দলের একাংশের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও সিপিএম কর্মীদের দলে নিয়েছেন ব্লক সভাপতি। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়ে কর্মীসভা ত্যাগ করল তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও তাঁর অনুগামীরা। শুক্রবার দাঁতন ২ ব্লকের জাহালদা সংহতি ভবনের এই ঘটনায় প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব।
এ দিন তৃণমূল ব্লক কমিটির উদ্যোগে বিজয়া সম্মিলনী উপলক্ষে ওই কর্মীসভা হয়। সেখানে সিপিএম-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া কয়েক জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাতেই বিপত্তি। কেন তাঁদের দলে নেওয়া হল, এই প্রশ্ন তুলে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা জেলা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন উপস্থিত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই দাঁতন ২ ব্লকে তৃণমূলের কোন্দল শুরু হয়। ক্রমেই ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি ও ব্লকের সদ্য বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বাবুল খানের মধ্যে তিক্ততা চরমে পৌঁছয়। মাস তিনেক আগে বাবুলকে ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়। এর পর বাবুল খানের পাশে দাঁড়ান দলের ব্লক কমিটির চেয়ারম্যান তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সলিল দাস পট্টনায়ক। তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, ব্লক তৃণমূলের এই দুই শিবির জেলা নেতৃত্ব নয়, সরাসরি দলে প্রথম সারির দুই তৃণমূল সাংসদের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন।
সম্প্রতি ব্লক তৃণমূল সভাপতি শৈবাল গিরির নেতৃত্বে সিপিএম, কংগ্রেস ছেড়ে আসা কিছু কর্মী-সমর্থকের দলে যোগ দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানায় পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বাবুল খানেরা। আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার দাবি করেন ব্লক চেয়ারম্যান সলিল দাস পট্টানায়েকও। লোকসভা নির্বাচনের সময় ব্লকের অমরদায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ মুকুল রায়ের সভায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল সিপিএমের বসির খান, সিপিআই থেকে কংগ্রেসে হয়ে তৃণমূলে আসা শেখ সামশাদ-সহ বেশ কয়েক জনের। কিন্তু, সময়ের অভাবে মুকুলবাবু হেলিকপ্টারে রওনা দেন। এর পরে বহু আলোচনা সত্ত্বেও দলের একাংশকে সহমতে আনা যায়নি।
গত অগস্টে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বসির খানদের দলে যোগ দেওয়ান শৈবাল গিরি। এতেই চটে যান ব্লকের একাংশ নেতৃত্ব। এ দিন বিক্ষোভের পরে ব্লক তৃণমূল কমিটির চেয়ারম্যান সলিল দাস পট্টনায়েক বলেন, “সিপিএমের এই সব লোকেরা এক সময় দলের কর্মীদের খুন করেছে। তাঁদের দলে নেওয়া উচিত কি না, এ নিয়ে আলোচনার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তা না করেই শৈবাল গিরির নেতৃত্বে তাঁরা দলে যোগ দিয়েছে।” যদিও ব্লক তৃণমূল সভাপতি শৈবাল গিরি বলেন, “সলিলদার বয়স হয়েছে। তাই তাঁকে ভুল বুঝিয়ে এ সব বলানো হচ্ছে!”
এ দিন ব্লক কমিটির ডাকে বিজয়া সম্মিলনীর সভায় ছিলেন শৈবাল গিরি, তাঁর বিরোধী ব্লক তৃণমূলের চেয়ারম্যান সলিল দাস পট্টানায়েক, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ বাবুল খান প্রমুখ। সংহতি ভবনে সভা চলাকালীন উপস্থিত হন বসির খান, শেখ সামশাদেরা। তখনই বাধে বিরোধ। শৈবাল গিরির বিরুদ্ধে স্লোগান তোলেন বাবুল খান ও তাঁর অনুগামীরা। এক সময় সভা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে যান বিক্ষোভকারীরা।