নিকাশি বেহাল, জমা জলে ভোগান্তি

বছর ঘুরলেই রেলশহরে পুরভোট। তার আগে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল জমায় বেহাল নিকাশির চিত্রটাই ফের বেআব্রু হল খড়্গপুরে। এরপরে বর্ষায় কী হবে, আশঙ্কায় রয়েছেন শহরবাসীরা। টানা তাপপ্রবাহের পর রবিবার থেকে বৃষ্টি নামে। সোমবার দফায় দফায় বৃষ্টি চলে। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল জমতে শুরু করে। বেলা বাড়লে ধীরে ধীরে জল নেমে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০১:৪০
Share:

সামান্য বৃষ্টিতেই জল থই থই খড়্গপুরের আলিনগর। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

বছর ঘুরলেই রেলশহরে পুরভোট।

Advertisement

তার আগে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল জমায় বেহাল নিকাশির চিত্রটাই ফের বেআব্রু হল খড়্গপুরে। এরপরে বর্ষায় কী হবে, আশঙ্কায় রয়েছেন শহরবাসীরা।

টানা তাপপ্রবাহের পর রবিবার থেকে বৃষ্টি নামে। সোমবার দফায় দফায় বৃষ্টি চলে। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল জমতে শুরু করে। বেলা বাড়লে ধীরে ধীরে জল নেমে যায়। তবে ভোটের আগে শহরের নিকাশি সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে তৎপর পুর-কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

২০০৯ সালের ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের ফলে রেল এলাকাও খড়্গপুর পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে রেল এলাকার বেশ কয়েকটি নিকাশি নালা সাফাইয়ের দায়িত্ব রেলই পালন করে। কিন্তু নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় ওই নালাগুলিতে আবর্জনা জমে থাকে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের নীচু এলাকায় জল জমে যায়। খড়্গপুর পুরসভা এলাকার ওপর দিয়ে রেলের প্রায় ১৬টি নিকাশি নালা গিয়েছে। সমস্যা সবচেয়ে বেশি শহরের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। খড়্গপুর রেলস্টেশন ও গোলবাজারের দিক থেকে আসা দু’টি বড় রেলের নিকাশি নালা এই এলাকাগুলির উপর দিয়েই গিয়েছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার মহম্মদ আকবর বলেন, “প্রতিবছরই দু’দিক দিয়ে আসা রেলের নিকাশি নালার জলে এলাকা ডুবে যায়। রেল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েও কাজ হয়নি। আমরা নিজেরাই কোনওভাবে মাটি কেটে জল বের করে দিয়েছি।”

সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত শহরে ভারী বৃষ্টি হয়। ফলে জলমগ্ন হয়ে পড়ে শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইমলিতলা, মেহবুবনগর, আলিনগর এলাকা। অভিযোগ, ৩ নম্বর থেকে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আসা নিকাশি নালা নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় জল জমছে। ইমলিতলার বাসিন্দা শেখ খালেক, আলিনগরের বাসিন্দা শেখ রিয়াজ বলেন, “নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। তার ওপরে নতুন করে অনেক ফ্ল্যাট তৈরি হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এই অবস্থা হওয়ায় বর্ষার কথা ভেবে আমরা উদ্বিগ্ন।” ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলার মমতাজ কুদ্দুসি বলেন, “পুরসভা থেকে আমাদের যে টাকা বরাদ্দ করা হয় তা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। পুরসভার উচিত, রেলের সঙ্গে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করা।”

অন্য দিকে, নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় রেলের নিকাশি নালার গার্ডওয়ালে আবর্জনা আটকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের খরিদা বিধানপল্লি এলাকায় মঙ্গলবার জল উপচে পড়ে। ওই এলাকার বাসিন্দা বিক্কি দাসসাহু বলেন, “প্রায় বছর খানেক হল ওই গার্ডওয়াল ভেঙে নর্দমা আটকে গিয়েছে। তা সরানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে এ দিন রাতের বৃষ্টিতে ঘরে জল ঢুকে গিয়েছিল।” অভিযোগ পেয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে যান ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার রিতা শেঠ, তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলার সত্যদেও শর্মা। পরে সেখানে পৌঁছন খড়্গপুর পুরসভার কংগ্রেস পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পান্ডে। পুরপ্রধান বলেন, “গার্ডওয়াল ভেঙে থাকায় বৃষ্টিতে সমস্যা বেড়েছে। এই নিকাশি নালা রেলের পরিষ্কার করার কথা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমরাই গার্ডওয়ালটি ক্রেন দিয়ে তুলে পরিষ্কার করে দেব।”

তবে পুর-নির্বাচনের আগে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বেহাল নিকাশির অভিযোগ তুলেছে পুরসভার বিরোধীদল তৃণমূল। এ দিন শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা কোনও কাজ করছে না। কোনও ওয়ার্ডে নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হচ্ছে না। ফলে নিকাশির সমস্যা বাড়ছে।” এবিষয়ে প্রাক্তন তৃণমূল পুরপ্রধান জহরলাল পাল বলেন, “আমি পুরপ্রধান থাকাকালীন রেলের নর্দমাগুলি নিয়ে রেলের সঙ্গে আলোচনা করে মাস্টার প্ল্যান করতে কমিটি গড়েছিলাম। কিন্তু পুরসভায় কংগ্রেসের বোর্ড আসার পরে আর কাজ এগোয়নি।” যদিও পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “শুনতে ভাল লাগে যে ওঁরা মাস্টার প্ল্যানের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা এসে তার কোনও কাগজ দেখতে পাইনি। আমরা নিয়মিত নিকাশি সমস্যার মোকাবিলা করছি। কিন্তু ভারী বর্ষায় পরিস্থিতি অনেকসময় হাতের বাইরে চলে যায়।” তাই আগামী ৩০ মে শহরের নিকাশি সমস্যা নিয়ে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement