দেহ সৌষ্ঠবে বিশ্বস্তরে যোগদানের সুযোগ পেল ইন্দ্রনীল, শ্রেয়সী

ছোট থেকেই লেগ প্রেস, ক্রস কেবল, স্কিপিং, স্কু্যয়ার্টস (দেহ সৌষ্ঠবের ধরন)-কে জীবনে সর্বক্ষণের সঙ্গী করেছিল ওঁরা। সেই কঠোর অনুশীলনের ফলেই এল সাফল্য। আসন্ন বিশ্ব দেহ সৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় যোগদানের ছাড়পত্র পেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের কৌশল্যার শ্রেয়সী দাসচৌধুরী ও সাঁজোয়ালের ইন্দ্রনীল মাইতি। আগামী ৫-৯ ডিসেম্বর মুম্বইতে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতায় ভাল করতে তাই দিনরাত এক করে অনুশীলনে ব্যস্ত তাঁরা দু’জনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৭
Share:

ইন্দ্রনীল মাইতি (বাঁ দিকে)। শ্রেয়সী দাসচৌধুরী (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

ছোট থেকেই লেগ প্রেস, ক্রস কেবল, স্কিপিং, স্কু্যয়ার্টস (দেহ সৌষ্ঠবের ধরন)-কে জীবনে সর্বক্ষণের সঙ্গী করেছিল ওঁরা। সেই কঠোর অনুশীলনের ফলেই এল সাফল্য। আসন্ন বিশ্ব দেহ সৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় যোগদানের ছাড়পত্র পেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের কৌশল্যার শ্রেয়সী দাসচৌধুরী ও সাঁজোয়ালের ইন্দ্রনীল মাইতি। আগামী ৫-৯ ডিসেম্বর মুম্বইতে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতায় ভাল করতে তাই দিনরাত এক করে অনুশীলনে ব্যস্ত তাঁরা দু’জনে। এছাড়াও রাজ্য থেকে এ বার কলকাতার শিবলেখা সাহা, সামসের আলি ও সনিয়া মিত্রও প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে মুম্বই যাচ্ছেন।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে এ বারই প্রথম কেউ দেহসৌষ্ঠবের বিশ্ব প্রতিযোগিতায় যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জেলা সংগঠনের কর্তারা। আগেও শিপ্রা জানা দেহ সৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় এশিয়া স্তরে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে চিনের বেজিংয়ে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিযোগিতায় তিনি যোগ দিতে পারেন নি। এ বছর দেহ সৌষ্ঠবের বিশ্বস্তরীয় প্রতিযোগিতা মুম্বইতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা ‘ইন্ডিয়ান বডি বিল্ডিং ফেডারেশন’ (আইবিবিএফ)। দেশের মাটিতেই খেলার সুযোগ পাওয়ায় স্বভাবতই খুশি ইন্দ্রনীল ও শ্রেয়সী।

বিশ্বস্তরে সুযোগ পাওয়ার পথটা ছিল যথেষ্টই কঠিন। গত অগস্টে খড়্গপুরে দেহ সৌষ্ঠবের জেলা স্তরের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই মাসেই হুগলির চন্দনগরে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতা হয়। গত সেপ্টেম্বরে মণিপুরে জাতীয় দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় জিতেই মুম্বইয়ের টিকিট পাকা করে ফেলেন রাজ্যের পাঁচ জন প্রতিযোগী। তাঁদের মধ্যে জেলা থেকে সুযোগ পেয়েছে ইন্দ্রনীল ও শ্রেয়সী। সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ভারতশ্রী প্রাপ্ত অজয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের পাঁচ জনের মধ্যে এ বার জেলা থেকে শ্রেয়সী ও ইন্দ্রনীলের বিশ্বস্তরে সুযোগ পাওয়া আমাদের কাছে গৌরবের। এর আগে জেলা থেকে ওঁদের মতো কেউ বিশ্বস্তরে যায়নি।”

Advertisement

খড়্গপুরের কৌশল্যার কালীমন্দিরের কাছে বাড়ি বছর সতেরোর শ্রেয়সীর। তাঁর বাবা রণজিত্‌ দাসচৌধুরী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। মা আলপনা দাসচৌধুরী গৃহবধূ। রণজিতবাবু নিজে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্পোর্টস’-এর কোচ। বাড়িতে তাঁর নিজস্ব শারীরচর্চার প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। চার বছর বয়স থেকেই সেখানে যোগাসন দিয়ে শরীরচর্চায় হাতেখড়ি শ্রেয়সীর। তারপর তিন বার জাতীয় স্তরে সাফল্য অর্জন করে সে। বাবার কাছেই চলতে থাকে জিমন্যাস্টিক ও শারীরচর্চার প্রশিক্ষণ। ২০১৩ সালে আগ্রায় অনুষ্ঠিত জাতীয় রিদিমিক জিমন্যাস্টিকে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিল শ্রেয়সী। ওই বছরই চেন্নাইতে জাতীয়স্তরের মহিলা ফিটনেস প্রতিযোগিতায় সোনা জয় করেছিল সে। রণজিত্‌বাবু বলেন, “এর থেকে বড় সৌভাগ্যের কিছু নেই। তবে ওঁদের পোশাকের খরচ প্রচুর। রাজ্যের কোনও স্পনসর না পাওয়ায় সমস্যা হয়।” শ্রেয়সীর কথায়, “সুযোগ পেয়ে ভাল লাগছে। বয়স বাড়লে আমাদের এই ফিটনেসে বসে যেতে হয়। কিন্তু আমি যতদিন পারব, চালিয়ে যাব। এখন দিনে ছ’ঘণ্টা অনুশীলনের জন্য সময় দিচ্ছি। আশা রাখছি, সোনা জিততে পারব।”

অন্য দিকে, শহরের সাঁজোয়ালের বাসিন্দা ইন্দ্রনীলের বাবা দীপক মাইতি একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তাঁর মা স্বপ্না মাইতি গৃহবধূ। ১৬ বছর বয়স থেকেই শহরের একটি বেসরকারি জিমে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে ইন্দ্রনীল। তারপর থেকে সেরসা স্টেডিয়ামে কঠোর অনুশীলন চালাতে থাকে বছর বাইশের এই যুবক। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে পরপর দু’বার জাতীয় স্তরে সোনার পদক জয় তাঁর জয়ের খিদেটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। ইন্দ্রনীল বলেন, “বিশ্বে নিজেকে তুলে ধরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। মহারাষ্ট্রে দেহ সৌষ্ঠবে অনেক স্পনসর পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে তা পাচ্ছি না। তাই কতদিন এভাবে চালিয়ে যেতে পারব সেটাই চিন্তা।”

খড়্গপুরে দেহসৌষ্ঠবে এক সময়ের পারদর্শী প্রবীণ প্রদীপকুমার বড়ুয়া বলেন, “শ্রেয়সী ও ইন্দ্রনীল বিশ্বের দরবার থেকে সোনা জয় করে খড়্গপুরের মুখ উজ্বল করবে, এটাই আশা করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement