অন্তরা-কাণ্ড থেকে শিক্ষা

দলবদলের তথ্যে গোপনীয়তা চায় বিজেপি

অন্য দলের নেতা-নেত্রীদের যোগদানের ক্ষেত্রে এ বার থেকে গোপনীয়তা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি। আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে নাম লেখানোর আগে পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নেতা বা নেত্রীর নাম যাতে কাকপক্ষীতেও টের না পায়, সে ব্যাপারে এখন থেকে বাড়তি সতর্ক থাকবেন বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০১:০১
Share:

অন্য দলের নেতা-নেত্রীদের যোগদানের ক্ষেত্রে এ বার থেকে গোপনীয়তা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি। আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে নাম লেখানোর আগে পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নেতা বা নেত্রীর নাম যাতে কাকপক্ষীতেও টের না পায়, সে ব্যাপারে এখন থেকে বাড়তি সতর্ক থাকবেন বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

একই সঙ্গে দলে নবাগতদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও উদ্যোগী হচ্ছে বিজেপি। কারণ, অন্য দল সম্পর্কে বিজেপি-র অবস্থান কী, মানুষকে কী ভাবে তা জানানো হবেএ সব সম্পর্কে অন্য দলের নেতা-নেত্রীদের তেমন কোনও ধারণা নেই। তাই বিজেপি-র অবস্থান ও রণকৌশল বোঝাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে দল। বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “অন্য দলের নেতারা আমাদের দলে যোগ না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের নাম গোপনীয় রাখা হবে। দলে যাঁরা ঢুকলেন তাঁদেরও দলীয় সংগঠন বাড়ানোর কাজে লাগানো হবে। আমাদের দল কোন পথে এগোতে চাইছে, কী ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছতে চায়, সে বিষয় সম্বন্ধে সম্যক ধারণা দিতে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে।”

সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের বিজেপিতে যোগদানের সময়কার অভিজ্ঞতা থেকেই মূলত দলবদলের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। অন্তরাদেবীর বিজেপিতে যোগদানের বিষয়টি আগেই চাউর হয়ে গিয়েছিল। তা জানতে পেরে সিপিএমও তাঁকে দলে রাখতে তৎপর হয়। আসরে নামে তৃণমূলও। তৃণমূলের একাধিক নেতা অন্তরাদেবীকে ফোন করে বিজেপিতে না গিয়ে তৃণমূলে আসার অনুরোধ জানান। অন্তরাদেবী অবশ্য নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টাননি। তবে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের টানাপড়েনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্যই গোপনীয়তা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত।

Advertisement

গত রবিবার বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকার মাতকাতাপুরের সভায় অভিযোগ করেছিলেন, “এখন বামফ্রন্ট ও তৃণমূল এক জোট হয়েছে। যাতে এ রাজ্যে বিজেপি না বাড়তে পারে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দু’জনেই।” রাজনৈতিক মহলও মনে করছে, বিজেপির বাড়বাড়ন্তে বিপাকে পড়ছে বামফ্রন্ট ও তৃণমূল। সিপিএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা-কর্মীরা যেমন বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তেমনই তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকও বিজেপির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এক বিজেপি নেতার কথায়, “তলে তলে অনেক নেতাই বিজেপিতে আসার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। একবার জানাজানি হয়ে গেলেই তাঁদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা হবে নানা ভাবে। তাই আমাদেরও গোপনীয়তা রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”

ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তালিকায় যেমন সিপিএমের প্রাক্তন সভাধিপতি রয়েছেন, তেমনই দীর্ঘদিন তৃণমূলের পিংলা ব্লক সভাপতির দায়িত্ব সামলানো গৌর ঘোড়ইও রয়েছেন। তবে গৌরবাবু পরে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই বিজেপিতে এসেছেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব সংগঠন যুব লীগের জেলা সভাপতি আশিস চট্টোপাধ্যায়, মেদিনীপুরের প্রাক্তন তৃণমূল উপ-পুরপ্রধান গণেশ ভকতও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। অন্য দল থেকে আসা এই সব নেতা-কর্মীদের এ বার প্রশিক্ষণ দিয়ে ময়দানে নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যখনই নতুনরা দলে আসবেন, তখনই প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সংগঠন বাড়ানোর লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি নেওয়া হবে। সেই সব কর্মসূচির দায়িত্ব দেওয়া হবে নবাগতদেরই। অন্য দল থেকে আসা নেতা-নেত্রীরা মাঠে-ময়দানে ঘুরে বিজেপি-র সমর্থনে কথা বললে, জনমানসে তার ভাল প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছে বিজেপি। এই কৌশলেই আপাতত দলের সংগঠন বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement