দীগ্রামবাসীর বঞ্চনার ইতিবৃত্ত তুলে ধরে ছিল আলিমুদ্দিন। ইতিমধ্যে গোপনে তা বিলিও করা হয়েছে নন্দীগ্রামের নানা অংশে। পূর্ব মেদিনীপুরের দুই লোকসভা আসন কাঁথি এবং তমলুকে বিষয়টিকে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ারও করেছে বামেরা।
নিমতৌড়ির সভায় বুদ্ধবাবু নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ না তুললেও জেলার পর্যবেক্ষক তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবিন দেব নন্দীগ্রাম নিয়ে শাসকদলকে তোপ দাগেন। রবিনবাবুর অভিযোগ, “নন্দীগ্রামের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে তৃণমূল। নন্দীগ্রামে রেলের শহিদ মিনার হয়েছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা হয়নি। নন্দীগ্রামবাসী জমি দিলেও রেল পাননি।”
এ দিনের সভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুর চড়ান রাজ্যের সার্বিক অনুন্নয়ন নিয়ে। তমলুক লোকসভার মধ্যেই পড়ে হলদিয়া। এলাকার বামপ্রার্থী ইব্রাহিম আলির সমর্থনে প্রচারে এসে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “হলদিয়া একটা গ্রাম ছিল। সেখানে চাষবাস হত, জেলেরা মাছ ধরতেন। আজ সেই হলদিয়া এক বিরাট শিল্পনগরী। দুনিয়া তাকে জানে।” এরপরই তিনি বর্তমান সরকারকে বিঁধে বলেন, “আমরা চলে আসার পরে তিন বছরে একটাও নতুন কারখানা হয়নি। নতুন কেউ আসেননি।” বুদ্ধবাবু বলেন, “শিল্পপতিরা ভয়ে ভয়ে থাকেন। তাঁদের কয়েকজন ফোন করে চলে যাবে বলেছিলেন। আমি তাঁদের বলি যাবেন না।” তাঁর কটাক্ষ, “বেকারদের কাজ হচ্ছে না। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বন্ধ হতে শুরু করেছে। সরকার বলছে ও সব আমাদের কাজ নয়। সরকারের কাজ কি? শুধু ধার করা আর জলসা করা!” এ দিনের সভায় প্রায় ২৫ হাজার কর্মী-সমর্থক হাজির হয়েছিলেন। সভা ঘিরে কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।